Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দেড় ঘণ্টার ঝড়-শিলাবৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতি চাষের

স্থায়িত্ব মাত্র দেড় ঘণ্টা। এই সময়ে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির অঙ্কটাও বেশ বড়সড় বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন এলাকার চাষিরা। সোমবার দুপুর ২টো থেকে বিকেল সাড়ে ৩টে পর্যন্ত ময়ূরেশ্বর ১ ও ২ ব্লক এবং রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লক এলাকায় ঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়।

নষ্ট হয়ে গিয়েছে ধান গাছ। ময়ূরেশ্বরে অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

নষ্ট হয়ে গিয়েছে ধান গাছ। ময়ূরেশ্বরে অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০০:০৯
Share: Save:

স্থায়িত্ব মাত্র দেড় ঘণ্টা। এই সময়ে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির অঙ্কটাও বেশ বড়সড় বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন এলাকার চাষিরা।

সোমবার দুপুর ২টো থেকে বিকেল সাড়ে ৩টে পর্যন্ত ময়ূরেশ্বর ১ ও ২ ব্লক এবং রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লক এলাকায় ঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চারটি ব্লকে এ বার পনেরো হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে ৫,৭৯৯ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। ৭,৩৮৮ হেক্টরের মধ্যে ২৬০০ হেক্টর জমির গম নষ্ট হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। একই ভাবে ছোলা ও তিল চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই চারটি ব্লকে ছোলা চাষ হয়েছিল ১,৫৫০ হেক্টর জমিতে। ক্ষতির কবলে পড়েছে ৪২৯ হেক্টর জমি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকা। অন্য দিকে, ময়ূরেশ্বর ১ ও রামপুরহাট ২ ব্লকে তিল চাষ হয়েছিল ৪৪০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ১৪০ হেক্টর জমির তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.৭ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও জেলার সর্বত্র কমবেশি পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা উদ্যান পালন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে এলাকার চাষিরা চরম সমস্যায় পড়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ হাজিপুর, কনুটিয়া, বড়তুড়িগ্রাম, দক্ষিণগ্রাম, সনকপুর প্রভৃতি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে মাঠে শুয়ে পড়েছে বোরো ধানের গাছ। গমের শিষ ফেটেফুটে একশেষ। একই অবস্থা পেঁয়াজেরও। ওই সব জমির পাশেপাশে ঘুরছিলেন, আর কপাল চাপড়াছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। স্থানীয় ব্যাঙ্ক এবং সমবায় সমিতি থেকে কৃষি ঋণ নিয়ে পনেরো বিঘে জমিতে ধান, চার বিঘে জমিতে গম, চার বিঘে জমিতে ছোলা এবং পনেরো কাঠা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করছিলেন হাজিপুরের বদিউল জামাল। তিরিশ হাজার টাকা বেসরকারি ঋণ নিয়ে এবং অন্যের কাছে বিঘে প্রতি এক কুইন্টাল ধান দেওয়ার চুক্তিতে পাঁচ বিঘে জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন কনুটিয়ার সফিকুল শেখ। ওই সব চাষিদের কথায়, “জমির উপরে শিলার স্তর জমে গিয়েছিল। ফসল সব শেষ। যেটুকু আছে, তা থেকে কতটা কী হবে ভাবছি। এই অবস্থায় কী করেই বা পরবর্তী চাষে নামব জানি না। কী করে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে জানি না।” জেলার সহকারি কৃষি আধিকারিক (তথ্য) অমর মণ্ডল বলেন, “প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী জেলায় ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ১০ কোটি ৮ লক্ষ (পেঁয়াজ ছাড়া) টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা ব্যাঙ্ক কিংবা সমবায় সমিতি থেকে বিমা যুক্ত কৃষি ঋণ নিয়ে থাকলে এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম নীতির মধ্যে পড়লে ক্ষতিপূরণের জন্য বিবেচিত হবেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের দফতরের তরফ থেকে যা যা করার করা হবে।”

চার ব্লকের ক্ষতির হিসেব

• বোরোধান: চাষ হয়েছিল ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। ক্ষতি হয়েছে ৫,৭৯৯ হেক্টর।

• গম: ৭,৩৮৮ হেক্টরের মধ্যে ২,৬০০ হেক্টর নষ্ট হয়েছে।

• ছোলা: ১,৫৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। ক্ষতির কবলে পড়েছে ৪২৯ হেক্টর জমি।

সূত্র: জেলা কৃষি দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

strom hail strom mayureswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE