Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নাছোড় অনুব্রত, বীরভূমের সব বুথই কমিশনের নজরবন্দি

বীরভূমে ৩০ এপ্রিলের ভোট যে কার্যত তাঁর সঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘সম্মানের লড়াই’, শুক্রবার এক বেলার জেলা সফরে গিয়ে পরিষ্কার করে দিলেন রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। বীরভূমে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোটা যে তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ, কয়েক দিন আগে কলকাতায় বসেই তা জানিয়েছিলেন রাকেশ।

বীরভূমের জেলাশাসক এবং এসপি-র সঙ্গে সুধীরকুমার রাকেশ (বাঁ দিকে)।  ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

বীরভূমের জেলাশাসক এবং এসপি-র সঙ্গে সুধীরকুমার রাকেশ (বাঁ দিকে)। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

বীরভূমে ৩০ এপ্রিলের ভোট যে কার্যত তাঁর সঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘সম্মানের লড়াই’, শুক্রবার এক বেলার জেলা সফরে গিয়ে পরিষ্কার করে দিলেন রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ।

বীরভূমে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোটা যে তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ, কয়েক দিন আগে কলকাতায় বসেই তা জানিয়েছিলেন রাকেশ। বলেছিলেন বীরভূমের জন্য তাঁর বিশেষ ওষুধ রয়েছে। এ দিন বীরভূমের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সেই দাওয়াই-ই বাতলে দিলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, জেলার প্রতিটি বুথই নিরাপত্তার মোড়কে মুড়ে দেবে কমিশন। নজরদারি থাকবে প্রত্যেকটি বুথে। এ দিকে কমিশনকে এ দিনও চ্যালেঞ্জ ছুড়তে ছাড়েননি অনুব্রত।

রাকেশের কথায়, “এই জেলার মোট ২৯৬১টি বুথের প্রত্যেকটিতে হয় কেন্দ্রীয় আধাসেনা কিংবা মাইক্রো অবজারভার বা লাইভ ওয়েবকাস্টিং, ডিজিটাল ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা থাকবে।” কমিশন সূত্রের খবর, বীরভূমই রাজ্যের একমাত্র জেলা, যেখানে স্বাভাবিক বুথের থেকে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা বেশি। বীরভূমের ভোটে জেলায় মোতায়েন করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য। আর কোনও জেলার জন্য এত কেন্দ্রীয় জওয়ান নির্দিষ্ট করা হয়নি।

এ দিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে কিংবা বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়ে অনুব্রত মণ্ডলের নাম এক বারও উচ্চারণ করেননি রাকেশ। বরং বলেছেন, “আমরা কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে ভাবছি না। দু’টো বিষয়ের উপর সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করে একটা সংবিধান, আর একটা নির্বাচন কমিশনের লিখিত নির্দেশাবলি। আমি মনে করি এই দু’টোই সব কিছুর ওষুধ। যে আইন ভাঙবে, অবাধ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও নাম এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়।” বিকেলে বর্ধমানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরে রাকেশ বলেন, “বীরভূমে আইনশৃঙ্খলার কিছুটা অবনতি ঘটেছে। কিছু এলাকায় মাওবাদী প্রভাবও রয়েছে। তাই ভোটের দিন ওখানে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

নিরাপত্তার নিরিখে নির্বাচন কমিশন অন্য সব জেলা থেকে বীরভূমকে আলাদা করে দেখায় ক্ষুব্ধ জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। যে ভাবে বামফ্রন্ট ৩৪ বছর ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে, আমরাও সেটা করব। নির্বাচন কমিশন যত খুশি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিযোগ করুক।”

তৃণমূল জেলা সভাপতির গলায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুর।

রাকেশ এ ভাবে বীরভূমকে ‘পাখির চোখ’ করলেন কেন? রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী অফিসারের দফতরের খবর, এক বছর ধরে বীরভূমের নানা ঘটনাই নির্বাচন কমিশনকে ওই জেলাকে নিয়ে আলাদা করে ভাবিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ওই জেলায় শাসকদলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক মন্তব্য, লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের প্ররোচনামূলক বক্তৃতা উত্তেজনা তৈরি করেছে। অনুব্রত-মনিরুলকে তাঁদের বক্তব্যের জন্য শো-কজও করেছে কমিশন। তার উপরে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ব্যাপক সন্ত্রাস-রিগিং করেছে বলেও বিরোধী দলগুলি নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে। সেই নালিশের কেন্দ্রেও ছিলেন অনুব্রত। তাই বীরভূম নিয়ে কমিশনের যে কোনও বৈঠকেই অনুব্রতর নাম উঠেছে। নিরপেক্ষ ভাবে কাজ না করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন জেলার পুলিশ সুপারকে বদলে দিয়েছে। তার পরেও জেলায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ রয়ে গিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

ক’দিন আগে লাভপুরে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমা তৈরির সময়ে বিস্ফোরণ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তিনি গেলেন না কেন, জানতে চাওয়ায় রাকেশ বলেছেন, “জেলার পর্যবেক্ষকরা ওখানে গিয়েছিলেন। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই আমার ওখানে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।”

বৃহস্পতিবার বীরভূম লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়ায় ভোটকর্মীদের ওপর মাওবাদী হামলা হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এ দিন জেলা প্রশাসনকে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ দিয়েছে। রাকেশ বলেন, “সব কিছুর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণেই প্রত্যেকটা বিষয় প্রকাশ্যে ঘোষণা করা সম্ভব নয়। তবে চমক থাকবে।” বিশেষ পর্যবেক্ষক বলেন। “এই সব নিয়ে আলোচনা করতেই তো জেলায় এসেছিলাম।”

(সহ প্রতিবেদন: রানা সেনগুপ্ত, বর্ধমান)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anubrata vote in birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE