Advertisement
E-Paper

টেন্ডারে বেনিয়ম, ৩৪ লক্ষের দুর্নীতির নালিশ

এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল কাঁচা রাস্তাগুলি পাকা হোক। দাবি মেনে বিভিন্ন প্রকল্পকে জুড়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার ১১টি কাঁচা রাস্তাকে কংক্রিটে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনাও নেয়। কিন্তু শুরুর আগেই বিপত্তি। প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার ওই কাজের টেন্ডার নিয়েই বেনিয়মের অভিযোগ উঠে গেল। সিউড়ি ২ ব্লকে তৃণমূল পরিচালিত অবিনাশপুর পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় সম্প্রতি মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকারই কয়েক জন ঠিকাদার।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০০:৪৭

এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল কাঁচা রাস্তাগুলি পাকা হোক। দাবি মেনে বিভিন্ন প্রকল্পকে জুড়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার ১১টি কাঁচা রাস্তাকে কংক্রিটে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনাও নেয়। কিন্তু শুরুর আগেই বিপত্তি। প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার ওই কাজের টেন্ডার নিয়েই বেনিয়মের অভিযোগ উঠে গেল। সিউড়ি ২ ব্লকে তৃণমূল পরিচালিত অবিনাশপুর পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় সম্প্রতি মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকারই কয়েক জন ঠিকাদার। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডারের নোটিস জারি করতে হবে। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) চন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের একটি টেন্ডার নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সেকমপুর, ঘোষ পাড়া, ইমাদপুর, হাটইকড়া, শিবতলা, খটিপুর, পার্বতীপুর ও কবিরপুর এলাকায় ছ’টি কাঁচা রাস্তা কংক্রিটে রূপান্তরিত করার জন্য আইএসজিপি (ইন্সটিটিউশনাল স্ট্রেংদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েতস প্রজেক্ট) প্রকল্পে ২০ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। একই ভাবে বিআরজিএফ (ব্যাকওয়ার্ড রিজিউনস্ গ্রান্ট ফান্ড) প্রকল্পে শ্রীকান্তপুর ও ভোলাইপুর এলাকার দু’টি রাস্তা কংক্রিট করতে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়াও হরিশপুর এবং অবিনাশপুর এলাকার আরও তিনটি রাস্তার জন্যও টিএসএফসি প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ৭ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে গোটা পরিকল্পনার মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৪ লক্ষ ২০ হাজার ৩৯৪ টাকা। এগারোটি রাস্তা নির্মাণে পঞ্চায়েত এই বিপুল পরিমাণ টাকার কাজের বরাত পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দিতেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করেছে বলে অন্য ঠিকাদারদের অভিযোগ।

অভিযোগকারী ঠিকাদারদের পক্ষে রেজাউল করীম, আবদুল কালাম আজাদরা জানান, পঞ্চায়েত বা যে কোনও সরকারি কাজের টেন্ডার বা দরপত্রের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন, স্থানীয় পঞ্চায়েতে ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় নোটিস টাঙাতে হয়। কিন্তু অভিযোগ, ওই কাজের ক্ষেত্রে অবিনাশপুর পঞ্চায়েত সংবাদপত্রে কোনও বিজ্ঞাপন দেয়নি। এমনকী, পঞ্চায়েতে ওই দরপত্রের নোটিসটিও টাঙানো হয়েছে দরপত্র আহ্বানের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরেই। রেজাউলরা বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে আমরা এলাকায় ঠিকাদারির কাজে যুক্ত। বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছিলাম, কিছু দিনের মধ্যেই পঞ্চায়েতে কয়েকটি রাস্তায় কয়েক লক্ষ টাকার কাজ হবে। তারপর থেকে টেন্ডারের নোটিস বের হল কিনা জানতে, প্রতিদিন পঞ্চায়েতে যেতাম। কিন্তু প্রধান, নির্মাণ সহায়ক বা পঞ্চায়েতের কেউ-ই এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানাননি।” তাঁদের দাবি, হঠাৎ-ই গত ১৭ জুন বিকেল চারটের পরে পঞ্চায়েতে ওই টেন্ডারের নোটিস টাঙানো হয়। তাতে দেখা যায়, ওই দিনই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই অল্প সময়ের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে পঞ্চায়েতের এই ‘বেনিয়মের’ বিরুদ্ধে তাঁরা গত শুক্রবারই সিউড়ির মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগপত্রে ঘটনায় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান তাপস দাস এবং নির্মাণ সহায়ক সঞ্জীবকুমার মণ্ডলকে বেনিয়মে যুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই ওই দু’জন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। স্মারকলিপিতে তাঁরা আগের টেন্ডার বাতিলের পাশাপাশি যে সব ঠিকাদার দরপত্র জমা করেছেন, তাঁদের ঠিকাদারির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার দাবি তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের আরও দাবি, আগের টেন্ডার বাতিল করে ফের দরপত্র চাওয়া হোক। জমা দেওয়ার শেষ দিনের অন্তত ১৫ দিন আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় টেন্ডারের নোটিস দেওয়া হোক।

অভিযুক্ত প্রধান যদিও সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সব কিছুই নিয়ম মেনে হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার প্রায় ১৫ দিন আগে পঞ্চায়েতে নোটিস টাঙানো হয়েছিল। ওই নোটিস কেউ বা কারা খুলে নেয়। ফের সঙ্গে সঙ্গে নোটিস টাঙানো হয়। তবে, কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কারণ প্রতিটি কাজই ৫ লক্ষ টাকার কম।” অন্য দিকে, পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্মাণ সহায়কও। তিনি বলেন, “সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” তাঁর পাল্টা দাবি, “যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের অনেকেই আগে বরাত পাওয়া কিছু কাজ এখনও শেষ করে উঠতে পারেননি।”

allegations against trinamool panchayat allegations against tmc 34 million corruption road tender bhashkarjyoti majumdar siuri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy