Advertisement
০৯ মে ২০২৪

দেদার বালি কাটায় বিপন্ন সেতু

সেতুর স্তম্ভের গা ঘেঁষে অবাধে বালি কাটছে দুষ্কৃতীরা। ফলে, যে কোনও সময়ে সেতু ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। বিষ্ণুপুরের ভাটরা গ্রামের কাছে দারকেশ্বর নদে সারদা সেতুতে এমন দুষ্কর্মের কথা তাঁরা প্রশাসনকেও জানিয়েছেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, বেআইনি বালি তোলা ও পাচার রুখতে পুলিশের সাহায্য নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক। সেতুর কাছে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তুলে বোঝাই হচ্ছে সেই ট্রাকে। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক। সেতুর কাছে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তুলে বোঝাই হচ্ছে সেই ট্রাকে। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

সেতুর স্তম্ভের গা ঘেঁষে অবাধে বালি কাটছে দুষ্কৃতীরা। ফলে, যে কোনও সময়ে সেতু ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। বিষ্ণুপুরের ভাটরা গ্রামের কাছে দারকেশ্বর নদে সারদা সেতুতে এমন দুষ্কর্মের কথা তাঁরা প্রশাসনকেও জানিয়েছেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, বেআইনি বালি তোলা ও পাচার রুখতে পুলিশের সাহায্য নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ভাটরা গ্রামের এই সেতুটি রয়েছে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তার উপরে। বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী হয়ে এই রাস্তা দুর্গাপুর গিয়েছে। অর্থাৎ, জেলায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। এই রাস্তা দিয়েই বিষ্ণুপুর থেকে বহু বাস সোনামুখী, দুর্গাপুর, পাত্রসায়র, ইন্দাস ও বর্ধমানে যাতায়াত করে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সেতুর স্তম্ভের কাছে দারকেশ্বরের পাড় থেকে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও সেতুর স্তম্ভের ২০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা বেআইনি। কিন্তু অনেকে জেনে-বুঝেও দ্রুত বালি তোলার জন্য এই কাজ করেন। বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “এ সব ক্ষেত্রে খবর পেলেই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তত ক্ষণে গাড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছে বালি মাফিয়ারা।”

এ রকম অভিযোগ মাঝে-মাঝে ওঠে জানিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “সব সময় নজরদারি করার মতো কর্মী আমাদের নেই। তবু মাঝে-মধ্যেই পুলিশ নিয়ে অভিযান চালাই।” ভাটরা লাগোয়া ধারাপাট, ডিহর, জন্তা, লয়ের ইত্যাদি গ্রামেও বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। তাঁদের ক্ষোভ, চোখের সামনে এমন বেআইনি কাণ্ড দেখেও প্রাণভয়ে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে তাঁরা মুখ খুলতে পারেন না। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।

এ ভাবে অবাধে বালি তোলার জন্য এলাকায় নদী-ভাঙনও একটি প্রধান সমস্যা বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন বাসিন্দা জানান, বহু ক্ষেত্রে বালি তোলার জন্য মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। ফলে, পাড়ে জায়গায় জায়গায় গর্ত তৈরি হয়ে ভাঙন প্রকট হচ্ছে লাগোয়া গ্রামগুলিতে। গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, অতিরিক্ত বালি বোঝাই করে লরি যাতায়াতের ফলে গ্রামের রাস্তার অবস্থাও ভয়াবহ। কোনও ক্ষেত্রেই সরকারি নজরদারি নেই।

এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বালি কেটে লরিতে বোঝাই করা হচ্ছে। লরির চালক থেকে খালাসি, এমনকী ঝুড়ি মাথায় কর্মরত পুরুষ-মহিলারা কেউই গোটা ব্যাপারটি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। গ্রামের মানুষের একাংশের দাবি, এই সব কাজে বহিরাগতদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকজনও যুক্ত। ভূমি দফতরের এক আধিকারিকও বলেন, “হুগলির আরামবাগ, তারকেশ্বর এলাকার কিছু গাড়ি অভিযানের সময়ে ধরা পড়েছে। আমাদের ধারণা, লাভের আশায় এই চোরা চালানের সঙ্গে বহিরাগতদের সঙ্গে এলাকারও কিছু যুবকের যোগাযোগ রয়েছে। পুরো চক্রটিকে ধরার জন্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে গোপন অভিযান চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE