Advertisement
E-Paper

নজরে পাড়ুই, আহ্বায়ক রেখে সংগঠন ঢেলে সাজছে তৃণমূল

পাড়ুই যেন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে তৃণমূলের! সেখানে বিজেপি-র উত্থানে ইতিমধ্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই পাড়ুইয়ে দলের সংগঠন মজবুত করতে নানা ‘পরিবর্তনে’র রাস্তা নিয়েছে জেলা তৃণমূল। কিছু দিন আগেই ডানা ছাঁটা হয়েছে ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের। শুধু মাত্র পাড়ুই এলাকার জন্যই আলাদা করে একটি থানা কমিটি গড়ে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১২

পাড়ুই যেন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে তৃণমূলের!

সেখানে বিজেপি-র উত্থানে ইতিমধ্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই পাড়ুইয়ে দলের সংগঠন মজবুত করতে নানা ‘পরিবর্তনে’র রাস্তা নিয়েছে জেলা তৃণমূল। কিছু দিন আগেই ডানা ছাঁটা হয়েছে ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের। শুধু মাত্র পাড়ুই এলাকার জন্যই আলাদা করে একটি থানা কমিটি গড়ে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল। এরই মধ্যে জেলায় একমাত্র পাড়ুইয়েরই আটটি অঞ্চলের জন্য দলের সভাপতি ও সম্পাদকদের মাথার উপরে এক জন করে আহ্বায়ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিল শাসক দল। বুধবারই যেমন পাড়ুই অঞ্চলের দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফার (যিনি সাগর ঘোষ হত্যা-সহ বহু ঘটনায় অভিযুক্ত) ডানা ছেঁটে সাত্তোর অঞ্চলের জন্য নতুন এক জনকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সংগঠনে এই ‘পরিবর্তনে’র কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি মুস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তৃণমূল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাড়ুই থানার আটটি অঞ্চলের নেতৃত্বকে নিয়ে আটটি পৃথক কমিটি গড়া হয়েছে। প্রতি অঞ্চল থেকে এক জন করে আহ্বায়ক সেই কমিটির মাথায় থাকবেন।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই সাত্তোর অঞ্চলে এক জনকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাতিকা অঞ্চলের জন্য কাকে আহ্বায়ক করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ঘটনা হল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধুষ্যিত পাড়ুইয়ের একটি বড় অংশেই শাসক দলের জনসমর্থনে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে খুব দ্রুত বিজেপি নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে। যার পরিণতিতে গত কয়েক মাসে পাড়ুই থানা এলাকায় দু’দলের মধ্যে একাধিক বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী, খুন হয়ে গিয়েছেন দু’দলেরই বেশ কয়েক জন কর্মী-সমর্থক। বস্তুত, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত যেখানে বিজেপি-র সংগঠন বলে কিছুই ছিল না, সেই জায়গায় পাড়ুই থানা এলাকার তৃণমূল প্রভাবিত দু’চারটি গ্রাম বাদ দিলে বহু গ্রামেই এখন পা রাখার জায়গা করে ফেলেছে বিজেপি। অভিযোগ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী কয়েক জন ছাড়া এলাকার অন্য কেউ ইন্দিরা আবাস, বার্ধক্যভাতা, বিধবাভাতা এবং ১০০ দিনের মতো বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। জেলা তৃণমূলের এক নেতা স্বীকার করে নিচ্ছেন, “পাড়ুইয়ে বিজেপি-র প্রভাব বেড়ে যাওয়ার পিছনে যত না রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণ, তার চেয়ে ঢের বেশি পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন গ্রামের মানুষের এই বঞ্চনা নিয়ে দলের একাংশের প্রতি অসন্তোষ।” এই বেগতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তার জেরেই পাড়ুইয়ে দলের সংগঠনে রদবদলের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবারই সাত্তোর অঞ্চলের সভাপতি লালু মোল্লা এবং সম্পাদক শেখ মুস্তফার মাথার উপরে দল এক আহ্বায়ককে বসিয়েছে। যে সিদ্ধান্তকে কার্যত মুস্তফার ক্ষমতা ছাটাই বলেই ব্যাখ্যা করছেন রাজনীতির কারবারিরা। আসলে সাম্প্রতিক কালে সাত্তোর এলাকায় দল পরিচালনা নিয়ে দলের অন্দরে ও বাইরে ক্ষোভ বাড়ছিল। পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি পদের দায়িত্ব পেয়েই মুস্তাক হোসেন তাই নড়েচড়ে বসেন। ক্ষমতায় থাকা আটটি অঞ্চলের নেতৃত্বে রদবদল করে সংগঠনকে ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হন। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “পাড়ুই এলাকায় হারানো জমি ফিরে পেতে কিছু অঞ্চল নেতৃত্বের ক্ষমতা হ্রাস করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ওই সব জায়গায় নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা নতুন মুখ চাইছেন। এমন মুখ, যাঁদের এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।” জানা গিয়েছে, দিন দু’য়েক আগে মুস্তাক কেন্দ্রডাঙাল হাইমাদ্রাসায় একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পাড়ুইয়ের আটটি অঞ্চলের নেতৃত্বকে ডাকা হয়। অঞ্চলগুলির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দলের অন্দরে এবং এলাকায় ক্ষোভ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই সাত্তোর অঞ্চলের সভাপতি লালু মোল্লা এবং সম্পাদক শেখ মুস্তফা-সহ ১০ সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। দেবগ্রামের বাসিন্দা কবীর মাস্টারকে সেই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ দিকে, দল তাঁর কোনও ক্ষমতা খর্ব করেনি বলেই দাবি করছেন শেখ মুস্তফা। তাঁর বক্তব্য, “সাংগঠনিক কাজকর্ম আরও জোরদার ভাবে করতে নবীন-প্রবীণ সবাইকে নিয়েই নতুন কমিটি কাজ করবে। এতে জনগণের কাজে বেশি করে পৌঁছনো যাবে। তা ছাড়া আমি তো আগের দায়িত্বে এখনও রয়েছি। তাই কী করে আমার ক্ষমতা হ্রাসের কথা বলা হচ্ছে, ঠিক বুঝতে পারছি না।” অন্য দিকে, অনুব্রত বলেন, “পাড়ুই থানা এলাকা নিয়ে আনন্দবাজার অযথা মাতামাতি করছে। ওই এলাকায় আমাদের সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।”

রাজ্যে শাসকদল তৃণমূলের এই নয়া চালকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “ওরা সংগঠনে যাই করুক না কেন, বাংলার মানুষ ওদের ধরে ফেলেছেন। সারদা-কাণ্ড মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। নতুন মুখ না পুরনো মুখ কমিটির মাথায় আহ্বায়ক বসাক আর যাই করুক, মুখ কি আর আছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের!” তাঁর কটাক্ষ, “তিন জন তো জেলে চলে গেলেন। আর এক জন বাকি রয়েছেন। এ বার কী হবে? এর উত্তর তো বাংলার মানুষকে দিতে হবে।”

mahendra jena parui tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy