Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পরিচয় বার করল চাইল্ড লাইন

ফের মেয়ে, ঝোপে ফেলেছিলেন দম্পতি

পরপর দু’টি মেয়ের পরে ফের মেয়ে হওয়ায় তাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু সেই বাবা-মাকে খুঁজে জেলা চাইল্ড লাইনের কর্মীরা তাঁদের হাসপাতালে শিশুটির কাছে ফিরিয়ে আনলেন। বুধবার ঝালদা ১ ব্লকের ব্রজপুর-কাঁসরা রাস্তার ধারে একটি ঝোপের মধ্যে ওই সদ্যোজাত মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন পথচারী। উদ্ধার করে তাকে ঝালদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

সদর হাসপাতালের বাইরে কালিন্দী দম্পতি।— নিজস্ব চিত্র।

সদর হাসপাতালের বাইরে কালিন্দী দম্পতি।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

পরপর দু’টি মেয়ের পরে ফের মেয়ে হওয়ায় তাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু সেই বাবা-মাকে খুঁজে জেলা চাইল্ড লাইনের কর্মীরা তাঁদের হাসপাতালে শিশুটির কাছে ফিরিয়ে আনলেন।
বুধবার ঝালদা ১ ব্লকের ব্রজপুর-কাঁসরা রাস্তার ধারে একটি ঝোপের মধ্যে ওই সদ্যোজাত মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন পথচারী। উদ্ধার করে তাকে ঝালদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা ঝালদায় গিয়ে শিশুটিকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে বড় মাথার ওই শিশুটিকে দেখেই চিনতে পারেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। চাইল্ড লাইনের কর্মী দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকেই জানা যায়, গত ২৪ জুন এখানেই ঝালদা ১ ব্লকের কাশিডি গ্রামের এক মহিলা এই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। গত মঙ্গলবার মঙ্গলবাবুর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। পরের দিনই ঝোপে ওই শিশুকে পাওয়া যায়।’’
হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক শিবশঙ্কর মাহাতো বলেন, ‘‘শিশুটির মাথাটি স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় অনেকটাই বড়। চিকিৎসার পরিভাষায় এই রোগের নাম ‘হাইড্রোকেফালাস’। মস্তিষ্কে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড তৈরি হয়। তা স্বাভাবিক নিয়মে মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়েও যায়। এক্ষেত্রে এই ফ্লুইড বেরিয়ে যাওযার পথে কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এই ফ্লুইড মাথায় জমে থাকার কারণেই মাথাটি স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়ে গিয়েছে।’’

হাসপাতালের নথি থেকে এই দম্পতির ঠিকানা সংগ্রহ করে দম্পতিকে বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠানো হয়। এ দিন দু’জনেই হাসপাতালে আসেন। শিশুটির বাবা ভন্দু কালিন্দী পেশায় দিনমজুর। কেন শিশুটিকে ফেলে রেখে গেলেন? তাঁর জবাব, ‘‘আগে দু’টি মেয়ের পরে আবার মেয়ে হওয়ায় ভেঙে পড়ি। ওর মাথাটা বড় বলে স্ত্রীও খুব ভয় পেয়েছিল। বাড়িতে নিয়ে আসার পরে শিশুটার চোখদু’টো স্থির হয়ে যাওয়ায় ভেবেছিলাম মারা গিয়েছে। তাই ফেলে রেখে আসি।’’ পরে তিনি চাইল্ড লাইনের কর্মীদের সঙ্গে হাসপাতালে ঢুকে শিশুটিকে দেখে আসেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী প্রণামী কালিন্দী আর যাননি। তিনি বসেছিলেন হাসপাতালের পিছনে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওকে দেখতে পারছি না।’’ ভন্দুর দিদি ধুন্দি কালিন্দী বলেন, ‘‘মেয়েটাকে ফেলে দিয়ে ওরা ভুল করেছিল। তবে আমাদের তো চিকিৎসা করানোর সঙ্গতি নেই।’’

হাসপাতালে আসেন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র ও চাইল্ড লাইনের কর্তারাও। অমিতাদেবী বলেন, ‘‘আপাতত শিশুটিকে নবজাত শিশুর পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তবে এখানে তার চিকিৎসা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।’’ হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখানে চিকিৎসার যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতে ওই শিশুর চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাই শিশুটিকে অন্যত্র পাঠানোর কথা ভাবছি।’’ অমিতাদেবী ও দীপঙ্করবাবু জানান, তাঁরাও ওই শিশুপ চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE