Advertisement
০৯ মে ২০২৪

দ্বারকেশ্বর গিলছে ঘর, ক্ষোভ জয়পুরে

নদে বান না আসুক, জল বাড়লেই বুক ঢিপ ঢিপ করে দ্বারকেশ্বর নদ তীরবর্তী বাঁকুড়ার জয়পুর থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। গত কয়েক বছর ধরে হেতিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় নদের গ্রাসে কয়েকটি গ্রামের অনেকখানি চলে গিয়েছে। ফলে এ বার বর্ষায় দ্বারকেশ্বরে জল বাড়তে শুরু করায় ফের আতঙ্ক ফিরে এসেছে নদ ঘেঁষা বাসিন্দাদের।

ভাঙনের গ্রাসে। পরাশিয়া গ্রামে ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

ভাঙনের গ্রাসে। পরাশিয়া গ্রামে ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৭
Share: Save:

নদে বান না আসুক, জল বাড়লেই বুক ঢিপ ঢিপ করে দ্বারকেশ্বর নদ তীরবর্তী বাঁকুড়ার জয়পুর থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। গত কয়েক বছর ধরে হেতিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় নদের গ্রাসে কয়েকটি গ্রামের অনেকখানি চলে গিয়েছে। ফলে এ বার বর্ষায় দ্বারকেশ্বরে জল বাড়তে শুরু করায় ফের আতঙ্ক ফিরে এসেছে নদ ঘেঁষা বাসিন্দাদের।

দ্বারকেশ্বর নদের তীর লাগোয়া পরাশিয়া, বেলেখালি, ছাতিনা, ভবানীপুর, দৌলতপুর, ক্ষিরাইবনীর গ্রামে ফি বছর ভাঙন চলছেই। নদের গ্রাসে শুধু কি জমি গিয়েছে, হারিয়েছে গৃহস্থের উঠোন, ঘর, গোয়াল-সব। পরাশিয়া গ্রামের মানিক মাঝি, ক্ষিরাইবনীর মহাদেব কুণ্ডু, দৌলতপুরের মাধব পোড়েলদের এখন ভাঙনের দুশ্চিন্তা এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, “গত কয়েক বছরে ১০০টির বেশি বাড়ি নদের গর্ভে চলে গিয়েছে। নদ কেড়ে নিয়েছে কয়েকশো বিঘা জমি। দ্বারকেশ্বর ক্রমশ ওই এলাকায় গ্রামের ভিতরে থাবা বসাচ্ছে। তাই কবে আমাদের ঘর ভেসে যায়, সেই ভয়ে বর্ষা এলেই ঘুম উড়ে যায়।” প্রশাসনের তরফেও বাঁধ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়নি। জয়পুরের বিডিও মহম্মদ মারগুব ইমলি বলেন, “সমস্যার কথা জানার পরেই সেচ দফতরের কাছে ওই এলাকায় দ্বারকেশ্বরের পাড় বাঁধার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ও দিক থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।”

পরাশিয়া গ্রামের মানিক মাঝি দ্বারকেশ্বর নদের দিকে তাকিয়ে আতঙ্কিত চোখে বলেন, “নদের পাড়ে আমাদের ঘর। দ্বারকেশ্বর ঘর ভেঙে দেয়, পিছিয়ে গিয়ে নতুন জায়গায় ঘর তুলি। পরের বছর দ্বারকেশ্বর এগিয়ে এসে ফের সেই ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সরতে সরতে এখন পাশের সাইতড়া গ্রামের দিকে এগিয়ে গিয়েছি আমরা। আর কতদিন এ ভাবে দ্বারকেশ্বর আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করবে?”

বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েকবছর ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু না বাম জমানায়, না তৃণমূল সরকারের আমলে, দ্বারকেশ্বরের ভাঙন প্রতিরোধে ওই এলাকায় কোনও কাজই হয়নি। দ্বারকেশ্বরের পাড় বাঁধানোর দাবিতে তাঁরা সম্প্রতি এলাকার বিধায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্যকে জানিয়েছেন। তবে দৌলতপুর গ্রামের মাধব পোড়েল, ক্ষিরাইবনীর মহাদেব কুণ্ডুদের দাবি, “পাড় বাঁধাইয়ে কাজ প্রশাসন দেরিতে শুরু করলে হয়তো আমাদের গ্রামগুলো আর থাকবে না। সব দ্বারকেশ্বরের পেটে চলে যাবে। আমরাও বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হব।”

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জয়পুর থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য মঞ্জুলা কোলে। তিনি বলেন, “বামফ্রন্ট সরকার এই এলাকা থেকে বছর বছর বিপুল ভোটে জিতলেও নদের পাড় রক্ষায় কোনও কাজই করেনি। ফলে ওই সব এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম বিপন্ন। জেলা পরিষদের বৈঠকে আমি বিষয়টি জানিয়েছি।” এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিপিএমের জয়পুরের জোনাল সম্পাদক বিশ্বরূপ দে বলেন, “ওই এলাকায় পাড় বাঁধানোর জন্য আমরা অনেক আগে থেকেই দাবি জানিয়ে এসেছি। এখনও দাবি জানাচ্ছি।” কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারকে দিয়ে কেন ওই কাজ করানো যায়নি? তাঁর কাছে সদুত্তর মেলেনি।

এলাকাটি কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ওই এলাকার বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা বলেন, “বাসিন্দাদের সমস্যার কথা আমি বিধানসভা উপ-নির্বাচনের আগেই জেনেছি। তখনই জানিয়েছিলাম ভোটে জিতে আমি বিধানসভায় বিষয়টি তুলব। বর্ষাকালীন অধিবেশনে সেচ মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন।” শীঘ্র সমাধান সূত্র মিলবে বলে বিধায়ক গ্রামবাসীদের আশার কথাও শুনিয়েছেন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এরপরও কিছু না হলে তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত দাবি জানাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dwarakeswar river joypur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE