কোথাও শুধু অসবর নিয়েছেন গ্রন্থাগারিক। কোথাও বা গ্রন্থাগারিক এবং পিওন একই সঙ্গে অবসর নিয়েছেন। অথচ সেই শূন্যপদ পূরণ হয়নি এখনও। বরং অন্য গ্রন্থাগার থেকে কর্মী তুলে এনে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বন্ধ হয়ে পড়ছে জেলার অনেক গ্রন্থাগার। পরিষেবা না পেয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে পাঠক মহলে। সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ পাঠকদের।
জেলা গ্রন্থাগার দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৪ সালে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠে ময়ূরেশ্বরের নওয়াপাড়া, কালীগতি মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৭২ সালে গ্রন্থাগারটি সরকারি অনুমোদন পায়। ওই গ্রন্থাগারের বর্তমান পাঠক সংখ্যা চার শতাধিক। বরাদ্দ রয়েছেন একজন গ্রন্থাগিরক ও পিওন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে একে একে অবসর নেন দু’জনই। কিন্তু আজও তাঁদের জায়গায় কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে বর্তমানে গ্রন্থাগারটি পুরোপুরি বন্ধ। পাঠক সুকুমার গড়াই, মহিমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে আমরা এই গ্রন্থাগারের সদস্য হিসেবে রয়েছি। বই পড়ে আমাদের সময় কাটে। কিন্তু গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ পুরোপুরি হারিয়েছি।” গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক সজল রায়চৌধুরী বলেন, “এমনিতে পড়ার অভ্যাস চলে যাচ্ছে। তার উপরে সংশ্লিষ্ট দফতরের উদাসীনতায় গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় অনেক পাঠকই হতাশ হয়ে পড়েছেন। জেলা গ্রন্থাগার দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।”
একই অবস্থা ওই থানা এলাকারই লোকপাড়া গ্রামীণ গ্রন্থাগার এবং ষাটপলশা রাধাবিনোদিনী গ্রামীণ পাঠাগারের। দু’টি গ্রন্থাগারের জন্যই একজন করে গ্রন্থাগারিক এবং একজন করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু লোকপাড়ার গ্রন্থাগারিক অবসর নিয়েছেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। একই সময়ে অবসর নিয়েছেন ষাটপলশার গ্রন্থাগারিক এবং পিওন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় লোকপাড়া গ্রামীণ গ্রন্থাগারের কর্মী অনুপ ভট্টাচার্যকে তিন দিন লোকপাড়া এবং তিন দিন ষাটপলশায় নিয়োগ করে জোড়াতালি দিয়ে পাঠাগার চালানো হচ্ছে। ষাটপলশার পাঠক আনন্দ মণ্ডল, লোকপাড়ার সুকদেব গড়াই বলেন, “আগে ছ’দিনই গ্রন্থাগারে গিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়ার পাশাপাশি বই লেনদেনের সুযোগ মিলত। কিন্তু এখন শুধু তিন দিন আমরা সেই সুযোগ পাই। মনের তৃপ্তি মেটে না।”
লোকপাড়া গ্রামীণ গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির সম্পাদক সঞ্জিত দত্ত ও ষাটপলশার গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক হলধর মণ্ডল বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্য প্রায়ই আমাদের পাঠকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও সুরাহা হয়নি।”
জেলা গ্রন্থাগার অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু প্রামাণিক বলেন, “শুধু ময়ূরেশ্বরের ওই সব গ্রন্থাগারই নয়, জেলার বেশ কিছু গ্রন্থাগারে কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। কর্মী বরাদ্দ হলেই শূন্যপদ পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। তবে আপাতত সাময়িক ভাবে যে সব গ্রন্থাগারে দুই বা তার বেশি কর্মী রয়েছেন তাঁদের মধ্যে কাউকে পুরোপুরি কর্মী শূন্য গ্রন্থাগারে দিয়ে পাঠক পরিষেবা বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy