Advertisement
E-Paper

কাকা পুরপ্রধান, মুখ খোলেন কী করে বিজেপি-র ভাইঝি

পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে জল প্রকল্পে কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন খোদ দলেরই বিধায়ক। জল সমস্যায় জেরবার পুরশহরের বাসিন্দারা। রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি— সব কিছু নিয়ে ক্ষুদ্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। কিন্তু সেই সিউড়ি পুরভোটে নেমে বিরোধী দলের এক প্রার্থী বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুধু নিজের ভোটটাই চাইছেন। পুরসভার ক্ষমতাসীন শাসকদলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৩

পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে জল প্রকল্পে কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন খোদ দলেরই বিধায়ক। জল সমস্যায় জেরবার পুরশহরের বাসিন্দারা। রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি— সব কিছু নিয়ে ক্ষুদ্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। কিন্তু সেই সিউড়ি পুরভোটে নেমে বিরোধী দলের এক প্রার্থী বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুধু নিজের ভোটটাই চাইছেন। পুরসভার ক্ষমতাসীন শাসকদলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না।

হলটা কী!

বিজেপির অন্য প্রার্থীদের তুলনায় দলের সিউড়ি পুরসভার ৬ নম্বরের প্রার্থীর নাম যে মণিদীপা মুখোপাধ্যায়। তিনি আবার এই পুরসভার তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের সর্ম্পকে ভাইঝি। তাই ভোট প্রচারে নেমে বিদায়ী পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে বিজেপির অন্যপ্রার্থীরা যতই গলা চড়াক না কেন, মণিদীপা এ ক্ষেত্রে ততই চুপ। কারণ আর যাই হোক, বিজেপি নেতার ঘরণি হলেও তিনি রাজনীতির আগে রাখেন পারিবারিক সর্ম্পককে। তাই তিনি বাড়ি-বাড়ি ভোট প্রচারে বেড়িয়ে শুধুই বলছেন, ‘‘আমি পাড়ারই মেয়ে, পাড়ারই বৌ। আপানাদের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। যদি মনে হয় আমি কাজ করতে পারব, আমাকে তা হলে ভোট দিয়ে জেতান।’’

উজ্জ্বলবাবুর বাড়ি ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হলেও তিনি এ বার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন। মণিদীপারও বিয়ে হয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই। তাঁর বাবা মিলন মুখোপাধ্যায়ের জ্যাঠতুতো ভাই উজ্জ্বলবাবু। বাবার তুতো ভাই হলেও পরিবারিক সর্ম্পক তাঁদের যথেষ্ট ভাল। তাই বিরোধী দলের প্রার্থী হলেও বাপেরবাড়ির পরিবার বিশেষ করে কাকু উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে যথেষ্ট স্বর্শকাতর মণিদীপা। তাই কাকু তো নয়ই ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দীপ্তি ঘোষের বিরুদ্ধেও প্রচারে মুখ খুলছেন না তিনি। মুখ খুললে যে আদতে কাকুর বদনাম করা হবে!

মণিদীপা আলোচনার সময় বলছেন, ‘‘ওয়ার্ডে এত সমস্যা। পানীয় জলের শোচনীয় সঙ্কট। দুটো গভীর নলকূপও পুরসভা করে দেয়নি। রাস্তাঘাটও অত্যন্ত খারাপ। চারিদিকে নোরাং আবর্জনা ভর্তি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। মানুষ এমনিতেই খুব বিরক্ত পুরপরিষেবা নিয়ে। ওয়ার্ডের মানুষের সেই ক্ষোভকে হাতিয়ার করেই এগোতে চাই। ব্যক্তিগত আক্রমণে যাব কেন?’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘আর কাকুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তো খারাপ নয়। যে দিন মনোনয় দাখিল করতে যাই সেদিনও কাকু-সহ বাপের বাড়ির সকল বড়দের প্রণাম করেই গিয়েছিলাম।’’

তাহলে বিরোধী দলের প্রার্থী হলেন কেন?

মণিদীপা জানান, তিনি মূলত ঘরকন্না সামলান। তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ দাস একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিজেপি করে আসছেন। মণিদীপা বলেন, ‘‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনও ইচ্ছে ছিল না। ভোটে দাঁড়ানোর কথা ছিল আমার স্বামীরই। কিন্তু আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় আমাকে দাঁড়তে হল। আর সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে অন্য কিছু ভাববার সময়ই পাইনি। তবে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সঠিক উন্নয়ন আনতে পারে যে রাজনৈতিক দল, তা বিজেপিই।’’

তা হলে পুরপরিষেবা নিয়ে সমস্যার কথা প্রকাশ্যে বলছেন না কেন? আপনার কাকার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে বলে? সঙ্গে সঙ্গে মণিদীপা বলে ওঠেন, ‘‘কাকুকে দয়া করে এর মধ্যে টানবেন না। বিরোধী দলের হয়ে লড়ছি বলে সর্ম্পক খারাপ করতে হবে এমনটা মনে করি না। লড়াইটা হবে নীতির এবং পুরপরিষেবা নিয়ে।’’ প্রার্থী শাসক দলের বিরুদ্ধে মুখে কুলুপ আঁটলেও দলের কর্মীরা অবশ্য থেমে নেই। তাঁরা দাবি করছেন, মানুষ বিরক্ত হয়েই লোকসভা ভোটে এই ওয়ার্ড থেকে বিজেপিকে এগিয়ে রেখেছিল। এ বারও পুরভোটে বিজেপি-ই জিতবে। সিউড়ি পুরভোটে বিজেপির দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা তথা দলের সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘কে কার কাকু কে কার ভাইঝি, এটা ভেবে প্রার্থী বাছাই হয়নি। প্রার্থী বাছাই হয়েছে স্থানীয় কর্মীদের মতামত ও নেতৃত্বের চিন্তাভাবনার ভিত্তিতেই।’’.

উজ্জ্বলবাবুও ভাইঝির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল করি বলে বাড়ির সকলকে তৃণমূল করতে হবে কে বলেছে! আর মেয়ের বিয়ে হলে শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিতে হয়। ভাইঝি সেটাই করেছে। এটাই গণতন্ত্র। এই নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। তবে আমি অবশ্যই চাইব আমার দলের যিনি প্রার্থী ওই ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনিই জয়ী হন।’’

মণিদীপার প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী দীপ্তি ঘোষ ওই ওয়ার্ড থেকে দু’বার এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একবার কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়ছেন। তৃণমূলের টিকিটে এ বার প্রথমবার লড়াইয়ে নামলেও এলাকা হাতের তালুর মতো চেনেন। বিজেপি প্রার্থী হিসাবে সেই পোড়খাওয়া তৃণমূল প্রার্থীকে কতটা বেগ দিতে পারবেন মণিদীপা? জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী মণিদীপা। অন্যদিকে দীপ্তিদেবী দাবি করছেন, ‘‘আমিই জিতব।’’

পুরপ্রধানের ভাইঝি, না তাঁর দলের প্রার্থী কার পাল্লা ভারী, তা সময়ই বলবে।

BJP TMC Trinamool municipal election siuri Manidipa Mukhopadhyay Dayal Sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy