বাড়ি থেকে নিয়ে আসা জলই ভরসা পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র
পুরসভার জলের সংযোগ বন্ধ। বাসিন্দাদের কাছে চেয়ে এত দিন মিড-ডে মিলের রান্না চলছিল। কিন্তু সমস্যায় পড়ে তাঁরা জল দিতে না চাওয়ায় এ বার স্কুলে মিড-ডে মিলই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে কচিকাঁচা পড়ুয়ারা স্কুলে এলেও দুপুরে তারা বরাদ্দ মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
একদিন বা দু’দিন নয়, পুরুলিয়া শহরের আমডিহা বিবেকানন্দ শিশু বিদ্যালয়ে এই সমস্যা চলছে দুর্গাপুজোর পর থেকেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্থানীয় পুরপিতা থেকে পুরসভা এবং প্রশাসনিক মহলে এই সমস্যার কথা জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হয়নি। শহরের আমডিহা এলাকায় এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৭। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোয় ছুটির আগে পর্যন্ত কোনও রকমে মিড-ডে মিল চালানো হয়। কিন্তু জল না পেয়ে পুজোর ছুটির পরে স্কুলে আর মিড-ডে মিল রান্না করা সম্ভব হয়নি। তাই বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
প্রধানশিক্ষিকা চন্দনা গড়াই দে বলেন, “আমাদের স্কুলে আগে জলের সংযোগ ছিল। পুরসভা থেকে জল পাওয়া যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই সংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরসভাকে জানিয়েও এতদিনে জল পাওয়া যায়নি।” তিনি জানান, এতদিন এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে জল চেয়ে এনে কোনওরকমে রান্নার কাজ চলছিল। কিন্তু সেই বাড়িগুলির কুয়োয় জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় তাঁরাও আর এখন জল দিতে চাইছেন না। অন্য দিকে, এলাকায় নলবাহী জলের কল থাকলেও তাতে সকালে জল আসে। কিন্তু স্কুল খোলে বেলায়। ফলে সেই জলও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বিপাকে পড়ে রান্না বন্ধ করে দিতে হয়েছে।”
স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া করণ বাউরি, কবিতা গড়াই, তৃতীয় শ্রেণির লক্ষ্মীকান্ত বাউরি, অনামিকা মাহাতো বা দ্বিতীয় শ্রেণির জিত্ রায়, সুনন্দা রায়দের কথায়, “আমাদের স্কুলে এখন আর মিড-ডে মিল রান্না হয় না। দুপুরে খিদেয় খুব কষ্ট হয়। কিন্তু দিদিমণিরা জানাচ্ছেন, জল না পাওয়া গেল রান্না হবে না।’’ প্রধানশিক্ষিকা বলেন, “কবে এই সমস্যা মিটবে জানি না।” তিনি জানান, রান্না বন্ধ হওয়ায় রাঁধুনিদের পারিশ্রমিকও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরাও সে জন্য চাপ দিচ্ছেন।
এলাকার পুরপিতা বিভাস দাস পুরসভার বিরোধী দল। তিনি বলেন, “সমস্যার কথা আমি জানি। অনেক পড়ুয়া স্কুলের ওই খাবারের উপরেই ভরসা করে থাকে। তারা খুব সমস্যায় পড়েছে।” তাঁর অভিযোগ, তিনি পুরসভাকে ঘটনার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সমাধান হয়নি।
পুরুলিয়া ২ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ভাস্বতী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমিও এই সমস্যার কথা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক ও প্রশাসনকে জানিয়েছি।” যদিও পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “ওই স্কুলের সমস্যার বিষয়টি সবে আমাদের নজরে এসেছে। ওই স্কুলে কী ভাবে জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া যায় তা দেখা হচ্ছে।” পুরুলিয়ার মহকুমা শাসক (সদর) সৌম্যজিত দেবনাথ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy