বালিমাটি ফেলে উঁচু করা হচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদীর পাড়। তিলপাড়া পঞ্চায়েতের অজয়পুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর বর্ষায় বাঁধ উপচে নদীর জলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীর জলের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে একশো দিন কাজের প্রকল্পে পাড় উঁচু করার কাজ শুরু হয়েছে। সিউড়ির তিলপাড়া পঞ্চায়েতের ময়ূরাক্ষী নদী ঘেঁষা অজয়পুর গ্রামের নদীবাঁধ তৈরির কাজ করছেন এলাকার ২৮২ জন জবকার্ডধারী পুরুষ ও মহিলা। কিন্তু কাজের মান নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কারণ, পঞ্চায়েত ও গ্রামবাসীদের কাছ থেকে যেটুকু জানা গিয়েছে, নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় এক ফসলি বেশ কিছু জমির ফসল নষ্ট হয় প্রতিবছরই। সেই ফসল যাতে না নষ্ট হয়, সেই উদ্দেশ্যেই নদীগর্ভ থেকে বালিমাটি তুলে পাড়ে ফেলা হচ্ছে। দিন কয়েক আগে টানা সাত দিন কাজ করেছেন জবকার্ডধারীরা। এখন চলছে দ্বিতীয় দফার কাজ। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন নদী গর্ভের বালি মাটির বাঁধ কি আদৌ টিকবে? দ্বিতীয়ত একশো দিন কাজের প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ তৈরির উদ্দেশ্যেই কি টাকা খরচ হচ্ছে, না যেমন করেই হোক ওই প্রকল্পের টাকা ব্যয় করতে হবে সেটাই আসল উদ্দেশ্য প্রশাসনের? যাঁরা বাঁধের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কেউ কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, “বর্ষায় এই বাঁধ টিকে থাকা সমস্যার। আরও একটু ভাল ভাবে বাঁধ তৈরি হলে তবেই আসল উদ্দেশ্য পূরণ হত।” তবে কাজের সুপারভাইজার ক্ষিতীশ সাহা বা তিলপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান আতাউল রহমান বলছেন, “শুধুমাত্র মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করেই কাজ শেষ করা হবে না। এর পরে সরগাছ (এক ধরনের বড় ঘাস) লাগিয়ে দেওয়া হবে। যাতে বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হয়।” সিউড়ি ১-এর বিডিও মুনমুন ঘোষ অবশ্য বলছেন, “ঠিক কী ভাবে কাজ হচ্ছে তা আমার দেখা হয়নি। দেখে এই বিষয়ে মন্তব্য করব।” একই বক্তব্য সেচ বিভাগের আধিকারিকদেরও।
তবে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একশো দিন কাজ প্রকল্পে শুধু একটিমাত্র পঞ্চায়েতের মাটিকাটার কাজ নয়, স্থায়ী সম্পদ তৈরির যে ধারণা সেটা অনেকাংশেই পূরণ হয় না। এক একটি পঞ্চায়েত এলাকায় বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার মাটি কাটার কাজ হয়। যেগুলির বেশির ভাগই পুকুর খনন বা পুকুর সংস্কারের মতো কাজ। খোঁজ নিলে দেখা যাবে শুধু মাত্র মাটি চেছে বা সামান্য কেটে সেই মাটি পাড়ে জড়ো করে পাশে রাখা হয়েছে। বর্ষায় সেই মাটি ধুয়ে আবার পুকুরে নেমে আসবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পে যে কয়েকশো কোটি টাকার মাটি কাটার কাজ হয়েছে, সেই কাজ ঠিক মতো হলে আমরা এখন কৃষি জমির বদলে চারদিকে শুধু পুকুর দেখতাম।” স্বাভাবিক ভাবেই অজয়পুর গ্রামের নদীবাঁধের এই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বাঁধ মজবুত করার জন্য যে সর গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক সুবিমল মণ্ডল বলেন, “ভূমিক্ষয় রোধ করার ক্ষেত্রে এই গাছের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। তবে এই গাছ কালবৈশাখীর আগে লাগিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়। যাতে ঠিক মতো শিকড় ছাড়াতে পারে। তবে আরও একটা উপায় আছে, মাটি সুদ্ধ ঘাস বসিয়ে দিতে পারলে ভাল। একই রকম কাজ হয়, ভেটিভার ঘাস ব্যবহার করলে।” কৃষি দফতরের কর্তাদের কথায়, “নামেই বালির বাঁধ। যাই লাগানো হোক, মাটি শক্ত হতে অন্তত একটা বছর সময় লাগবে।” স্বাভাবিক ভাবেই এই বাঁধের কাজ এলাকার মানুষের কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy