Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিরুদ্দেশে কালবৈশাখী, পুড়ে খাক দুই জেলা

ভোটের তাপ কমতেই ফিরে এসেছে লু। আগুনে বাতাসের ছোবল থেকে বাঁচতে বেলা গড়াতেই গৃহবন্দি হয়ে পড়ছেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াবাসী। আর যাঁদের সে উপায় নেই, তাঁরা রীতিমতো মুখে-চোখে কাপড় বেঁধে, ঠান্ডা জলের বোতল সঙ্গে নিয়ে বাড়ির বাইরে পা ফেলছেন। “এ ছাড়া যে উপায় নেই!” বলছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক চিকিৎসক। তাঁর মতে, বাইরে বের হলে ঠান্ডার মতোই গরমের হাত থেকেও শরীরকে বাঁচাতে সর্বাঙ্গ কাপড়ে মুড়ে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর জলও খেতে হবে।

প্রবল গরম। পুরুলিয়ায় বাসের উপরে রুমালে মাথা ঢেকে রয়েছেন যাত্রীরা।

প্রবল গরম। পুরুলিয়ায় বাসের উপরে রুমালে মাথা ঢেকে রয়েছেন যাত্রীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০০:৩৩
Share: Save:

ভোটের তাপ কমতেই ফিরে এসেছে লু। আগুনে বাতাসের ছোবল থেকে বাঁচতে বেলা গড়াতেই গৃহবন্দি হয়ে পড়ছেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াবাসী। আর যাঁদের সে উপায় নেই, তাঁরা রীতিমতো মুখে-চোখে কাপড় বেঁধে, ঠান্ডা জলের বোতল সঙ্গে নিয়ে বাড়ির বাইরে পা ফেলছেন। “এ ছাড়া যে উপায় নেই!” বলছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক চিকিৎসক। তাঁর মতে, বাইরে বের হলে ঠান্ডার মতোই গরমের হাত থেকেও শরীরকে বাঁচাতে সর্বাঙ্গ কাপড়ে মুড়ে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর জলও খেতে হবে।

ক’দিন আগে কালবৈশাখী এসে পারদের দাপাদাপি কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফের পারদ ঊধ্বমুখী। কিন্তু আকাশে ঘন মেঘের দেখা নেই। কালবৈশাখীও নিরুদ্দেশ। বেলা একটু বাড়তেই বাতাস গরম হয়ে উঠেছে। রোদের আঁচ গায়ে লাগলে মনে হয় যেন আশপাশে কোথাও বড় আগুন লেগেছে। বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টাতেই পথঘাট প্রায় ফাঁকা। বাঁকুড়া কিংবা পুরুলিয়া দুই জেলার গাঁ থেকে শহর সর্বত্র একই খাঁ খাঁ ছবি।

পুরুলিয়া জেলা আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, মঙ্গলবার পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বস্তুত এ বার গরমে এই জেলায় সব থেকে বেশি গরম পড়েছিল ১ মে, সে দিন তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২.৭ ডিগ্রি। পরের দিনই প্রায় গোটা জেলা জুড়ে কালবৈশাখী এসে তাপমাত্রার পারদ নামিয়ে দিয়ে যায়। তাতে দিন দুয়েকের স্বস্তি মিললেও ফের পারদ ধাপে ধাপে চড়তে শুরু করে। গত শুক্রবার তাপমাত্রার পারদ ৪০.৫ ডিগ্রিতে উঠলেও শনিবার দিনভর আকাশে মেঘলা ভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে ৩৪.৫ ডিগ্রি হয়। মানুষজন আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন কালবৈশাখীর আশায়। সেই আশায় জল ঢেলে পরের দিন রবিবার তাপমাত্রা ফের উঠে যায় ৪০.২ ডিগ্রিতে। সোমবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাঁকুড়া জেলায় এ বার সব থেকে বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ এপ্রিল, ৪৪.৪ ডিগ্রি। তারপর ঝড়-বৃষ্টিতে ক’দিনের জন্য স্বস্তি মিললেও, ফের বাতাস তেতে উঠেছে।

গরমে তৃষ্ণা মেটাতে বরফ জলের দোকানে ভিড় বিষ্ণুপুরে।

ফলে রাস্তাঘাট মঙ্গলবার অনেকটাই ফাঁকা ছিল। দুপুরে বাসে-ট্রেনেও লোকজন কম ওঠে। যাঁরা বাইরে বেরিয়েছিলেন, তাঁরাও অনেকে দুপুরটা ছায়ায় কাটিয়েছেন। ভিড় ছিল ঠান্ডা পানীয়ের দোকানে, আর রেল স্টেশনের মতো ঠান্ডা পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে, সেই সব এলাকায়। পুরুলিয়া জেলার বড়টাঁড়, বলরামপুর, ঝালদা, চরলা, কাশীপুর, তালতলা, বোরো, উরমা, বান্দোয়ান, আদ্রা-সহ জেলার বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাটগুলিতেও গরমের প্রভাব পড়েছে। সপ্তাহে একদিন এই হাটগুলি বসে, দিনভর কেনাকাটা চলে। কিন্তু ক’দিন ধরে ওই সব হাট ফাঁকা ফাঁকা যাচ্ছে। পুরুলিয়া ২ ব্লকের টাটাড়ি গ্রামের মহম্মদ গিয়াসউদ্দিন, শেখ সিরাজ অন্যকে হাট থেকে বাছাই করে গবাদি পশু কিনিয়ে দিয়ে কিছু রোজগার করেন। কিন্তু এখন ক্রেতা না আসায় তাঁরা হাট থেকে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

বাঁকুড়া শহরের ব্যস্ততম এলাকা কলেজ মোড়, মাচানতলা, তামলিবাঁধ, ভৈরবস্থান, গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড, নতুনগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার রাস্তা বেলা ১১টাতেই কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চলাচল করলেও সে ভাবে পথচারীদের ভিড় নেই। অন্য দিন দুপুর ১টাতেও জনবহুল থাকে শহরের ওই সব এলাকা। সাইকেল, রিকশা, ছোট গাড়ির পাশ কাটিয়ে হাঁটতে হিমশিম খেতে হয় পথচারীদের। এ দিন গরমের ঠেলায় পথচারীরা যেন উধাও হয়ে গিয়েছেন।

বাঁকুড়ায় পথচারীর হাত থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়া বোতলের জল খাচ্ছে হনুমান। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিষ্ণুপুর বা খাতড়া শহরেরও বিশেষ তফাত ছিল না। বেলা যত বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রোদের তেজ, ফাঁকা হয়েছে রাস্তাঘাট। দুপুর ১২টাতেই কিছু ব্যবসায়ী দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়েছেন। যাঁরা খদ্দেরের আশায় দোকান আঁকড়ে ছিলেন, তাঁদের অনেকে ফাঁকা দোকানে মাছি তাড়াতে তাড়াতে গরমের মুণ্ডপাত করেছেন।

কিন্তু অব্যাহতি পাননি ভোট গণনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মী-আধিকারিকরা। জেলার বিভিন্ন ব্লকের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খাতড়া মহকুমা এলাকার আধিকারিক ও কর্মীদের এ দিন বাঁকুড়া রবীন্দ্র ভবনে প্রশিক্ষণ নিতে যেতে হয়েছিল। জঙ্গলমহলের এক বিডিও বলেন, “এত দূর থেকে বাঁকুড়ায় ট্রেনিং নিতে গিয়ে আমরা প্রচন্ড গরমে যথেষ্ট হয়রান হলাম। কিন্তু ভোটের ‘ডিউটি’ বলে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bishnupur storm kalbaishakhi bankura purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE