লিপিকার সামনে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
ছাত্র আন্দোলন, ঘেরাও, বিক্ষোভ আগেও দেখেছে বিশ্বভারতী। কিন্তু, সকলেই মানছেন, ফি-বৃদ্ধি নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল তিনটে থেকে বুধবার বিকেল চারটে, গত ২৫ ঘণ্টায় যা হয়েছে বিশ্বভারতীর ইতিহাসে তা বে-নজির।
মঙ্গলবার বিকেলে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে ফি-বৃদ্ধি নিয়ে হওয়া বৈঠকে চার ঘণ্টাতেও মতের মিল হয়নি। ‘বিশ্বভারতী ছাত্র-ছাত্রী ঐক্য’-র পড়ুয়াদের দাবি ছিল, পুরনো ফি কাঠামো বজায় রাখতে হবে। কিন্তু এই দাবি মানেননি কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, আবেদন করার পরে যাঁরা ভর্তি হবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আবেদন-ফির অতিরিক্ত টাকা মোট ফি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। এই মধ্যস্থতায় আবার যেতে চাননি আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। ফলে যা হওয়ার ছিল সেটাই হয়। ঘেরাও করা হয় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ শতাধিক অধ্যাপক ও আধিকারিককে।
আটকে ছিলেন প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেনও। তাঁর কথায়, ‘‘যা হয়েছে তা দুঃখজনক। এমন না হওয়াই উচিত ছিল।’’ উপাচার্য বিদ্যুৎবাবু বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। সন্তানতুল্য পড়ুয়াদের থেকে এমন আচরণ আশা করিনি।’’ একই কথা জানালেন অন্য অধ্যাপকেরাও। তাঁদের মতে, ‘‘আমাদেরই তো ছেলেমেয়ে। হয়তো আমরাই ঠিকমতো শিক্ষা দিতে পারিনি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঘেরাওয়ের মাঝে বেশ কিছু অধ্যাপক, যাঁদের ইনসুলিন নিতে হয় কিংবা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুধবার সকালে বেরোতে গেলে তাঁরাও বাধা পান পড়ুয়াদের থেকে। আন্দোলনকারীদের আবার দাবি, সকাল পৌনে ছ’টা নাগাদ অধ্যাপকেরা জোর করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। তাঁদের আটকাতে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বেশ কিছু ছাত্রী আহত হন। এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। যদিও সেই অধ্যাপক জানিয়েছেন তাঁকে ছাত্র-ছাত্রীরা হেনস্থা করেছেন।
এর পরেই প্রবীণ অধ্যাপক আশা মুখোপাধ্যায় এবং কুমকুম ভট্টাচার্যকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলার দিকে অধ্যাপকসভার পক্ষ থেকে সম্পাদক গৌতম সাহা আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের একটি স্মারকলিপি দেন। তাতে অধ্যাপকদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য জানানো হয়। সেই বার্তা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে পড়ুয়ারা গেলে আটকে পড়া অধ্যাপকেরা জানান, তাঁরা যখন এক সঙ্গে এসেছেন, এক সঙ্গেই বেরোবেন। ততক্ষণে রক্তচাপ বেড়েছে আরও কিছু অধ্যাপকের। সারারাত পা ঝুলিয়ে বসে থাকায় পা ফুলেছে অনেকের। চিৎকার করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের গলা বসে গেছে, রোদে অনবরত ঘামছেন তাঁরা।
বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ৫ জন প্রতিনিধি ভিতরে গিয়ে পুনরায় একটি আলোচনা হয়। তাতেই মেলে সমাধান সূত্র। তবে এই সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ খুশি নয় পড়ুয়ারা।
বিশ্বভারতীর এক প্রাক্তনী মনে করালেন ’৮০-র দশকের এক ঘটনা। তিনি তাঁর সাক্ষী। তাঁর কথায়, ‘‘সেটা ’৮৩ বা ’৮৪ সাল হবে। তখন উপাচার্য অম্লান দত্ত। ছাত্রছাত্রীরা একবার সারা রাত তাঁকে, অধ্যাপকদের এবং কর্মসমিতির সদস্যদের ঘেরাও করে রেখেছিল। দর্শনের বিভাগীয় প্রধান প্রদীপ সেনগুপ্ত অনুরোধ করলেন, তাঁর সেতারটা এনে দেওয়ার জন্য। পড়ুয়ারাই তা এনে দেয়। পরে জেনেছি, প্রদীপবাবুর সেতার শুনে রাতটা মন্দ কাটেনি অম্লানবাবুদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy