Advertisement
০২ মে ২০২৪

তন্তু থেকে শিল্পসামগ্রী তৈরিতে পথ দেখাচ্ছে রাজনগর

রং একটু সাদাটে, তবু সিসাল পাতা থেকে বার-করা তন্তু দেখলে চট করে পাট ভেবে ভুল হতে পারে। কাজে কিন্তু পাটের চাইতে কম যায় না। দিব্যি তৈরি করা যায় দড়ি, ব্যাগ, টুপি, পাপোষ, দোলনা, টেবিল ম্যাট, ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী। রাজনগরের গাংমুড়ি জয়পুর অঞ্চলের সরকারি কৃষিখামারে সিসাল তন্তু কাজে লাগিয়ে নানা জিনিস তৈরি করার প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
রাজনগর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৬:৫২
Share: Save:

রং একটু সাদাটে, তবু সিসাল পাতা থেকে বার-করা তন্তু দেখলে চট করে পাট ভেবে ভুল হতে পারে। কাজে কিন্তু পাটের চাইতে কম যায় না। দিব্যি তৈরি করা যায় দড়ি, ব্যাগ, টুপি, পাপোষ, দোলনা, টেবিল ম্যাট, ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী। রাজনগরের গাংমুড়ি জয়পুর অঞ্চলের সরকারি কৃষিখামারে সিসাল তন্তু কাজে লাগিয়ে নানা জিনিস তৈরি করার প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা। পরিকল্পনা রয়েছে, সমবায় তৈরি করে বিক্রি হবে সিসালের সামগ্রী। তৈরি হবে একটি উৎপাদন-বিপনন কেন্দ্র। গোটা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে চার কোটি টাকাও। আর বছর দুয়েক পরে নিয়মিত উৎপাদন শুরু হবে, হাল ফিরবে অন্তত দু’শো পরিবারের, এমনই পরিকল্পনা।

বাদ সেধেছে যন্ত্র। রাজনগর ব্লক শিল্প উন্নয়ন আধিকারিক অমল দাস বলেন, “খড়্গপুর থেকে চারটি তন্তু বের করার বৈদ্যুতিন মেশিন আনা হয়েছিল। কিন্তু বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার সিসাল পাতার চাইতে, রাজনগরের সিসাল পাতা প্রায় সাড়ে তিন-চার ফুট লম্বা। তাই সেই যন্ত্রগুলো সেটা কর্যকর হয়নি। ওই সংস্থাকে নতুন করে কার্যকর যন্ত্র তৈরির জন্য বলা হয়েছে।” তা কবে পাওয়া যাবে, এখনও ঠিক নেই। বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন শিল্পকর্তারাও। জেলা শিল্প কেন্দ্রের জিএম আশুতোষ সেন বলেন, “সিসালের লম্বা পাতাগুলি থেকে তন্তু সংগ্রহের উপযুক্ত যন্ত্রের খোঁজ চলছে।”

সবিস্তার...

তা হলে উপায়? এর আগে সিসাল ফার্মে ডিজেল-চালিত যন্ত্র দিয়ে তন্তু তৈরি হত। তাতে খরচ বেশি, উৎপাদনও কম। তবু সেগুলিকে আবার চালু করা যায় কিনা, দেখছেন কর্তারা। জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “কৃষি খামারের যন্ত্রগুলিকে উন্নত করে কাজে লাগানো যায় কিনা, তা দেখতে খড়্গপুর আইআইটি-র সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা চলছে।”

কিন্তু কেবল উৎপাদনের যন্ত্রই নয়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সিসাল পাতার জোগান নিয়েও। সরকারি প্রশিক্ষক নারায়ণচন্দ্র কর্মকার, প্রদীপ মজুমদাররাও বলছেন, “একটি সিসাল চারা পরিণত হতে বছর তিনেক সময় লাগে। কাজ শুরু হওয়ার পর অন্তত ৮০ কিলোগ্রাম সিসাল তন্তু লাগবে। অত তন্তু জোগান দেওয়ার মতো গাছ রাজনগরের ফার্মে নেই।” তাঁরা জানান, রাজনগরের ফার্মের তুল্য মানের গাছ রয়েছে কেবল ওড়িশায়। এ রাজ্যে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় অসংগঠিত ভাবে চাষ হয়। মেদিনীপুরে একটি সরকারি ফার্মও রয়েছে। তবে সেই সব গাছের মান রাজনগরের সমতুল্য নয়। প্রদীপকুমার মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “সিসাল পাতার জোগান নিয়ে সমস্যা থাকবে না। গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে সিসাল চারা লাগানো হচ্ছে।”

যথেষ্ট সিসল পাতা মিলবে কিনা, পাতা থেকে তন্তু তৈরির যন্ত্র মিলবে কবে, উত্তর মেলেনি। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই সিসল তন্তু দিয়ে দড়ি বানিয়ে, তা দিয়ে নানা সামগ্রী বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে চলেছেন গ্রামবাসীরা। ইতিমধ্যেই ১১৫জন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। প্রশিক্ষণ চলছে আরও ৫১ জনের। সব মিলিয়ে মোট ২২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গাংমুড়ি-জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি ঘরে কাজ শিখছিলেন তালপুকুর গ্রামের দীপক ঘোষ, জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব সাহা, সুন্দরখেলে গ্রামের সবিতা পাল, ঢাকা গ্রামের মেনকা টুডু। তাঁরা বলছেন, “সিসালের দড়ি বানিয়ে তা দিয়ে নানা জিনিস তৈরি করতে শিখে ভাল লাগছে। শুনেছি, এই সব জিনিসের চাহিদা প্রচুর। পাটের থেকে অনেক বেশি টেঁকসইও হবে। কিন্তু এখনই তো যত তন্তু দরকার তত পাওয়া যাচ্ছে না। তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tant rajnagar dayal sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE