Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ভোগান্তির রেল-ফুঁকো

একে সরু আন্ডারপাসে রক্ষে নেই। তার উপর তালিতের রেলগেট। জোড়া দুর্ভোগের ফল বর্ধমান থেকে বোলপুর যাওয়ার নিত্য যন্ত্রণা, যানজট, ভোগান্তি। রবিবার দুপুরেই তুমুল বৃষ্টিতে বর্ধমান-সিউড়ি (২বি) জাতীয় সড়কের উপর আউশগ্রামের ভেদিয়ার কাছে আন্ডারপাসে প্রায় চার ফুট জল জমে যায়।

নদী ভরা ঢেউ! ভেদিয়ায় রেলের একফুঁকোর এমনই হাল। —নিজস্ব চিত্র

নদী ভরা ঢেউ! ভেদিয়ায় রেলের একফুঁকোর এমনই হাল। —নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
ভেদিয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

একে সরু আন্ডারপাসে রক্ষে নেই। তার উপর তালিতের রেলগেট। জোড়া দুর্ভোগের ফল বর্ধমান থেকে বোলপুর যাওয়ার নিত্য যন্ত্রণা, যানজট, ভোগান্তি।

রবিবার দুপুরেই তুমুল বৃষ্টিতে বর্ধমান-সিউড়ি (২বি) জাতীয় সড়কের উপর আউশগ্রামের ভেদিয়ার কাছে আন্ডারপাসে প্রায় চার ফুট জল জমে যায়। তার মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে পাথর বোঝাই একটি লরি। একই সঙ্গে বোলপুরের কাছে ঘেরাইপুরে দুটি গাড়ির ধাক্কা লাগে। ফল যা হওয়ার তাই। প্রায় চার ঘন্টা ওই রাস্তায় আটকে পড়ে কয়েকশো গাড়ি। বোলপুরের দিকে অবন সেতু পর্যন্ত ও বর্ধমানের দিকে বরাগড় পর্যন্ত জমে যায় গাড়ির লাইন। কোনও ভাবে এই জট কাটিয়ে এগোতে না এগোতেই তালিতের রেলগেট। সেখানে আবার দীর্ঘক্ষণ থমকে যাওয়া। প্রায় ৪০ মিনিটের ধাক্কা কাটিয়ে তবেই বর্ধমানের নবাবহাট থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কলকাতার দিকে রওনা দেয় গাড়িগুলি।

সোমবার সাত সকালে ভেদিয়ার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আন্ডারপাসটি মেরে কেটে ৯ থেকে ১০ ফুট হবে। উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ফলে বড় বাস বা লরি গেলে মানুষ গলারও জায়গা থাকে না। আন্ডারপাসের ভিতর দেওয়ালে গাড়িতে ঘষার দাগও স্পষ্ট। দেখা যায়, কলকাতামুখী এসবিএসটিসি বাসগুলি দেওয়াল বাঁচিয়ে কোনও রকমে যাচ্ছে। সকাল সাতটাতেই আন্ডারপাসের দু’দিকে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ, প্রশাসনের কারও দেখা মেলে না। আন্ডারপাসের দু’দিকেই রাস্তা ভেঙে চৌচির। কোনও মতে যাতায়াত চালাতে বর্ধমানের দিকে রাস্তার উপর পড়ে থাকে পাথর ও বোল্ডার সরাতে দেখা যায় স্থানীয় যুবকদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মূলত তিনটে কারণে এখানে প্রতিদিন যানজট হয়। প্রথমত, গভীর রাতে ওভারলোডিং পাথরের গাড়ি গেলে রাস্তার উপর থাকা রেলের তিনকাঠিতে আটকে যায়। ফলে রাস্তার উপর পাথর পড়ে জমতে থাকে। এ দিকে, মূল রাস্তা থেকে আন্ডারপাসটি নিচু। ফলে আন্ডারপাস থেকে রাস্তায় উঠতে গিয়ে পাথরে আটকে যায় ছোট ও মাঝারি গাড়ি। তখনই বিপত্তি ঘটে। দ্বিতীয়ত, ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেই আন্ডারপাসে জল জমে যায়। গাড়িগুলি বুঝতে না পেরে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। তৃতীয়ত, পাথর বোঝাই লরির চালকরা আন্ডারপাশের দু’পাশে কতটা জায়গা আছে বুঝতে না পেরে দেওয়ালে ধাক্কা মেরে দেয়। আর সেখানেই গাড়ি আটকে যায়। গাড়ির চালকদের কথায়, ওই আন্ডারপাস তাঁদের কাছে সাক্ষাৎ বিপদ! ওই এলাকার যুবক সোমাই কিস্কু, সম্রাট মাঝি, অনন্ত মাঝিরা বলেন, “ভেদিয়া বাজারের কাছে তিন ফুঁকো না থাকলে কত রোগীর যে যানজটে প্রাণ হারাত!” তিন ফুঁকোর দু’টিতে জল জমে। সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, “গাড়ির চাপে আমাদের এখানে নাভিশ্বাস উঠছে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্রাণ হাতে করে যেতে হচ্ছে।”

তবে ভেদিয়া থেকে থেকে ছাড় পেলেও তালিতে রেলগেট থেকে ছাড় মেলে না। নিত্যযাত্রীদের দাবিস তালিতের রেলগেট পড়ার পরে দু’দিকে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে একের পর এক গাড়ি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এ দৃশ্য হামেশাই দেখা যায়। কারণ? হাওড়া ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান-আসানসোল লাইনটি খন্না স্টেশন থেকে সাহেবগঞ্জ লুপলাইন হয়ে বেরিয়ে যায়। ওই দু’টি লাইনের উপর দিয়ে ৬২ জোড়া এক্সপ্রেস ট্রেন ও শতাধিক লোকাল, প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাতায়াত করে। তার সঙ্গে দিনভর মালগাড়ি চলাচল করে। ফলে, দিনের বেশির ভাগ সময়েই রেলগেট পড়ে থাকে। ওই রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াত করা বোলপুর ট্যাক্সি ইউনিয়নের সদস্য শঙ্কর রায় বলেন, “আমি রবিবার দুপুরে যানজটে পড়েছিলাম। কিন্তু রাস্তা চেনা থাকায় ভেদিয়া বাজারের কাছে তিন ফুঁকো দিয়ে বেরিয়ে পিচকুরিতে গিয়ে উঠি। তবে তাতেও রেহাই নেই। কিছুটা যাওয়ার পরেই তালিত রেলগেটের কারণে প্রায় ঘণ্টাখানেক আটকে পড়ি।” পাশেই দাঁড়ানো অ্যাম্বুল্যান্স চালক নিতাই মাঝি বলেন, “ভেদিয়ার একফুঁকো থেকে যদিও বা মাঝে মাঝে ছাড় পাওয়া যায়, তালিত রেলগেটে কোনও ছাড় নেই!”

তবে আশার কথা, রেল ওই দুটি জায়গাতেই উড়ালপুল তৈরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসন সূতেরে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারও উড়ালপুল তৈরি করতে সব রকম সাহায্য করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আশার কথা বাস্তবে না নামা পর্যন্ত দুর্ভোগ যে বইতে হবে, তা বলা বাহুল্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE