Advertisement
E-Paper

দলেরই কর্মীদের ক্ষোভের মুখে শতাব্দী

ক’দিন আগেই বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, প্রতিশ্রুতি দিয়েও সাংসদ রাস্তার হাল ফেরাননি। এ বার দলীয় নির্বাচনী কর্মিসভায় খোদ দলেরই কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০১:২৯

ক’দিন আগেই বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, প্রতিশ্রুতি দিয়েও সাংসদ রাস্তার হাল ফেরাননি। এ বার দলীয় নির্বাচনী কর্মিসভায় খোদ দলেরই কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়।

বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়ার ওই কর্মিসভায় শতাব্দীকে লক্ষ করে কর্মীদের একাংশ চিৎকার করে বললেন, “আমাদের এলাকায় কোনও উন্নয়নই হয়নি। রাস্তাঘাট, শৌচালয় কিছুই গড়ে ওঠেনি। এ সব কেন হয়নি?” এমন ক্ষোভের মুখে পড়ে দৃশ্যতই বিব্রত দেখায় প্রাক্তন সাংসদকে। পরে কিছুটা সামলে নিয়ে শতাব্দী তাঁদের বলেন, “আপনারা হয়তো জানেন না, শুধু মহম্মদবাজার ব্লকের জন্যই সাংসদ তহবিল থেকে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছি।” ওই উত্তরে অবশ্য শান্ত হননি ক্ষুব্ধ কর্মীরা। মঞ্চের কাছেই তাঁরা দাবি জানাতে থাকেন, অবিলম্বে আঙ্গারগড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শৌচাগার গড়তে হবে। নেতাদের হস্তক্ষেপে অবশ্য তাঁরা কিছু ক্ষণের মধ্যেই শান্ত হয়ে সভায় মন দেন। এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যে কোনও জনপ্রতিনিধিকে ২৪ ঘণ্টা বাসিন্দাদের নাগালের মধ্যে থাকতে হয়। বিদায়ী সাংসদ তাঁর পেশাগত কারণে এলাকার মানুষকে সেই সময়টুকু দিতে পারেননি। এখন ভোট, তাই প্রচারের জন্য সাংসদ এলাকায় এসেছেন। তাই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা সাংসদকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।”

গত শনিবারই সাঁইথিয়ার দেরিয়াপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাগডোলা মোড়ে গাড়ি ঘিরে শতাব্দীর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। গ্রামবাসীর দাবি ছিল, তাঁরা তৃণমূল প্রার্থীর কাছে জানতে চান, তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেও এলাকার রাস্তার কেন হাল ফেরেনি? একই বক্তব্য সিপিএমেরও। তবে শতাব্দীর দাবি ছিল, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তিনি ওই এলাকার রাস্তা সারানোর প্রতিশ্রুতিও দেননি। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আবার ওই গোটা ঘটনায় সিপিএমেরই ‘চক্রান্ত’ দেখেছিলেন।

এ দিনের বিক্ষোভকে অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্ব বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ওই কর্মীরা মোটেই কোনও বিক্ষোভ দেখাননি। কিছু দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়েছেন মাত্র। একই সুরে শতাব্দীও দাবি করেন, “দলের কর্মীদের একাংশ আরও উন্নয়নের দাবি করেছেন। ওটা কোনও বিক্ষোভ ছিল না।” ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য সাংসদ তহবিল থেকে যথেষ্টই খরচ করেছেন বলে তাঁর দাবি। তাই সাংসদ হিসেবে এলাকার মানুষ তার কাজে সন্তুষ্ট বলেই তিনি মনে করেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আবার দাবি, “শতাব্দীর সাংসদ কোটা থেকে মহম্মদবাজার ব্লকে ৮০ হাজার টাকা করে ৯৮টি নলকূপ, ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫টি অ্যাম্বুল্যান্স, ৬০ লক্ষ টাকায় ৯ কিমি কংক্রিটের রাস্তা, ১৫ লক্ষ টাকায় ১০টি সাংস্কৃতিক মঞ্চ গড়া হয়েছে।” বিরোধী দলগুলির অবশ্য অভিযোগ, ওই এলাকায় উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। এ দিনের ঘটনার জেরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা একই কেন্দ্রের প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মির প্রতিক্রিয়া, “সাংসদ হিসেবে শতাব্দী রায় চূড়ান্ত ব্যর্থ। যার জন্য প্রচারে বেরিয়ে বারবার এমন ভাবে অপদস্থ হচ্ছেন। এক জন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সঙ্গে শতাব্দীর কোনও যোগাযোগই নেই। যাত্রা, সিনেমার শিল্পী হিসেবেই উনি ঠিক আছেন।” অন্য দিকে সিপিএম প্রার্থী কামরে ইলাহির প্রশ্ন, “তৃণমূল সাংসদের তথাকথিত উন্নয়ন সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষের কাছে পৌঁছলে কি তিনি এমন বিক্ষোভের মুখে পড়তেন?” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শতাব্দী বলেন, “আগের সাংসদরা কতবার এলাকায় আসতেন? আমি গত পাঁচ বছরে বহুবার এলাকায় গিয়েছি।” বারবার চেষ্টা করেও অনুব্রতর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

এ দিকে সাঁইথিয়ায় হওয়া শতাব্দীর নির্বাচনী কর্মিসভায় ফের তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল। সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান, পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত হাজির থাকলেও সভার আশেপাশেও দেখা মেলেনি বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত দলের সাঁইথিয়া শহর সভাপতি মানস সিংহ, ব্লক কার্যকরী সভাপতি সাধন মুখোপাধ্যায়ের। এমনকী, ওই সভায় মাত্র কয়েক সেকেন্ড বক্তৃতা রাখেন অনুব্রতও। শতাব্দীর প্রচারে দাপুটে নেতার এমন ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে দলেরই অন্দরে। শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বন্ধ চালকলের মাঠে হওয়া ওই সভা অবশ্য ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শতাব্দী পৌঁছতেই নায়িকাকে দেখার জন্য মঞ্চের সামনে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মঞ্চের উঠে তিন দিক ঘুরে হাত নেড়ে শতাব্দী বলেন, “কি, সবাই দেখতে পেয়েছেন তো? এ বার ভোটটাও দিতে হবে।” পরে তিনি দাবি করেন, “উন্নয়ন করব বলে ভোট চাইছি না। উন্নয়ন করে ভোট চাইছি।” তিনি জানান, আগামী দু’চার দিনের মধ্যেই বীরভূম কেন্দ্রে তাঁর উন্নয়নের খতিয়ান নিয়ে একটি বই কর্মীদের দেওয়া হবে। ওই বই হাতে করেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের ডাক দেন তিনি। শতাব্দীর বক্তৃতা শেষ হতেই অনেকেই অবশ্য সভাস্থল ছাড়তে শুরু করেন।

এ দিনই দুপুরের ওই কর্মিসভার আগে মহম্মদবাজারের দেউচাতেও সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের আঁচে পড়েন শতাব্দী। এলাকায় তাঁদের পছন্দ মতো জায়গায় প্রাক্তন সাংসদ সভা না করায় তাঁরা নিজেদের ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেননি। ওই বিক্ষোভ দেখে শতাব্দী খানিকটা বিরক্তই হন। এখানেও দলের নেতারা ওই কর্মীদের শান্ত করেন।

shatabdi roy bhaskarjyoti majumder sainthia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy