Advertisement
০৭ মে ২০২৪
তিন ঘণ্টায় মিলল হদিস

হোয়াটস্‌অ্যাপ বাড়ি ফেরাল সাগেনকে

পাঁচ দিন হন্যে হয়ে খুঁজেও নিখোঁজ বালকের ঠিকানা বের করতে পারেনি পুলিশ ও চাইল্ড লাইন। আর সেই সোশ্যাল মিডিয়া ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ সেই ছেলের বাড়ি খুঁজে দিল মোটে তিন ঘণ্টায়! ছ’দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে বছর বারোর সেই সাগেন মুর্মু বাড়ি ফিরল রাখি পূর্ণিমার দিন, বৃহস্পতিবার।

বাবা-মা ও বিপ্লবের সঙ্গে সেই ছেলে।—নিজস্ব চিত্র

বাবা-মা ও বিপ্লবের সঙ্গে সেই ছেলে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোরো ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

পাঁচ দিন হন্যে হয়ে খুঁজেও নিখোঁজ বালকের ঠিকানা বের করতে পারেনি পুলিশ ও চাইল্ড লাইন। আর সেই সোশ্যাল মিডিয়া ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ সেই ছেলের বাড়ি খুঁজে দিল মোটে তিন ঘণ্টায়! ছ’দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে বছর বারোর সেই সাগেন মুর্মু বাড়ি ফিরল রাখি পূর্ণিমার দিন, বৃহস্পতিবার।

পুরুলিয়ার বোরো থানার কাছেই সাগেনদের বাড়ি। ছোট থেকেই সে মূক ও বধির। তাই স্থানীয় হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া সাগেনের সঙ্গী সাইকেল। সারাদিন সাইকেলে সে টো-টো করে ঘোরে। গত শনিবার বেলায় সাইকেলে তেল, সাবান ঝুলিয়ে স্নান করতে বেরিয়েছিল। কিন্তু সেই ছেলে সেই যে গেল, আর দেখা নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা... কিন্তু সাগেনের বাড়ি ফেরার নাম নেই। বাড়ির লোকজন ততক্ষণে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও তার হদিস পাননি। পরের দিন থেকে আত্মীয়দের বাড়ি থেকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া শুরু করেন সাগেনের বাবা পেশায় কৃষিজীবী সুনীল মুর্মু। মা জ্যোৎস্না মুর্মুর কথায়, ‘‘ছেলেটা কথা বলতে পারে না বলেই আরও চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। হারিয়ে গেলেও লোকজনকে সে নিজের নাম, ঠিকানা বলবে কী করে, এই ভেবে রাতে ঘুম আসছিল না।’’

কয়েকদিন ধরে বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও যখন ছেলের কোনও খবর পাওয়া যায়নি, তখন সুনীলবাবু থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে যাওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু থানায় যাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়! এই ভেবে তিনি এলাকায় সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বুধবার সন্ধ্যায় যান। সব শুনে বিপ্লব সাগেনের একটি অনেক আগেকার ছবি নিজের মোবাইলে তুলে পরিচিতদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন। সঙ্গে ছেলেটির নাম, পরিচয় ও কবে থেকে নিখোঁজ তাও লিখে দিয়েছিলেন। ফল মেলে অল্প সময়েই। বিপ্লবের কথায়, ‘‘পুরুলিয়ায় আমার এক বন্ধু ছবিটা দেখে জানান, তাঁর স্ত্রী কয়েকদিন আগে অফিস থেকে ফেরার পথে শুনেছিলেন, পুরুলিয়া শহরের রাঘবপুর মোড়ের কাছে একটা ওই রকম বয়সের ছেলেকে হারিয়ে গিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা গিয়েছিল। তার সঙ্গেও সাইকেল ছিল। সেই ছেলেকে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। তখনই মনের মধ্যে একটা সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছিল।’’

বিপ্লব তাঁর পরিচিত পুরুলিয়া সদর থানায় পুলিশ কর্মী সুখেন্দু মণ্ডলকে ফোন করে উদ্ধার করা ছেলেটির নাম জানতে চান। জানতে পারেন, যাঁর খোঁজে বাড়ির লোক দিশেহারা, সেই ছেলে বোরো থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া থানায় পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে রয়েছে। হাতে যেন চাঁদ আসে। বিপ্লব জানান, তিনি ওই পুলিশকর্মীকে সাগেনের ছবি পাঠান, নিজের ছবিও পাঠান। বিপ্লবের ছবি দেখে সাগেন হেসে বুঝিয়ে দেয়, সে তার পরিচিত। বিপ্লবের কথায়, ‘‘রাত সাড়ে ১০টায় আমি সাগেনের বাড়িতে গিয়ে খবর দিই, তাঁদের ছেলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তাকে আনতে পরের দিন বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া থানায় যেতে হবে।’’

সাগেনের বাড়ির খবর যে এ ভাবে আসবে তা বোধহয় পুলিশ কিংবা চাইল্ড লাইনের কর্মীরাও আঁচ করতে পারেননি। কারণ রাঘবপুর মোড়ে শনিবার সন্ধ্যায় ওই ছেলেকে উদ্ধারের পরে তার ঠিকানা খুঁজতে বিস্তর খাটতে হয়েছে তাঁদেরও। কিন্তু তাঁরা হদিস পাননি। সাইকেল-সহ ওই ছেলেকে উদ্ধার করে আনার পরে পুলিশ কর্মীরা ভেবেছিলেন, পুরুলিয়া শহর কিংবা আশপাশের কোনও গ্রামে ওর বাড়ি হবে। সেই মতো খোঁজ শুরু হয়। রবিবার সকালে খবর পেয়ে চাইল্ড লাইনের জেলা আহ্বায়ক দীপঙ্কর সরকার ও কাউন্সেলর মনোজিৎ সেন থানায় গিয়ে নানা ভাবে মূক সাগেনের কাছ থেকে তার বাড়ির ঠিকানা জোগাড়ের চেষ্টা চালান। দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘সাগেন কোনও রকমে খাতায় নিজের নামটুকু লিখতে পেরেছিল। কিন্তু নিজের ঠিকানা লিখতে পারেনি। ফলে তাকে বাড়ির লোকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটা কঠিন হয়ে পড়েছিল।’’

তাঁরা অবশ্য হাল ছাড়েননি। কাগজে নিজের বাড়ির মানচিত্র আঁকার চেষ্টা করে সাগেন। কিন্তু তা থেকে কিছুই ঠাহর করা যায়নি। একদিন তাকে নিজেদের সঙ্গে করে বাড়ির পথ খুঁজতে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা জয়পুরের পুন্দাগ পর্যন্ত যান। ফিরে এসে ক’দিন পরে বলরামপুরের দিকেও যাওয়া হয়। পুরুলিয়া শহর লাগোয়া আদিবাসী গ্রামেও তাকে ঘুরিয়ে আনা হয়। কিন্তু সাগেনের মুখে হাসি ফোটেনি। ইতিমধ্যে সাগেনের ছবি ও বর্ণনা চাইল্ড লাইনের কর্মীরা নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের বন্ধুদের কাছেও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না। সেই সময়েই বোরোর বছর চব্বিশের যুবক বিপ্লবের ফোন আসে পুরুলিয়া থানায়।

বৃহস্পতিবার তিনিই সাগেনের বাবা-মা ও দিদিকে সঙ্গে নিয়ে পুরুলিয়া সদর থানায় আসেন। প্রায় এক সপ্তাহ পরে বাড়ির সবাইকে পেয়ে সাগেনের চোখে জল নেমে আসে। ভাইয়ের হাত কাছে টেনে নিয়ে রাখি বেঁধে দেন দিদি টুসুমণি।

কিন্তু ওই একরত্তি ছেলে কী ভাবে অতটা পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে পুরুলিয়ায় এসেছিল? প্রশ্ন সবার।

যদিও সুনীলবাবু বলছেন, ‘‘ছেলেটা কথা বলতে পারে না, কানেও শুনতে পায় না। ওই সাইকেলই ওর সর্বক্ষণের বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই ও সাইকেলটাকে আঁকড়ে রয়েছে। ওর পক্ষে এই পথ সাইকেলে আসা অসম্ভব নয়। তবে এ বার থেকে আমাদের ওকে নজরে রাখতে হবে।’’

দেহ উদ্ধার। এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের পচাগলা দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। শুক্রবার সকালে ছাতনার নামো শুশুনিয়া শ্মশানঘাটের কাছে গন্ধেশ্বরী নদীর খালে ওই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের বয়স আনুমানিক ৩৫। পুলিশের অনুমান, বেশ কিছু দিন আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর দেহে পচনও ধরেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Whatsapp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE