Advertisement
E-Paper

প্রধান হারলেন দলেরই আনা অনাস্থায়

দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ। পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ডাকা সভায় অপসারিত হলেন দলের পঞ্চায়েত প্রধান। ওই সভা বাতিল করে নতুন করে সভা ডাকার দাবিতে তৃণমূলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতে ঘেরাও হতে হল বিডিও-সহ প্রশাসনের কর্তাদের। শেষ পর্যন্ত পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১

দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ। পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ডাকা সভায় অপসারিত হলেন দলের পঞ্চায়েত প্রধান। ওই সভা বাতিল করে নতুন করে সভা ডাকার দাবিতে তৃণমূলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতে ঘেরাও হতে হল বিডিও-সহ প্রশাসনের কর্তাদের। শেষ পর্যন্ত পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রাম পঞ্চায়েতে। প্রশাসনের কর্তাদের ঘেরাও করা হয়েছিল ওই ব্লকের তৃণমূল নেতা প্রদীপ মাজির নেতৃত্বে। অনাস্থা থেকে শুরু করে এ দিনের গণ্ডগোলগোটা ঘটনায় তৃণমূলের দ্বন্দ্বই ফের সামনে এসেছে। বস্তুত, শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না রঘুনাথপুরে। কড়া হাতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের তেমন উদ্যোগ চোখে না পড়ায় এলাকার নিচুতলার দলীয় কর্মীদের একটা বড় অংশ। অথচ পাশের জেলা বাঁকুড়ায় বারবার খোদ জেলা সভাধিপতি এই ধরনের দলীয় দ্বন্দ্ব বন্ধ করতে কড়া বার্তা দিচ্ছেন। বুধবার দলের এক বৈঠকে এ ভাবে দলেরই প্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলে ‘দল থেকে বহিষ্কার’ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী।

রঘুনাথপুর ১ ব্লকে অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তৃণমূল পরিচালিত তিনটি পঞ্চায়েতের প্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন দলেরই একাংশ। বৃহস্পতিবার ছিল বেড়ো পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সভা। নিয়ম অনুযায়ী, এই সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন তাঁর পক্ষে রয়েছে কি না, তা প্রমাণ করতে হয় পঞ্চায়েত প্রধানকে। তাতে ব্যর্থ হলে নিয়ম অনুযায়ী অপসারিত হবেন প্রধান। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছ, বেড়ো পঞ্চায়েতে মোট ১০ জন সদস্য। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের দুই এবং সিপিএমের চার---মোট ছ’জন সদস্য অনাস্থা এনেছিলেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান চম্পা বাউরির বিরুদ্ধে। এ দিনের আস্থাভোটে উপস্থিত হয়েছিলেন অনাস্থা আনা ছয় সদস্যই। কিন্তু, আসেননি প্রধান-সহ তৃণমূলের বাকি চার জন। ব্লকের এপিও-কে সভার প্রিসাইডিং অফিসার করে পাঠানো হয়েছিল বেড়ো পঞ্চায়েতে। যেহেতু দশ সদস্যর মধ্যে ছ’জন উপস্থিত (অর্ধেকের বেশি) হয়েছিলেন, তাই অনাস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং ছ’জন সদস্যই প্রধানকে অপসারণের পক্ষে মত দেন।

এর পরেই ঝামেলার সূত্রপাত। আস্থাভোট উপলক্ষে দলবল নিয়ে এলাকায় হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা প্রদীপ মাজি। তাঁরা অভিযোগ করেন, ব্লক প্রশাসনই তাঁদের চার সদস্যকে (প্রধান এবং বাকি তিন তৃণমূল সদস্য) সভায় ঢুকতে দেয়নি। ওই অভিযোগ তুলে বেলা ১২টা থেকে পঞ্চায়েতের ভিতরে থাকা সরকারী কর্মী এবং অনাস্থা প্রস্তাব আনা ছয় সদস্যকে কার্যত আটকে রেখেছিলেন তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর লোকজন। খবর পেয়ে রঘুনাথপুর ১-এর বিডিও সুনীতি গুছাইত এবং রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত যান ওই পঞ্চায়েতে। তাঁরাও ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। ঘণ্টা দুয়েক তাঁদের ঘেরাও করে রাখেন তৃণমূলের একাংশ। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় এ দিন প্রথম থেকেই রঘুনাথপুর থানার ওসি-র নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী পঞ্চায়েতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, তৃণমূলের লোকজন বেশি সংখ্যায় উপস্থিত হওয়ায় দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে বেড়ো যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত এবং সিআই সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে প্রদীপবাবুদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে, এই মর্মে আশ্বাস দেওয়ার পরে ঘেরাও মুক্ত হন প্রশাসনের কর্তারা।

প্রদীপবাবুর দাবি, “এ দিন বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চায়েতে অনাস্থা নিয়ে সভার সময় ছিল। আমাদের প্রধান-সহ বাকি চার সদস্য পঞ্চায়েতে ঢুকতে গেলে তাঁদের আটকে দেন প্রশাসনের লোকজন। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসনের উপস্থিতি সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের ভিতরে ঢুকেছিলেন সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী, যিনি পুরোপুরি বহিরাগত। তাই আমরা দাবি করেছি, এই অনাস্থা অবৈধ। এ দিনের সভা বাতিল করে নতুন করে সভা ডাকতে হবে।” তিনি জানান, অবৈধভাবে অনাস্থা নিয়ে সভা হয়েছে, এই মর্মে তাঁরা মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রশাসনের পাল্টা দাবি, কাউকেই পঞ্চায়েতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়নি। ওই চার জন সদস্য সভার নির্ধারিত সময়ে এসে উপস্থিতই হননি।

প্রদীপবাবুরা এই সভাকে অবৈধ বলে দাবি করলেও প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিনের সভা নিয়ম মেনেই হয়েছে। বিডিও বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী এ দিনের অনাস্থা স্থগিত করা সম্ভব নয়। কারণ, পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সভায় উপস্থিত হয়ে কোরাম গঠন করেছেন। এবং উপস্থিত সমস্ত সদস্যই অনাস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।” তাহলে মহকুমাশাসকের দফতরে সভা ডাকার প্রয়োজন পড়ল কেন? বিডিও জানান, যেহেতু চার জন সদস্য একটা অভিযোগ তুলেছেন, তাই বিশদে আলোচনার জন্য সকলকে ডেকেছেন মহকুমাশাসক। আলোচনার ফলাফল তিন দিনের মধ্যে সব পক্ষকেই জানিয়ে দেওয়া হবে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “প্রশাসনের আধিকারিকদের ঘেরাও করে বিক্ষোভের ঘটনা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। বেড়োয় ঠিক কী হয়েছে, তা দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখা হবে।”

raghunathpur panchayat tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy