জঙ্গলমহল মেতে ফুটবল টুর্নামেন্টে
নিজস্ব সংবাদদাতা • বরাবাজার ও রানিবাঁধ
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় জঙ্গলমহল ফুটবল প্রতিযোগিতার খেলা জমে উঠেছে। জোন ভিত্তিক খেলার ফলও প্রকাশ হচ্ছে। বরাবাজারের এটিএম গ্রাউন্ডে বুধবার জঙ্গলমহল ফুটবল কাপ প্রতিযোগিতার হেড কোয়ার্টার জোনের চূড়ান্ত স্তরের খেলা হয়ে গেল। এই জোনে বোরো, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বরাবাজার ও বাঘমুণ্ডি থানা রয়েছে। ইতিপূর্বে এই থানাগুলির ক্লাবের মধ্যে খেলা হয়ে গিয়েছিল। এ দিন এই থানাগুলির প্রথম স্থানাধিকারী দলগুলি প্রতিযোগিতায় যোগদান করে। ছেলেদের ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাঘমুণ্ডির অযোধ্যা সারনা স্পোর্টিং ক্লাব ২-০ গোলে বান্দোয়ানের কুইলাপাল মার্শাল গাঁওতাকে হারিয়ে হেডকোয়ার্টার জোনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মেয়েদের ফুটবলে বোরো থানার লিলিবিতি গাঁওতা খয়েরবনি ক্লাব ট্রাইবেকারে ৩-১ গোলে বলরামপুরের চাকুলিয়া আদিবাসী সরম ধরম ক্লাবকে হারাল। এই মাঠেই বরাবাজার থানার ছেলেদের তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা হয়েছে। মোট প্রতিযোগীর সংখ্যা ছিল ৭১ জন। প্রথম তিনজন স্থানাধিকারী জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেবেন। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে ‘জঙ্গলমহল ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০১৪’ র রানিবাঁধ থানা জোনের খেলা শেষ হল বুধবার। প্রতিযোগিতার খেলাগুলি হয়েছে দাঁড়কেডি ফুটবল মাঠে। পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হল জোভী ফুটবল দল। ফাইনালে জোভী টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে চূড়াপাথর আদিবাসী হিরিচ পাসিল এভেন গাঁওতাকে হারায়। মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জামদাবেড়া নিউ কিশোর ক্লাব। ফাইনালে তার টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে পাজোনতলা আদিবাসী উথনা গাঁওতাকে হারিয়েছে। পুরুষ বিভাগে ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন জোভীর দেবাশিস মুদি। মহিলা বিভাগে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন আদিবাসী উথনা গাঁওতার সুস্মিতা মাহাতো। প্রতিযোগিতার পুরুষ বিভাগে ২৪টি দল এবং মহিলা বিভাগে ৩৯টি দল যোগ দিয়েছিল। মাঠে ছিলেন রানিবাঁধ থানার আইসি আজম আলি।
জঙ্গলমহল কাপ ফাইনাল
সিউড়ি পুলিশ লাইনে জঙ্গলমহল কাপের ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
জঙ্গলমহল কাপের থানা পর্যায়ের খেলাগুলি আগেই শেষ হয়েছিল। বুধবার পুরুষদের জেলা পর্যায়ের ফাইনাল খেলা হল সিউড়ির পুলিশ লাইনের মাঠে। খেলার সূচনা করেন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। জনসংযোগ বাড়াতে মাওবাদী উপদ্রুত জেলাগুলিতে মূলত আদিবাসী পুরুষ ও মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতা দিয়ে জঙ্গলমহল কাপের সূচনা হয়েছিল ২০১১ সালে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলা ছাড়াও বীরভূমের ৯টি থানা এলাকাও জঙ্গলমহলের মধ্যে পড়ছে। রাজনগর, খয়রাশোল, কাঁকরতলা, দুবরাজপুর, সদাইপুর, মহম্মদবাজার, রামপুরহাট, নলহাটি ও মুরারই থানা এলাকা থেকে প্রতিযোগীরা যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) অজয়কুমার নন্দ, জেলা পুলিশ সুপার আলোক রাজোরিয়া, শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায়, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার সন্তোষা জি আর প্রমুখ। এ দিন পুরুষদের ফাইনাল খেলাটি হলেও গত সোমবার থেকে অনুষ্ঠিত খেলায় মহিলা ফুটবল, তীরন্দাজি, কাবাডি ও আদিবাসী নৃত্যদলের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরুষদের ফুটবলে রাজনগরের গুলালগাছি উত্তরণ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল মহম্মদবাজারের জেঠিয়া জিওনআইলা মা সারদা ক্লাব। মহিলা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় মহম্মদবাজারের জেঠিয়া আদিবাসী দল। কাবাডিতে মহম্মদবাজারের দেউচা ইনসান ক্লাব, তিরন্দাজিতে মহিলাদের মধ্যে প্রথম হয়েছে খয়রাশোলের রাস্তমণি মুর্মু এবং পুরুষদের মধ্যে প্রথম কাঁকরতলার শ্রীকান্ত মাজি। আদিবাসী নৃত্যে পুরস্কার পায় ভুরকুণ্ডা অদিবাসী লেকচার ক্লাব। সফল দলগুলি অন্য চারটি জেলার সঙ্গে যোগ দেবে ২৯ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরে।
সাঁইথিয়ায় ক্রিকেট লিগ
গ্রামীণ এলাকায় খেলাধুলোয় বৈচিত্র্য আনতে এবং জনপ্রিয় করে তুলতে নানা রকম লিগের আয়োজন করছে উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ইন্ডিয়ান গ্রামীণ ক্রিকেট লিগ (আই.জি.সি.এল)। বুধবার ছিল সাঁইথিয়া ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকার খেলা। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ফুলুর পঞ্চায়েতের বড়সিজা হাইস্কুল মাঠে খেলার সূচনা করেন তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান। প্রথম খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল ফুলুর একাদশ ও হরিসড়া একাদশ। এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে। প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে দু’টি করে ক্রিকেট দল গঠন করে টুর্নামেন্ট শুরু হয়। তবে মাঠপলসা ও ফুলুর পঞ্চায়েত অন্য পঞ্চায়েতের তুলনায় বড় হওয়ায় ওই পঞ্চায়েত দু’টি থেকে চারটি করে দল যোগ দিয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকার মোট ১৬টি দল খেলেছে। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি পঞ্চায়েতের দু’টি দলের মধ্যে খেলা হয়। তারপর ওই ১৬টি দলের মধ্যে ৮টি দলকে নিয়ে এ দিন বড়সিজা স্কুল মাঠে অঞ্চল বনাম অঞ্চল ভিত্তিক আই.জি.সি.এল হয়। এদের মধ্যে দু’টি দল ব্লক স্তরে খেলবে। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে ব্লক ভিত্তিক খেলা শুরু হবে। বীরভূম লোকসভার অর্ন্তগত ১৩টি ব্লকের ২৬টি ও পাঁচটি পুর-এলাকার একটি করে মোট ৩১ দল ছাড়াও শতাব্দী রায়ের পছন্দের একটি দল নিয়ে মোট ৩২ দল মূলপর্বে খেলবে। এলাকার সাংসদ শতাব্দী রায়ের উদ্যোগেই এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। মূলপর্বের খেলা শুরু হবে ৩১ ডিসেম্বর। সাঁইথিয়ার বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান শান্তনু রায় বলেন, “৩১ ডিসেম্বর শতাব্দী রায় একাদশ বনাম চিকিৎসক অনুরাগ ভাদুরিয়া একাদশের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ দিয়ে এই টুর্নামেন্টের মূলপর্বের খেলা শুরু হবে। মূলপর্বের খেলাগুলি বীরভূম কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে হবে। ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি দু’টি সেমিফাইনাল ম্যাচ সাঁইথিয়া কলেজ মাঠে হবে। ফাইনাল ম্যাচও সাঁইথিয়ায় হবে। তবে ফাইনাল ম্যাচের দিন এখনও ঠিক হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy