এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর জেরে রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল ফটক আটকে ফের বিক্ষোভ হল। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনার জেরে প্রকল্পে কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি ডিভিসি কর্তৃপক্ষের। বিকেলে ওই শ্রমিকের মৃতদেহ এলাকায় পৌঁছনোর পরে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। ঘটনাস্থলে যায় রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। পরে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন রঘুনাথপুরের ওসি দীপঙ্কর সরকার।
পুলিশ ও ডিভিসি-র দাবি, বুধবার দুপুরে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের পাবড়া এলাকায় ডিভিসি-র প্রকল্পের ছাইপুকুরে (আ্যশপন্ড)পাথর বিছানোর কাজ করছিলেন রঘুনাথপুর থানার বড়গড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শঙ্কর বাউরি (৪০)। কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। বুধবার রাতে সেখানেই মারা যান শঙ্করবাবু।
ওই ঘটনার জেরেই এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রকল্পের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ হয়। প্রথম দিকে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন রঘুনাথপুর ২ ব্লক এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। পরে স্থানীয় জমিহারা সংগঠনের সদস্যেরা সামিল হন। ফলেস প্রকল্পে ঢুকতে পারেননি কিছু শ্রমিক। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হওয়ায় শঙ্করবাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ছাইপুকুরের কাজের বরাতপ্রাপ্ত বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থাকে। বিকেলে শঙ্করবাবুর দেহ প্রকল্প এলাকায় পৌঁছনোর পরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। গেটের সামনে শঙ্করবাবুর দেহ রেখে বিক্ষোভ চলতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন, অসুস্থ হয়ে নয়, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই শ্রমিকের। তাই নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। মৃতের ভাই কিষান বাউরি বলেন, “ছাইপুকুরের উপরের অংশে কাজ করার সময়ে নীচে পড়ে গিয়েছিলেন দাদা। পাথরে আঘাত পেয়েই মৃত্যু হয়েছে।” রাত ৮টা নাগাদ রঘুনাথপুরের ওসি-র মধ্যস্থতায় বিক্ষোভ ওঠে। ওই ঠিকা সংস্থার পাল্টা দাবি, কাজ করার সময়ে যেহেতু দুর্ঘটনায় মারা যাননি ওই শ্রমিক, তাই শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কার্যত কিছু করনীয় নেই বলে জানিয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষও।
তবে, গেট আটকে বিক্ষোভের অভিযোগ মানতে চাননি উপস্থিত তৃণমূল নেতা গৌতম সরকার। তিনি বলেন, “আমরা গেট আটকাইনি। মৃত শ্রমিকের কিছু সহকর্মী প্রথমে গেটে বিক্ষোভ দেখালেও আমরা তাঁদের সরিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা চাই, যেহেতু কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে শঙ্করের, তাই মানবিক কারণে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার তাঁর পরিবারের ভরনপোষণের জন্য ক্ষতিপূরণ দিক এবং এই বিষয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ মধ্যস্থতা করুক।” এক ধাপ এগিয়ে স্থানীয় জমিহারা সংগঠনের নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “মৃত শ্রমিকের পরিবারের দাবি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে।”
ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “কাজ করার সময়ে অসুস্থ হয়ে ওই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করনীয় নেই। বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছি।”