Advertisement
০২ মে ২০২৪
রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতি

নতুন সভাপতি নির্বাচন নিয়েও দ্বন্দ্ব শাসকদলে

অনাস্থার জেরে নয়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইস্তফা দিয়েছেন বিএড প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু, সেই জায়গায় নতুন সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাইপুর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

অনাস্থার জেরে নয়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইস্তফা দিয়েছেন বিএড প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু, সেই জায়গায় নতুন সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতি। সভাপতি পদের জন্য সদস্যদের তরফে দু’জনের নাম জমা পড়ায় শেষে ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করতে হল। ১৮-১০ ব্যবধানে জিতে এই পঞ্চায়েত সমিতির নতুন সভাপতি হলেন তৃণমূলের রাইপুর ব্লক নেতা জগবন্ধু মাহাতোর অনুগামী পদ্মিণী মুর্মু। আর তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ভোটাভুটিতে অংশ নিলেন সিপিএমের দুই সদস্যও!

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে দলের বিভিন্ন কমিটি ভেঙে গিয়েছে। তার আগে জগবন্ধু মাহাতো রাইপুরের ব্লক সভাপতি ছিলেন। নতুন করে কমিটি না হলেও এখনও তিনিই মূলত দলের ব্লকের দায়িত্বে রয়েছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটের পর সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জগবন্ধুবাবুর অনুগামী সঞ্জয় হাঁসদা। পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক সঞ্জয়বাবু বিএড প্রশিক্ষণের জন্য সম্প্রতি সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর শূন্য পদ পূরণের জন্যই এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সভা ডাকা হয়। সেই সভায় পঞ্চায়েত সমিতির ২৯ জন সদস্যের মধ্যে একজন অনুপস্থিত ছিলেন। সভাপতি নির্বাচনের জন্য জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠী পদ্মিণী মুর্মুর নাম প্রস্তাব করতেই জেলা নেতা অনিল মাহাতোর গোষ্ঠীর তরফে রূপদাস মান্ডির নাম তোলা হয়। তার জেরে শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি হয়েছে। রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ২৯। এ দিনের সভায় ২৮ জন উপস্থিত ছিলেন। সকলেই ভোটাভুটিতে যোগ দেন। পদ্মিণী মুর্মু ১৮-১০ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।”

রাইপুরে জগবন্ধুবাবুর সঙ্গে দলের জেলা নেতা অনিল মাহাতোর বিরোধ সর্বজনবিদিত। গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে কলেজ ভোট, এমনকী সম্প্রতি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের অব্যবস্থার ঘটনাতেও এই বিরোধ প্রকাশ্যেই দেখা গিয়েছে। রাইপুর ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির ২৯টি আসনের মধ্যে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকে ২৩ জন প্রার্থী জিতেছেন। ৩টি আসনে জয়ী হন সিপিএমের প্রার্থীরা। বাকি আসনের মধ্যে সিপিএম সমর্থিত দুই নির্দল, ঝাড়খণ্ড পার্টির একজন প্রার্থী জয়ী হন। পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির গঠনের দিনেই এক নির্দল ও সিপিএমের এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন।

পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতার রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠীর সঙ্গে অনিলবাবুর গোষ্ঠীর বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতার দখল জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠীর হাতেই রয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও ভোটাভুটি এড়ানো যায়নি। এ দিনের ভোটাভুটির জন্য যুযুধান দুই পক্ষই আঙুল তুলেছেন একে অপরের দিকে। অনিলবাবুর অভিযোগ, “ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্যই জগবন্ধুবাবু নিজের দুন্দার পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নির্বাচিত পদ্মিণী মুর্মুকে সভাপতি করেছেন। এ জন্য তিনি সিপিএম, সিপিএম সমর্থিত নির্দল সদস্যদের সমর্থনও নিয়েছেন। সভাপতি কে হবেন তার জন্য কারও সঙ্গে কোন আলোচনাও করেননি জগবন্ধুবাবু।” অন্য দিকে, জগবন্ধুবাবুর পাল্টা দাবি, “গোপন ব্যালটে সমিতির সদস্যরা কে কাকে ভোট দিয়েছেন তা আমার জানা নেই। তবে সমিতির অধিকাংশ সদস্য পদ্মিণী মুর্মুকে সভাপতি করতে চেয়েছেন। দলের হুইপ অমান্য করে অনিল মাহাতোর লোকেরা পাল্টা প্রার্থী দেওয়ায় ভোটাভুটি হয়েছে। এটা মোটেও কাম্য ছিল না।”

সিপিএমের রাইপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক ধ্রুবলোচন মণ্ডল বলেন, “দলের দুই নির্বাচিত সদস্যকে ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ না করার জন্য বলা হয়েছিল। তার পরেও কেন তাঁরা ভোটাভুটিতে যোগ দেন তা জানতে চাওয়া হচ্ছে ওই দুই সদস্যের কাছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raipur panchayat samity tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE