Advertisement
০২ মে ২০২৪

পুনর্বাসন দাবি করছে লটিয়াবনি

একপাশ থেকে উড়ে আসছে এমটিপিএসের কয়লার গুঁড়ো ও জলীয় বাষ্প। অন্যদিকে ছাই। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গঙ্গাজলঘাটির লটিয়াবনি এলাকার বাসিন্দারা।

পরিদর্শন: লটিয়াবনিতে মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

পরিদর্শন: লটিয়াবনিতে মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

একপাশ থেকে উড়ে আসছে এমটিপিএসের কয়লার গুঁড়ো ও জলীয় বাষ্প। অন্যদিকে ছাই। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গঙ্গাজলঘাটির লটিয়াবনি এলাকার বাসিন্দারা। বড়ছে অসুখ বিসুখ। ফলছে না ফসল। সমস্যা মেটাতে শুক্রবার এলাকায় গিয়ে এমটিপিএস কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন মহকুমাশাসক।

প্রায় তিন দশক আগে এমটিপিএস গড়ে ওঠার সময়েই ওই এলাকার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন বেশির ভাগ গ্রামের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে এলাকা অধিগ্রহন করে ডিভিসি। তবে তখন লটিয়াবনি এলাকার মানুষ জন জমি ছাড়েননি। ক্রমশ সমস্যা বড়তে থাকায় এখন গ্রামবাসীই এমটিপিএস-এর কাছে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।

এক পাশে এমটিপিএসের ক্রাশার হাউস ও কুলিং টাওয়ার। অন্য পাশে এমটিপিএসের প্রায় সাতশো একরের ছাই পুকুর। এই দুয়ের মাঝে লটিয়াবনি গ্রাম। এলাকার বাসিন্দা বংশী মণ্ডল, সঞ্জয় মহন্তদের কথায়, “ক্রাশার হাউস থেকে কয়লার গুঁড়ো আর কুলিং টাওয়ার থেকে জলীয় বাষ্প অনবরত বেরোচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে গোটা গ্রামে। আবার ছাই পুকুরের শুকনো ছাই বাতাসে ভেসে গ্রামে ঢুকছে। আমাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে।” গ্রামের বধূ সুভদ্রা মণ্ডল, পিঙ্কি মাজিরা বলেন, “আমরা গ্রামের পুকুরের জল ব্যবহার করতে পারিনা দুষণের জন্য। বাড়ির ভিতরেও গুঁড়ো ছাই থেকে নিস্তার নেই।’’

গ্রামের চাষজমি, গাছপালা, পুকুর, ঘরের ছাদ, মেঝেতেও ছাই-এর গুঁড়ো জমে থাকে। সরেজমিন অবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠেছে প্রশাসনের আধিকারিকদেরও। বিডিও (গঙ্গাজলঘাটি) মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, “মাত্রা ছাড়া দুষণ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানলাম এই এলাকার বহু মানুষই ফুসফুসের অসুখ, চর্মরোগে ভুগছেন। গবাদি পশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে দুষণে।”

লটিয়াবনি গ্রামে প্রায় ৩৫০টি পরিবারের বাস। গ্রামবাসীর দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে এমটিপিএস কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা পুনর্বাসনের দাবি তুলে আসছেন। এমটিপিএস কর্তৃপক্ষের দাবি, বিষয়টি ডিভিসি-কে জানানো হয়েছে। কিন্তু সম্মতি না মেলায় এগনো যাচ্ছে না। এ দিন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা এমটিপিএস কর্তৃপক্ষকে গ্রামবাসীর জমি কিনে নেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ করতে বলেন। মহকুমাশাসক বলেন, “গ্রামবাসীর চাষজমি ও বাড়ি এমটিপিএস ন্যায্য মূল্যে কিনে নিলে তাঁরা অন্যত্র বসবাস করতে পারবেন।’’

গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জীতেন গড়াই বলেন, “মহকুমাশাসকের প্রস্তাব গ্রামবাসী সমর্থন করেছেন। যত দ্রুত এমটিপিএস এই পদক্ষেপ করবে ততই ভাল।” শীঘ্রই এনিয়ে এমটিপিএস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকেও বসতে চলেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সমস্যা মেটাতে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউড়ির সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এমটিপিএস-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল বিশ্বাস বলেন, “মহকুমাশাসকের প্রস্তাব আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শীঘ্রই জানাব। তবে ছাই ওড়ার সমস্যা সাময়িক মেটাতে আমরা ছাই পুকুরে জল ছড়াই।’’ তাঁর অভিযোগ, একাংশের গ্রামবাসী তাঁদের সেই কাজেও ইদানীং বাধা দিচ্ছেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জীতেনবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rehabilitation Latiaboni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE