Advertisement
০৭ মে ২০২৪

তাঁবুতে রাত্রিবাসের রোমাঞ্চ ইকোপার্কে

শুনুকপাহাড়ির অসম্পূর্ণ ইকোপার্ক এ বার নব কলেবরে সাজিয়ে খুলে দেওয়া হল জনসাধারণের জন্য। দড়ির সেতু থেকে তাঁবুতে রাত্রিবাসের মতো নতুন আকর্ষণ যেমন যোগ হয়েছে, তেমনই রংবেরঙের ফুল আর সবুজ ঘাসের ‘গালিচা’ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দেবে।

সেজে উঠেছে শুনুকপাহাড়ি ইকোপার্ক। বাড়তি আকর্ষণ দড়ির সেতু, টেলিস্কোপ, রেস্তোরাঁ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

সেজে উঠেছে শুনুকপাহাড়ি ইকোপার্ক। বাড়তি আকর্ষণ দড়ির সেতু, টেলিস্কোপ, রেস্তোরাঁ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

শুনুকপাহাড়ির অসম্পূর্ণ ইকোপার্ক এ বার নব কলেবরে সাজিয়ে খুলে দেওয়া হল জনসাধারণের জন্য। দড়ির সেতু থেকে তাঁবুতে রাত্রিবাসের মতো নতুন আকর্ষণ যেমন যোগ হয়েছে, তেমনই রংবেরঙের ফুল আর সবুজ ঘাসের ‘গালিচা’ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দেবে। পার্কের উদ্বোধনে এসে তাই বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটি অবশ্যই জেলা সদর তথা জেলাবাসীর কাছে নববর্ষের উপহার। এখানের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মনোরঞ্জনের সব রকম ব্যবস্থাই রয়েছে।”

মাল্টিপ্লেক্স বা শপিংমল দূরঅস্ৎ, বাঁকুড়া শহরে বা আশপাশে এতদিন একটা ভালো পার্ক না থাকার আক্ষেপ ছিল বাঁকুড়া শহরবাসীর। একঘেয়েমি কাটাতে একটু মনোরঞ্জনের জন্যে শহরের মানুষকে তাই প্রায়ই ছুটে যেতে হতো বিষ্ণুপুর, শুশুনিয়ার মতো জেলার পর্যটন ক্ষেত্রগুলিতে। না হলে জেলা ছাড়িয়ে দুর্গাপুরে। তবে বাঁকুড়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে সদ্য চালু হওয়া শুনুকপাহাড়ির ইকো পার্ক এ বার শহরবাসীকে বেশি করে টানবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।

শুনুকপাহাড়িতে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হওয়া পাথরের একটি ছোট টিলাকে কেন্দ্র করে ইকোপার্ক তৈরির প্রথম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বামফ্রন্ট আমলে। সেই মোতাবেক কাজও শুরু হয়েছিল। ২০০৫ সালে চালু করা হয় পার্কটি। কিন্তু রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে চালু হওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় সেই পার্ক। পঞ্চায়েতে পালাবদলের পর তৃণমূল পরিচালিত বাঁকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতি ও আন্ধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েত ফের পার্কটি চালু করায় উদ্যোগী হয়। রবিবার পার্কের উদ্বোধন করেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তিনি জানান, ১০০ দিনের প্রকল্প, বিআরজিএফের মতো একাধিক প্রকল্পের টাকা-সহ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে এই পার্ক সাজাতে টাকা খরচ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পার্কটিকে নতুন রূপ দিতে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পাথরের টিলাটিকে ঘিরে নানা কারুকার্য করা হয়েছে। মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে ‘রোপ ব্রিজ’, ‘টেলিস্কোপ’। অনেকগুলি পিকনিক স্পট নির্দিষ্ট করা হয়েছে পার্কের ভিতরে। পিকনিক স্পটের জন্য প্রতিটি দলের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে নেওয়া হবে। রাতে পার্কের ভিতরে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিবাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। টিলার গায়েই গড়া হয়েছে একটি মুক্ত মঞ্চ। খোলা আকাশের নীচে ছোটোখাটো অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে এখানে। ছোটদের জন্য আলাদা করে বেশকিছু মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পার্কের ভিতরে রয়েছে রেস্তোঁরাও। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পার্কের ভিতরে সব্জি, মাছ ও এমু পাখি চাষও হচ্ছে। এখানকার সব্জি মিড-ডে মিলে রান্না করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়। পার্কে ঢুকতে বড়দের ১০ টাকা ও ১০ বছর পর্যন্ত শিশুদের ৫ টাকা করে টিকিটের দাম ঠিক করা হয়েছে।

বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগানের বাসিন্দা তথা মগরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুকেশ পাত্র বলেন, “এই শহরে মনোরঞ্জন ও সময় কাটানোর জন্য কিছুই নেই। তাই মাঝে মাধ্যেই পরিবার নিয়ে দুর্গাপুর, আসানসোলে চলে যাই। তবে ইতিমধ্যে শুনুকপাহাড়ির পার্কে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা জানাচ্ছেন বেড়ানোর পক্ষে পার্কটা না কি দারুণ। তাই ভাবছি শীঘ্রই সেখানে সবাইকে নিয়ে যাব।” কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা নিমাই পতির আক্ষেপ, “শুনুকপাহাড়ি শহরের মধ্যে না হলেও কাছেপিঠে বলাই যায়। এ বার থেকে ওখানেই বেড়াতে যাব।”

তবে চালু হলেও বামফ্রন্ট আমলের মতো ফের এই ইকোপার্ক বন্ধ হয়ে যাবে না তো? সংশয় অনেকেরই। বিডিও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, “রক্ষণাবেক্ষণ ও রেস্তোঁরার দায়িত্ব আমরা বেসরকারি সংস্থাকে লিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পিপিপি মডেলে এই পার্ক চলবে। এতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

eco park shunukpahari eco park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE