Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা কাশীপুরে

‘অনাস্থা-রোগ’ এ বার কাশীপুরেও। রঘুনাথপুরের মতোই কাশীপুর ব্লকের সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন তৃণমূলের সদস্যেরাই! আজ, মঙ্গলবার এই অনাস্থা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে তলবি সভা ডেকেছে প্রশাসন। তবে, এই ব্লকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া সোমবার দাবি করেছেন, সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতের অনাস্থা এ দিনই প্রত্যাহার করা হয়েছে। যে সদস্যেরা প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন, তাঁরা ব্লক প্রশাসনকে তা প্রত্যাহারের বিষয়ে লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩৫
Share: Save:

‘অনাস্থা-রোগ’ এ বার কাশীপুরেও। রঘুনাথপুরের মতোই কাশীপুর ব্লকের সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন তৃণমূলের সদস্যেরাই!

আজ, মঙ্গলবার এই অনাস্থা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে তলবি সভা ডেকেছে প্রশাসন। তবে, এই ব্লকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া সোমবার দাবি করেছেন, সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতের অনাস্থা এ দিনই প্রত্যাহার করা হয়েছে। যে সদস্যেরা প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন, তাঁরা ব্লক প্রশাসনকে তা প্রত্যাহারের বিষয়ে লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছেন। সৌমেনবাবু বলেন, “বিধায়কের নির্দেশে অনাস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের দলের যে পাঁচ জন সদস্য অনাস্থা এনেছিলেন, মঙ্গলবারের তলবি সভায় তাঁদের অনুপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ওই পাঁচ জন অনুপস্থিত থাকলে এ যাত্রা গদি বেঁচে যাবে তৃণমূল প্রধানের।

কাশীপুরের ক্ষেত্রে ব্লক নেতৃত্ব এবং স্থানীয় বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার হস্তক্ষেপে হয়তো ঘরোয়া কোন্দল শেষ পর্যন্ত এড়াতে পারবে শাসকদল। কিন্তু, রঘুনাথপুরে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সোমবার রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও সর্বসম্মত ভাবে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন করাতে পারল না তৃণমূল। দলীয় সদস্যদের আনা অনাস্থাতেই সম্প্রতি অপসারিত হয়েছিলেন কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তী। সোমবার তিনিই ফের কর্মাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু, তাঁকে সমর্থন জানাননি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দুই সদস্য। বিডিও (রঘুনাথপুর ১) সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের স্থায়ী সমিতির পাঁচ সদস্যের সকলেই এ দিন উপস্থিত থাকলেও দুই সদস্য নির্বাচন শুরুর আগেই সভা থেকে বেরিয়ে যান। বাকি তিন জন উপস্থিত থাকায় কোরাম গঠিত হয়েছে। কনিকাদেবীই ফের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, কণিকাদেবীকে কর্মাধ্যক্ষ পদে ফের নির্বাচিত করতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে। এই স্থায়ী সমিতির পাঁচ সদস্যের মধ্যে দু’জন বর্তমানে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর। দুই সদস্য আবার সদ্য-অপসারিত তৃণমূল নেতা প্রদীপ মাজির অনুগামী। ফলে স্থানীয় সমিতির বাকি এক সদস্যের সমর্থন পাওয়া নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ওই সদেস্যের সমর্থন কনিকাদেবীর পক্ষেই যাচ্ছে দেখে সভা শুরুর মুখেই বেরিয়ে যান প্রদীপবাবুর দুই অনুগামী। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের তৃণমূলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, “যে দুই সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কণিকাদেবীকে সমর্থন করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অন্য দিকে, কাশীপুরের সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে থাকলেও প্রধান সুচিত্রা সহিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন দলেরই পাঁচ সদস্য। এই পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ছ’টি। দু’টি আসন ‘সংগ্রামী মহাজোট’-এর। বাকি দু’টি বামফ্রন্টের। তৃণমূল সূত্রের থবর, পঞ্চায়েত পরিচালনা নিয়ে দলেরই নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে পঞ্চায়েত প্রধানের। তারই জেরে সুচিত্রাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন দলীয় সদস্যেরা। সুচিত্রাদেবীর সমর্থনে রয়েছে ‘সংগ্রামী মহাজোট’। যে জোট আবার তৈরি হয়েছিল তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী, এসইউসি এবং ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চাকে নিয়ে। অনাস্থায় তৃণমূলের প্রধানের পক্ষেই বামফ্রন্ট সমর্থন জানাতে পারে, এমন সম্ভবনাও তৈরি হয়েছিল।

সদস্য সংখ্যার নিরিখে অনাস্থা এনে প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া না-ও সম্ভব হতে পারে, সেটা বুঝেই পিছু হটেছে তৃণমূল। যদিও কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেনবাবুর দাবি, “ওই পঞ্চায়েতে আমাদের সদস্যদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই অনাস্থা প্রত্যাহার করা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE