Advertisement
E-Paper

পুলিশ নেই, অবরোধ তুললেন নেতা

দলীয় নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করায় ক্ষুব্ধ অনুগামীদের পথ অবরোধ। আর প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে চলা সেই অবরোধে তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত অচল করে রাখলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। পাশাপাশি স্থানীয় স্কুল, ব্যাঙ্ক, দোকান এবং বাজার সবই ভয় দেখিয়ে জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৩
ফাঁড়ি হামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

ফাঁড়ি হামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

দলীয় নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করায় ক্ষুব্ধ অনুগামীদের পথ অবরোধ। আর প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে চলা সেই অবরোধে তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত অচল করে রাখলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। পাশাপাশি স্থানীয় স্কুল, ব্যাঙ্ক, দোকান এবং বাজার সবই ভয় দেখিয়ে জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। কিন্তু এত কিছুতেও দেখা মেলেনি আইন-শৃঙ্খলার রক্ষক পুলিশেরই। শেষমেশ তৃণমূল নেতার হস্তক্ষেপে আন্দোলন প্রত্যাহার হওয়ায় দু’দিনের ওই অঘোষিত বন্‌ধ থেকে মুক্তি পেলেন খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানার বড়রা, বাবুইজোড় ও পারশুণ্ডি পঞ্চায়েত এলাকার দুর্ভোগে পড়া কয়েক হাজার বাসিন্দা।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় লোকপুর ফাঁড়িতে ভাঙচুর ও ইনচার্জকে মারধরের ঘটনায় বুধবার দুপুরে পুলিশ বোলপুর থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা, বড়রা গ্রামেরই বাসিন্দা উজ্জ্বল হক কাদেরীকে গ্রেফতার করে। খবর পেতেই খয়রাশোলে বাবুইডোড়-সিউড়ি রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করেন ধৃত নেতার অনুগামী ও পরিবারের সদস্যেরা। বন্ধ করে দেওয়া হয় স্থানীয় বড়রা বাজারও। বৃহস্পতিবারও অবস্থা পাল্টায়নি। নেতাকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে এ দিনও দিনভর অনুগামীদের বিক্ষোভ, অবরোধ জারি থাকে। অবরোধের জেরে এ দিনও সকাল থেকে বাবুইজোড়-সিউড়ি এবং বাবুইজোড়-আসানসোল রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকে। তিনটি পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেও অবরোধ তুলতে বা বাজার খোলাতে এলাকায় পুলিশ যায়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক পুলিশ কর্তা বলছেন, “কেন যাবে বলুন তো? শাসক দলের অবরোধ তুলতে গিয়ে আরও এক জন অমিত চক্রবর্তী হওয়ার ইচ্ছে কারও নেই। এক জন সাহসী অফিসারের খুনের পরে পুলিশের মনোবল কমেছে।” তাঁর দাবি, শাসক দলের নেতাকে গ্রেফতার করে ইতিমধ্যেই এলাকার পুলিশ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় গেলে ফের বড় কোনও অঘটন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে অবরোধকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ফের মামলা রুজু করার পথে হাঁটাই শ্রেয় বলে পুলিশের ওই কর্তা মনে করছেন।

ঘটনা হল, গত ১৯ জুলাই খয়রাশোলের লোকপুর পঞ্চায়েতের কড়িধ্যা গ্রামে পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী। সেই গণ্ডগোলের রেশ গড়ায় লোকপুরের পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত। এক পক্ষের অভিযোগ পুলিশ নিচ্ছে না, এই অভিযোগে তুলে ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে এক গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা বলে পুলিশের দাবি। সে দিন তৃণমূলের ওই বাহিনী ফাঁড়ি তছনছ করার পাশাপাশি ফাঁড়ি ইনচার্জকেও মারধর করে। ভাঙুচুর চালানো হয় ফাঁড়িতে থাকা পুলিশের একটি গাড়িতেও। ঘটনায় শাসক দলের ওই গোষ্ঠীর ২৯ জন নেতা-একাধিক ধারায় পুলিশ মামলা রুজু করে। তাতেই অন্যতম অভিযুক্ত হলেন দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী উজ্জ্বল হক কাদেরী।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পরে প্রায় দু’ সপ্তাহ ধরে এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করেনি। কিন্তু সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে বোমায় জখম দুবরাজপুরের ‘টাউনবাবু’ অমিত চক্রবর্তীর মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশকে তত্‌পর হতে দেখা যায়। তার পরেই নানা মহলে প্রশ্ন উথতে শুরু করে, এত দিন তা হলে কেন পুলিশ হাত গুটিয়ে বসেছিল? কেনই বা এখনও অমিতবাবুর উপরে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ আলিমকে পুলিশ এখনও ধরতে পারল না? জেলার নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, এ ক্ষেত্রে যে সক্রিয়তা পুলিশকর্তারা দেখালেন, তা তো নিহত সাব-ইনস্পেক্টরের উপরে হামলার ঘটনার ক্ষেত্রেও দেখাতে পারতেন। তা হলে নিচুতলার পুলিশের মধ্যে মনোবলের অভাব তৈরি হত না। যদিও ওই তৃণমূল নেতার গ্রেফতারির পরেও যে পুলিশের মধ্যে খুব একটা মনোবল ফেরেনি, তার প্রমাণ বড়রার ঘটনায়। দু’দিনই সেখানে পুলিশের দেখা মেলেনি। এ দিন দুপুরে অলোকবাবু অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশকে অবরোধ তুলতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অবরোধ কেন তোলা হয়নি খোঁজ নিচ্ছি।” বিকেলেই অবশ্য তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেন।

গোটা ঘটনায় খয়রাশোলে তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই প্রকাশ্যে এসেছে। বুধবারের মতো এ দিনও অবরোধের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় ধৃত নেতার বোন তথা বড়রা পঞ্চায়েতের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য কেনিজ রাসেদকে। তাঁর স্পষ্ট দাবি, “দাদাকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। বড়রা গ্রামেই শেখ জয়নাল(খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য), সেখ খিলাফতের মতো আরও অনেকের নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কই তাঁদের তো গ্রেফতার করা হচ্ছে না!” তিনি আরও দাবি করেন, জোর করে বা ভয় দেখিয়ে স্কুল, ব্যাঙ্ক বা বাজার বন্ধ করানো হয়নি। এলাকার জনপ্রিয় নেতার গ্রেফতারির বিরুদ্ধে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ করেছেন বলেই তাঁর দাবি। এ দিনই ধৃত নেতাকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে দুবরাজপুর আদালত। আদালত চত্বরে উজ্জ্বলবাবু নিজেও অভিযোগ করেন, “পুলিশের সাহায্যে দলেরই অন্য গোষ্ঠীর নেতারা আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমি কিছু করিনি।” পরে মলয়বাবু অবশ্য বলেন, “জেলা সভাপতির নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঁদের কোনও অভিযোগ থাকলে, তা দলীয় ভাবে জানাতে বলেছি।”

এ দিকে, এলাকায় শেখ জয়নাল অবশ্য অশোক মুখোপাধ্যায় বিরোধী দলেরই প্রাক্তন সভাপতি নিহত অশোক গোষ্ঠীর অনুগামী বলেই পরিচিত। তাঁর মন্তব্য, “আইন চোখে সবাই সমান। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। কিন্তু এ ভাবে দু’দিন ধরে ভয় দেখিয়ে এলাকায় অঘোষিত বন্‌ধ করা মোটেও কোনও ভাল কাজ নয়। এতে সাধারণ মানুষই অসুবিধায় পড়েছেন।” ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন ওই গোষ্ঠীর নেতা নিহত অশোকবাবুর ভাই দীপক ঘোষ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এই অন্যায় চলতে দেওয়া যায় না। আমরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করব, তার পরে জোর করে জনজীবন স্তব্ধও করে দেব, এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর বিরুদ্ধে দলে প্রতিবাদ জানাব।”

interference of tmc leader roll back strike dubrajpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy