Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শালতোড়া

আজ বুথে যাওয়া চলবে না, পরের পর বাড়িতে শাসানি

হুমকি দেওয়াটা গত কয়েক দিন ধরেই চলছিল। সোমবার রাতে হল হামলা। জোর করে বাড়িতে ঢুকে লেঠেল বাহিনী শাসানি দিল, ইট-পাটকেল ছুড়ল। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেলেন বিজেপি কর্মীরা। মঙ্গলবার সকালেও চলল শাসানি। বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার বাগজাদা গ্রামের এই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে মিলে তৃণমূলের লোকজন তাঁদের আজ, বুধবার ভোট না দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। বেছে বেছে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে পুলিশের সামনেই চলেছে ওই শাসানি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শালতোড়া (বাঁকুড়া) শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

হুমকি দেওয়াটা গত কয়েক দিন ধরেই চলছিল। সোমবার রাতে হল হামলা। জোর করে বাড়িতে ঢুকে লেঠেল বাহিনী শাসানি দিল, ইট-পাটকেল ছুড়ল। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেলেন বিজেপি কর্মীরা। মঙ্গলবার সকালেও চলল শাসানি।

বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার বাগজাদা গ্রামের এই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে মিলে তৃণমূলের লোকজন তাঁদের আজ, বুধবার ভোট না দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। বেছে বেছে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে পুলিশের সামনেই চলেছে ওই শাসানি। গ্রাম সূত্রের খবর, নন্দলাল মণ্ডল, স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো জনা ষাটেক তৃণমূল কর্মী গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের পরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই গোলমাল শুরু। তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এলাকার প্রভাব বাড়াতে শুরু করে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগেও শালতোড়ায় প্রচারে বিজেপি টক্কর দিয়েছে শাসক দলকে। সেই আক্রোশেই বিজেপি কর্মীদের শাসানি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

মঙ্গলবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বিক্ষিপ্ত জটলা। তৃণমূলের পতাকার তলায় বসে সুবজ গেঞ্জি পরা কিছু যুবক। কয়েক জন জটলা করেছেন বিজেপি-র ব্যানারের কাছে। গ্রামের কিছু বিজেপি কর্মীর বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ল, উঠোনে ছড়িয়ে রয়েছে পাথর। বাড়ির মহিলারা আতঙ্কে। সাংবাদিক পরিচয় দিতে আরও ভয় পেয়ে তাঁরা ভিতরে ঢুকে গেলেন।

জটলায় থাকা বিজেপি সমর্থকদের একাংশ বললেন, “সোমবার রাতে গ্রামের আটচালায় সভা করে এলাকার তৃণমূল নেতা বংশী চক্রবর্তী হুঁশিয়ারি দেন, লোকায় কেউ বিজেপি করলে তার পরিণাম ভাল হবে না।” নন্দলালবাবু, স্বরূপবাবুদের অভিযোগ, “ওই সভার পরেই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তৃণমূলের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে প্রাণে মারার শাসানি দেয়। আমরা কোনও মতে পালাই। আর বাড়ি ফেরার সাহস পাইনি।” নন্দলালের স্ত্রী দুর্গা মণ্ডল বলেন, “ওই রাতেই শালতোড়া থানা থেকে দু’গাড়ি পুলিশ আসে। ছিলেন তৃণমূলের নেতারাও। পুলিশ-তৃণমূল মিলে আমাদের হুমকি দেয়, স্বামী যদি ফিরে আসে তা হলে হাত-পা কেটে দেওয়া হবে। আমাদের কাউকে বুধবার বুথে যেতেও বারণ করে। বলে, বেলা ১১টার মধ্যে ওরা ভোট শেষ করে দেবে।” মঙ্গলবার সকালে ফের পুলিশ আসে। অভিযোগ, পুলিশ পলাতক বিজেপি কর্মীদের থানায় আত্মসমর্পণ করানোর জন্য তাঁদের পরিবারকে চাপ দেয়। না হলে বাড়ির লোকেদের থানায় তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। স্বরূপবাবুর দাবি, “এখানে পুলিশ-তৃণমূল এক হয়ে কাজ করছে। পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে আমাদের সংগঠন ক্রমশ বাড়তে থাকায় ওদের এত রাগ!”

দলীয় কর্মীদের কাছে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরেই বাঁকুড়ার জেলাশাসক তথা ওই লোকসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার বিজয় ভারতীর সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ করেন বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। বিকেলে তিনি নিজে বাগজাদা গ্রামেও আসেন। তাঁর বরাভয়েই বিজেপি কর্মী নন্দলাল মণ্ডল, স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবোধ মণ্ডল, বাগান মণ্ডলের মতো জনা ছয়েক সক্রিয় বিজেপি কর্মী।

সুভাষবাবুর অভিযোগ, “এই গ্রাম থেকে আমরা বেশি ভোট পাব, এটা বুঝে তৃণমূল-পুলিশ মিলে ভয় দেখাচ্ছে।” তৃণমূলের শালতোড়া ব্লক সভাপতি কালীপদ রায়ের অবশ্য দাবি, “হামলা ও শাসানির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা অভিযোগ করছে, তারা আসলে কোনও দলেরই কর্মী নয়। ভোটের আগে টাকা নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে ভিড়েছে। এখন নিজেদের মাটি শক্ত করতে তৃণমূলের নামে অপপ্রচার করছে। সঙ্গে পুলিশের নামও জড়ানো হচ্ছে।” অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বংশীকে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলাশাসক বলেন, “ওই গ্রামে হামলা, মারামারি হয়েছে বলে আমার কাছে খবর নেই। তবে, যুগ্ম-বিডিওকে রিপোর্ট দিতে বলেছি।”

লাগোয়া আনন্দপুর, রাউতোড়া গ্রামেও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের শাসানির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ দিন বাগজাদা থেকে ফেরার পথে এই প্রতিবেদকের গাড়ি আটকান রাউতোড়ার কিছু বিজেপি কর্মী। তাঁরা বলেন, “তৃণমূল টানা হুমকি দিচ্ছে। বলছে, ভোটের দিন বুথে যাওয়া যাবে না। পোলিং এজেন্টও দেওয়া যাবে না। না হলে জানে মেরে দেবে। আমরা খুব ভয়ে আছি।”

সন্ধ্যায় সুভাষবাবু ওই গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে ফোন করে জেলাশাসক ফের ওই গ্রামে যাওয়ার অনুরোধ করেন। শালতোড়ার ওসি এবং যুগ্ম-বিডিওকে ওই গ্রামে পাঠান জেলাশাসক। সুভাষবাবুর কথায়, “দু’জনেই আশ্বাস দিয়েছেন, বুধবার এই গ্রাম থেকে ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারেন, তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, পুলিশই যেখানে অভিযুক্ত, সেখানে এই আশ্বাস কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে!”

বাগজাদা গ্রামের বুথে কিন্তু আধা সেনা নেই। আজ সেখানে ভোট করানোর দায়িত্বে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের দুই কর্মী-ই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shaltora raajdeep bandyopadhyay bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE