Advertisement
E-Paper

দীপালি অধরা, শাসকের হাত দেখছেন বিরোধীরা

এ যেন গেছোদিদি! কখনও শোনা যাচ্ছে তিনি কলকাতায়, কখনও শোনা যাচ্ছে তিনি সোনামুখীতেই রয়েছেন। রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের পর ১৭ দিন কেটে গিয়েছে। ভোট মিটে গিয়ে কাল, সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু গত ৭ মে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের মেরে-ধরে ছাপ্পা দেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এখনও অধরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০২:৩২
দীপালি সাহা। —ফাইল চিত্র

দীপালি সাহা। —ফাইল চিত্র

এ যেন গেছোদিদি! কখনও শোনা যাচ্ছে তিনি কলকাতায়, কখনও শোনা যাচ্ছে তিনি সোনামুখীতেই রয়েছেন। রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের পর ১৭ দিন কেটে গিয়েছে। ভোট মিটে গিয়ে কাল, সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু গত ৭ মে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের মেরে-ধরে ছাপ্পা দেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এখনও অধরা। পুলিশের দাবি, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর হদিস মিলছে না।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনও দায় ঝেড়ে ফেলার অবস্থায় নেই। সোনামুখী থানার দাবি, বুথের সেই সময়কার ভিডিও ফুটজ-সহ কিছু নথি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত কিছুই তাদের হাতে আসেনি। প্রশাসন জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া সেগুলি দেওয়া যাবে না। গোটা ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের গাফিলতি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি এবং সিপিএম।

গত ৭ মে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সোনামুখীর সাহাপুরে ২৭ নম্বর বুথে দলবল নিয়ে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দীপালি সাহার বিরুদ্ধে। বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর বিরুদ্ধে থানায় জামিন-অযোগ্য একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। হামলায় জড়িত সন্দেহে সাহাপুরের ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বুথে পুনর্নির্বাচনও হয়।

ঘটনার সময়ে নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত ভিডিও ফোটোগ্রাফারের তোলা ছবি (যদিও বুথে ঢুকেই তাঁর ক্যামেরা কেড়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল বলে অভিযোগ) এবং এক ভোটকর্মীর মোবাইলে গণ্ডগোলের সময়কার ‘ভয়েস রেকর্ডিং’ ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের হেফাজতে এসেছে। সেগুলি ছাড়াও ‘ফর্ম ১৭ এ’ রেজিস্ট্রার (ভোট দেওয়ার আগে ভোটারদের স্বাক্ষর বা টিপছাপ নেওয়া হয় যাতে) চেয়ে ১৩ মে সোনামুখী থানার তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়ছিল। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ঘটনার তদন্ত ও চার্জ গঠনের জন্য নথিগুলি খুবই দরকারি। সেগুলি না মেলায় তদন্তে ভাটা পড়ছে।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন আগে জানিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে মজুত তথ্যপ্রমাণ তারা পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারবে না। কিন্তু এখনও সেই অনুমতি চাওয়াই হয়নি বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর। বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। বিষয়টি একটু সময়সাপেক্ষ।”

দীপালির গ্রেফতারের দাবিতে গত বুধবারই মিছিল করে জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছিল বিজেপি। তার পরেও পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারায় এবং পুলিশকে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি চাইতে প্রশাসন দেরি করায় তারা ক্ষুব্ধ। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের অভিযোগ, “শাসকদলের বিধায়কের বিরুদ্ধে পদ্ধতি মেনে তদন্ত হচ্ছে না।” শাসকদলের নির্দেশেই পুলিশ-প্রশাসন একাংশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমেরও।

ছাপ্পাভোটে দীপালির নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরেও তৃণমূল নেতারা প্রকাশ্যেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি, তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী এ দিনও দাবি করেন, “গ্রেফতার করতে গেলে প্রমাণের দরকার। দীপালির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই প্রশাসনের কাছে নেই।” দীপালি ও তাঁর স্বামী সমীর সাহার ফোন এ দিনও বন্ধ ছিল। বিধায়কের ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার দাবি, “দিদি এলাকায় নেই। গাড়িতে তিনি কয়েক বার কলকাতায় যাতায়াত করেছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শ মতো তিনি চলছেন।”

বিজেপি-র সুভাষবাবুরও দাবি, “দীপালি কলকাতা যাচ্ছেন, আসছেন সোনামুখীর বাড়িতেও। সকলেরই চোখে পড়ছে। শুধু পুলিশই দেখতে পাচ্ছে না।” সিপিএমের সোনামুখী জোনাল সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্যেরও অভিযোগ, দীপালির সব গতিবিধি জেনেও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। তবে কি দীপালিকে ধরা হবে না? জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “উনি গা ঢাকা দিয়ে আছেন। হদিস পেলেই ধরব।”

dipali saha bankura sonamukhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy