Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
খাগড়াগড়-কাণ্ডের জের, ফের সরব বাসিন্দারা

থানার দাবি কীর্ণাহারে

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পর ফের জোরালো হয়ে ওঠল কীর্ণাহারে পৃথক থানা গড়ার দাবি। বিশেষত ওই কাণ্ডে যে ভাবে একের পর এক সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দাদের নাম উঠে আসছে, তাতে পুলিশি নজরদারি বাড়াতে অবিলম্বে থানা গড়া দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই থানার দাবিতে বুধবারই স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।

পড়ে রয়েছে থানার জন্য এলাকার বাসিন্দাদের দেওয়া জমি।

পড়ে রয়েছে থানার জন্য এলাকার বাসিন্দাদের দেওয়া জমি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পর ফের জোরালো হয়ে ওঠল কীর্ণাহারে পৃথক থানা গড়ার দাবি। বিশেষত ওই কাণ্ডে যে ভাবে একের পর এক সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দাদের নাম উঠে আসছে, তাতে পুলিশি নজরদারি বাড়াতে অবিলম্বে থানা গড়া দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই থানার দাবিতে বুধবারই স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।

কীর্ণাহার বর্তমানে নানুর থানার অধীন। কীর্ণাহার থেকে নানুরের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। এই থানার অধীনে রয়েছে ১১টি পঞ্চায়েত। এক দিকে বর্ধমান, অন্য দিকে মুর্শিদাবাদ সীমান্ত পর্যন্ত থানার বিস্তার। তার উপর রাজ্য-রাজনীতিতে অস্থিরতার জন্য শিরোনামে নানুরের নাম। অজয়ের ধার বরাবর অবৈধ বালির ঘাট, বেআইনি অস্ত্র এবং পোস্ত চাষকে কেন্দ্র করে বহিরাগত দুষ্কৃতীদেরও হামলা চলে। স্বাভাবিক ভাবে সব দিক সামাল দিতে গিয়ে পুলিশকেও বেসামাল হয়ে পড়তে হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত। আলাদা থানা হলে ওই পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব বলে মনে করেন নানুর পুলিশের একাংশ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে যাদের নাম জড়িয়েছে তারা দিনের পর দিন অগোচরে যে ভাবে কাজ চালিয়ে গিয়েছে তাতে পুলিশ-প্রশাসনের অক্ষমতাকেই দায়ি করেছেন এলাকার মানুষ। অরুণ রায়, উপত্‌লকান্তি রায়রা বলেন, “কীর্ণাহারে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। রয়েছে সিআই-এর অফিসও। তা সত্ত্বেও যেভাবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে একের পর এক এলাকার বাসিন্দাদের নাম ওঠে আসছে তাতে কীর্ণাহারে পৃথক থানার দরকার বলেই আমরা মনে করি। না হলে হয় তো একদিন এই এলাকাও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে পারে।”

পুলিশ ফাঁড়ি।

কীর্ণাহারে পৃথক থানার দাবি দীর্ঘদিনের। থানা এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৮ বছর আগে ১৭ বিঘা জমি বিনামূল্যে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় মানুষজন। ওই জমিতে একটি মার্কেট, ফাঁড়ি এবং সম্প্রতি সব্জি বাজার তৈরি করছে প্রশাসন। কিন্তু থানা না হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। জমিদাতা বিধু রায়, জগন্নাথ দত্তরা বলেন, “থানা গড়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েই সে দিন আমরা জমি দান করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন কথা রাখেনি। এখনও যা জায়গা পড়ে রয়েছে তাতে অনায়াসেই থানা গড়া যায়। এর পরও প্রশাসন যদি উদ্যোগী না হয় তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম উন্নয়নমূলক কাজে জমি দানে উত্‌সাহ হারাবে।” বিধায়ক গদাধর হাজরা বলেন, “এলাকাবাসীর দাবি যুক্তি সঙ্গত। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছি।” আবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী।

তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক সুবীর মণ্ডল ও বর্তমান সম্পাদক আশিস দে’র ক্ষোভ, “বছর তিনেক আগে পুলিশ কর্তারা এলাকায় এসে নানুর থানার ৪টি এবং লাভপুর থানার ৩টি পঞ্চায়েত নিয়ে কীর্ণাহার থানার ম্যাপ এবং কাগজপত্র তৈরি করেন। কিন্তু তারপর থেকে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।” সংশ্লিষ্ট নানুর পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অশোক ঘোষের সাফাই, “এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। জমি নিয়েও এতদিন ক্ষমতাসীন সিপিএম প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরই এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছি।” জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “ইতিমধ্যে কীর্ণাহারে থানা গড়ার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ এলেই সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kirnahar police station demand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE