Advertisement
০৯ মে ২০২৪
বিতর্কে পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতি

জেলা পরিষদকে না জানিয়ে কাটা হল গাছ

জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ডাকবাংলোর গাছ কেটে বিতর্কে জড়ালো পঞ্চায়েত সমিতি। শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদের নির্দেশে মাঝপথেই স্থগিত হয়ে গেল গাছ কাটা। কেটে ফেলা গাছ বিক্রি করে পাওয়া টাকাও জেলা পরিষদের তহবিলে জমা করতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিকে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ঘটনা।

এই জায়গায় কাটা হয়েছে গাছ। —নিজস্ব চিত্র

এই জায়গায় কাটা হয়েছে গাছ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ডাকবাংলোর গাছ কেটে বিতর্কে জড়ালো পঞ্চায়েত সমিতি। শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদের নির্দেশে মাঝপথেই স্থগিত হয়ে গেল গাছ কাটা। কেটে ফেলা গাছ বিক্রি করে পাওয়া টাকাও জেলা পরিষদের তহবিলে জমা করতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিকে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ঘটনা।

পাত্রসায়র ব্লকের হাটকৃষ্ণনগর এলাকায় জেলা পরিষেদের একটি ডাকবাংলো রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০১২ সালে তৎকালীন বাম পরিচালিত জেলা পরিষদ ডাকবাংলোটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেয় পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির হাতে। যদিও বাংলোর মালিকানা জেলা পরিষদের হাতেই থাকে। বাংলো চত্বরে আম, জাম, কাঁঠাল, শিরিষের মতো প্রায় ২১টি গাছ ছিল। সম্প্রতি সেই গাছগুলি কাটার সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চায়েত সমিতি। সেই মোতাবেক গাছ কাটা শুরুও হয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়েই জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত মুখোপাধ্যায় জেলা পরিষদের সচিবের কাছে লিখিত ভাবে ঘটনাটি জানান। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর)-কেও চিঠি দিয়ে গাছ কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চান।

চিঠি পাওয়ার পরেই গাছ কাটা বন্ধ করতে নড়েচড়ে বসে জেলা পরিষদ। ততদিনে অবশ্য বেশির ভাগ গাছই কাটা হয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সচিব শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই বাংলোটি জেলা পরিষদের। কেবলমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতিকে। তাই জেলা পরিষদের অনুমতি না নিয়ে তারা বাংলোর গাছ কেটে ফেলতে পারে না। তিনি বলেন, “আমি গাছ কাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছি বিডিওকে। যে গাছগুলি কাটা হয়েছে, তা বিক্রি করে মেলা টাকা জেলা পরিষদের তহবিলে জমা দিতেও বলা হয়েছে।” পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, “গাছ কাটা বন্ধ করার লিখিত নির্দেশিকা এখনও পাইনি। মৌখিক ভাবে আমাকে গাছ কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই অবশিষ্ট গাছগুলি কাটা হচ্ছে না।”

জেলা পরিষদকে না জানিয়ে কেন কাটা হচ্ছিল গাছগুলি?

পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডাকবাংলোটির চারপাশে সীমানা পাঁচিল না থাকায় যে কেউ বাংলোয় ঢুকে পড়ত। বাংলোর ভিতরে গাছ চুরির ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার। এ ছাড়াও রাতের অন্ধকারে অনেকে এসে বাজে আড্ডা মারে বাংলো চত্বরে। অন্য দিকে, গাছগুলিও নষ্ট হতে বসেছিল। তাই এই গাছের কাঠ বিক্রি করে পাওয়া টাকা ও পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে কিছু টাকা দিয়ে বাংলোর চারপাশে পাঁচিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।” তাঁর যুক্তি, জেলা পরিষদ এই বাংলোটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পঞ্চায়েত সমিতির হাতে হস্তান্তর করেছে। তাই গাছ কাটার জন্য জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে বলে তাঁরা বুঝতে পারেননি। একই কথা বলেছেন বিডিও। তাঁর কথায়, “রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হস্তান্তর করার পরেও জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে বুঝতে পারিনি। তবে বন দফতরের অনুমতি নেওয়া থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই গাছ কাটা শুরু করা হয়েছিল।”

ডাকবাংলোর সৌন্দর্যায়নের বিষয়টি অবশ্য তাঁরা খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের সচিব। তবে, এই ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ সুব্রতবাবুর। তাঁর বক্তব্য, “প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছ থেকে এই ধরনের ভুল কাম্য নয়। জেলা পরিষদের গাছ পঞ্চায়েত সমিতিকে কী ভাবে কাটার অনুমতি দিল বন দফতর তা-ও বুঝে উঠতে পারছি না।” ডিএফও (উত্তর) সুধীরচন্দ্র দাসও জানাচ্ছেন, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন গাছ কাটার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনও দফতরকে বন দফতর অনুমতি দিতে পারে না। তিনি বলেন, “পাত্রসায়রের ডাকবাংলোর গাছ কাটার ব্যাপারে কিছু জানি না। বিশদে খোঁজ নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

trees cutting bankura patrasayer panchayat samiti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE