Advertisement
E-Paper

ছেলের ভাল ফল, তবু দুশ্চিন্তায় দর্জি পরিবার

স্কুলের সেরা হয়েছে ছেলে। গাঁয়ের সবাই আনন্দে আটখানা। কিন্তু আকাশ ভেঙে পড়েছে রফিক শেখের মাথায়। কী করে ছেলে ওয়াসিমকে উচ্চশিক্ষার চৌকাঠে পৌঁছে দেবেন সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০০:৫৪
ওয়াসিম আক্রাম।—নিজস্ব চিত্র।

ওয়াসিম আক্রাম।—নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের সেরা হয়েছে ছেলে। গাঁয়ের সবাই আনন্দে আটখানা। কিন্তু আকাশ ভেঙে পড়েছে রফিক শেখের মাথায়। কী করে ছেলে ওয়াসিমকে উচ্চশিক্ষার চৌকাঠে পৌঁছে দেবেন সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে তাঁর।

ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৩৫ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে ওয়াসিম আক্রাম। ওই স্কুলে ওয়াসিমের প্রাপ্ত নম্বরই সর্বোচ্চ। শুধু এই বারই নয়, একই স্কুল থেকে ৬২৯ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ স্থান দখল করেছিল ওয়াসিমই। এত দিন কার্যত পরানুগ্রহে ছেলের পড়াশোনোর ব্যবস্থা করতে পারলেও এবর রফিক শেখ পড়েছেন চরম দুঃশ্চিন্তায়। ছেলে বর্ধমান কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু পড়ানোর মতো আর্থিক সামর্থ তাঁর কোথায়? ময়ূরেশ্বরেরই অজপাড়া গাঁয়ে হতদরিদ্র পরিবার রফিকের টিনের দোচালা বাড়িতে বৈদুতিক সংযোগ নেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনোর জন্য পাশের বাড়ি থেকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হয়েছে তাঁকে। স্থানীয় বাসুদেবপুর মোড়ে সেলাইয়ের ছোট দোকানে যত্‌সামান্য আয়ের উপরেই ছেলে এবং দুই মেয়ের পড়াশোনো-সহ কার্যত জোড়াতালি দিয়ে সেলাইয়ের মতোই এত দিন চলত ওয়াসিমদের পরিবার। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষার পনেরো দিন আগে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব কিছু। তার পর থেকেই রোজগার বন্ধ। শুধু তাই নয়, বাড়ির ঘটিবাটি বেচেও খরিদ্দারদের ছিট কাপডের দাম মেটাতে হয়েছে তাঁকে।

স্ত্রী মমতাজ বিবি বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন ওয়াসিমের বাবা। চোখেও ভাল দেখেন না। তাই অন্য দোকানেও কেউ কাজ করতে নেয় না। ছেলে ভাল ফল করেছে। কিন্তু এমিনিতেই আমাদের সবদিন দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে না। তার উপরে ছেলের পড়াশোনার খরচ কী করে জুটবে ভেবে পাচ্ছি না।” রফিক শেখ বলছেন, “নিজের শরীর টুকু ছাড়া আমার তো অন্য কিছু সম্বল নেই।”

বাবার এই অসহায়তার কথা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াসিম। সে বলে, “গরিব বাবা-মায়ের সন্তানদের সব স্বপ্ন তো আর পূরণ হয় না। তেমন হলে যে কোনও একটা চাকরি খুঁজে নিয়ে বাবার পাশে দাঁড়াব।” লোকপাড়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রভাকর মণ্ডল অবশ্য বলছেন, “ওয়াসিম আমাদের স্কুলের সুনাম বাড়িয়েছে। তার উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা চাঁদা তুলে যতটা পারি সহায়তা করব।”

wasim akram higher secondary result mayureswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy