Advertisement
১০ জুন ২০২৪

নবান্নে প্রাচীন যাত্রা উত্‌সবে মাতে গুগ

নবান্ন শব্দের মধ্যেই নতুন অন্নের অর্থ। গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে, নতুন ধান তোলার উত্‌সব। অগ্রহায়নের শুরু থেকেই তাই বীরভূমের গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্ন উত্‌সবের মরশুম।

ধান নিয়ে বাড়ির পথে। রামপুরহাটের বাতাসপুরে। ছবি: অনির্বাণ সেন।

ধান নিয়ে বাড়ির পথে। রামপুরহাটের বাতাসপুরে। ছবি: অনির্বাণ সেন।

অরুণ মুখোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

নবান্ন শব্দের মধ্যেই নতুন অন্নের অর্থ। গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে, নতুন ধান তোলার উত্‌সব। অগ্রহায়নের শুরু থেকেই তাই বীরভূমের গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্ন উত্‌সবের মরশুম।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে নবান্নও একটি। ফি বছর বাঙালি অগ্রহায়নের কোনও একটি দিন মেতে ওঠে নতুন ধান ঘরে তোলার অনুষ্ঠানে। এক একটি গ্রামে নবান্ন পালিত হয় এক একটি দিনে। বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় নতুন ধানের চালের গুড়ি এবং বিভিন্ন মিষ্টি সহযোগে এক ধরনের প্রসাদ।

সব গ্রামেই যে একইরকম রীতি মেনে নবান্ন উত্‌সব পালিত হয়, তেমন নয়। কোথাও কোথাও, নতুন ধানের চালের গুড়ি এবং বিভিন্ন মিষ্টি প্রসাদ অন্নপূর্ণা ও শিবকে উদ্দেশ্যে করে উত্‌সর্গ করে, পরে গ্রামবাসীদের মধ্যে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের কথায়, সেই রাতে অনেকেই নতুন আতপ চাল, একটুকুর সোনা, একটুকুর রুপো, একটি রেকাবির মধ্যে রেখে প্রসাদ সামগ্রী ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলতে থাকেন, “নতুন বাঁধি, পুরনো খাই, তাই খেতে খেতে যেন জন্ম যাই।/ নতুন বস্ত্র পুরনো অন্ন, তাই খাই যেন জন্ম জন্ম।”

নবান্নের সময় দাঁতে নতুন চাল কাটার কথা মনে করিয়ে দিয়ে নতুনগ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব ঘোষ, বোলপুর কাছারিপট্টির বাসিন্দা সুদীপ মণ্ডল বলেন, গুগ গ্রামের বাসিন্দা চিরঞ্জিত্‌ মণ্ডলরা জানান, এখনও নবান্নে দাঁতে নতুন ধানের চাল কাটি। অন্য উত্‌সবের মতো আমাদের কাছে, এটিও একটি বড় উত্‌সব। বীরভূমে বহু গ্রামে নবান্ন উত্‌সবকে কেন্দ্র করে এই প্রথা চালু রয়েছে।

কোথাও কোথাও নবান্নের সময় সাংস্কৃতিক উত্‌সবও হয়ে থাকে। রামপুরহাট ১ নম্বার ব্লকে কাস্টগড়া পঞ্চায়েতের গুগ গ্রামে যেমন নবান্ন মানেই কয়েক দিন ধরে যাত্রাপালার অনুষ্ঠান। গ্রামবাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে এই যাত্রার অনুষ্ঠান করে আসছেন।

এ বছর শতবর্ষ অতিক্রম করছে ওই যাত্রা উত্‌সব। সে নিয়েই মেতেছেন গ্রামবাসী থেকে এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। স্থানীয় চিকিত্‌সক প্রসেনজিত্‌ মণ্ডল বলেন, “আমি অত্যন্ত ছেলে বেলায়, যাদের যাত্রা অভিনয় দেখেছি, তাঁরা অনেকেই প্রয়াত। তবে যে কয়েক জন রয়েছেন, যেমন বঙ্কিম বিহারি রায়, অশোক মণ্ডল, দেব নারায়ণ মণ্ডলরা এই বছর বেশ কয়েক বছর পর নতুন করে চরম উত্‌সাহের সঙ্গে যাত্রাভিনয় করছেন। এটা আমাদের খুব ভাল লাগছে।”

গুগ গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নবান্ন উত্‌সব শুরু হবে ৯ ডিসেম্বর। গ্রামের প্রায় ৩০০টি বাড়ি ওই নবান্ন উত্‌সব পালন করছেন নিজেদের বাড়িতে বাড়িতে। এর মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনও রয়েছেন বেশ কিছু।

নবান্ন উত্‌সব উপলক্ষে গ্রামের পারিবারিক ও বারোয়ারি অন্নপূর্ণা ও শিবের মূর্তি তৈরি করে প্রায় ৩০টি মতো পুজো হবে এ বার। যাত্রাপালা চলবে ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর তিন দিন পর্যন্ত। যাত্রা নিয়ে এই প্রজন্মও এখন থেকেই নানা পরিকল্পনা করছে। কে কোন দায়িত্ব পালন করবে, সে সব নিয়েও মহড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈঠক চলছে তাঁদের মধ্যে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ বার ঐতিহাসিক পালা হবে এক দিন এবং সামাজিক পালা হবে দু’দিন ধরে। সারা রাত ধরে ওই যাত্রাপালা দেখতে, কাষ্ঠগড়া ছাড়াও খরুণ ও বোনহাট পঞ্চায়েতের প্রায় ৩৬টি গ্রামের মানুষ হাজির হন। স্থানীয় বঙ্কিম বিহারি রায়, অশোক মণ্ডলেরা বলেন, “যাত্রা এখনও গ্রামে খুবই জনপ্রিয়। নবান্নে এখানকার যাত্রার চল নতুন নয়। আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ ভেঙে পড়েন যাত্রা দেখতে। দিন কয়েক আগে থেকেই তার প্রচার চলে। নবান্ন তাই যাত্রারও উত্‌সব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nabanna yatra utsav arun mukhopadhay rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE