Advertisement
E-Paper

পট নিয়ে দিল্লি গেলেন শিল্পী বাউল

পেশা বলতে নিজের সামান্য জমিতে চাষ। তাতেও সংসার চলে না বলে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ভিক্ষে করেন। কিন্তু দারিদ্রের মধ্যেও রং-তুলি ছাড়েননি মাজরামুড়ার বাউল চিত্রকর। পেট ভরানোর দু’টো সংস্থান হলেই পট আর রং-তুলি নিয়ে তিনি বসে পড়েন।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫১
নিজের বাড়িতে শিল্পী বাউল চিত্রকর। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

নিজের বাড়িতে শিল্পী বাউল চিত্রকর। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

পেশা বলতে নিজের সামান্য জমিতে চাষ। তাতেও সংসার চলে না বলে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ভিক্ষে করেন। কিন্তু দারিদ্রের মধ্যেও রং-তুলি ছাড়েননি মাজরামুড়ার বাউল চিত্রকর। পেট ভরানোর দু’টো সংস্থান হলেই পট আর রং-তুলি নিয়ে তিনি বসে পড়েন। এ গাঁয়ের অনেকেই বাউলবাবুর মতো পটুয়া সম্প্রদায়ের। তবে দিল্লি থেকে ডাক পেয়ে এখন বাউলবাবুই এলাকায় সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বস্ত্র মন্ত্রালয়ের অধীন ‘ন্যাশনাল হ্যান্ডিক্রাফটস এন্ড হ্যান্ডলুমস মিউজিয়াম’ একমাসের শিল্প প্রদর্শনী ও বিক্রির আয়োজন করেছে। তাতে সারা দেশের কয়েকজন বাছাই শিল্পীর মধ্যে বাউলবাবু নির্বাচিত হয়েছেন।

কিন্তু দিল্লির ওই ডাকই দেখিয়ে দিল, বাউলবাবুর মতো এ জেলার কত শিল্পী এখনও শিল্পী-পরিচয়পত্র পাননি। যা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দিল্লি যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে কাটালেন ওই শিল্পী। আর তাঁর পরিচয়পত্র জোগাড় করে দিতে দৌড়ঝাঁপ করতে হল জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিক-কর্মীদের। শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে পরিচয়পত্র তৈরি করে এনে তাঁকে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই বুধবার দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বাউলবাবু। পুরুলিয়া জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অভিজিত কর বলেন, “কলকাতায় কর্মী পাঠিয়ে বিশেষ ভাবে তড়িতড়ি বাউলবাবুর পরিচয়পত্র তৈরি করিয়েছি। এবং দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দিয়েছি।”

যে গ্রামের ত্রিসীমানা দিয়ে সারাদিন একটা-দু’টো বাস বা ছোট গাড়িও চলে না সেখান থেকে সোজা প্রগতি ময়দান যাত্রার রহস্য কী? ভাঙলেন বাউলবাবু নিজেই। তিনি জানান, চলতি বছরে কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার অনুরোধে কয়েকটি ছবি এঁকেছিলেন। সেই ছবিগুলো দিয়ে ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল পঞ্চায়েত সমিতি। সেই সূত্রেই ডাক মিলেছে। সৌমেনবাবুর কথায়, “এই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই পটুয়া সম্প্রদায়ের। তাঁদের মূল বৃত্তি ভিক্ষা। কিন্তু পূর্বপুরুষদের নেশা ছবি আঁকা এঁরা এখনও ধরে রেখেছেন।” তিনি জানান, এঁদের পূর্বপুরুষরা আগে পটে ছবি এঁকে গান গেয়ে গেয়ে ভিক্ষা করতেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম পট আঁকায় সে ভাবে উত্‌সাহী নয়। তাঁরা অন্য কাজের দিকে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, “চিত্রকর সম্প্রদায়ের এ রকম একটা শিল্প যাতে বেঁচে থাকে, তাই আমরা এঁদের আঁকা পটগুলি থেকে ১২টি পট বেছে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলাম। সেই ক্যালেন্ডারে বাউল চিত্রকরের আঁকা তিনটি পট ছিল। বিভিন্ন দফতরে এই ক্যালেন্ডার আমরা পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকেই বাউলবাবুর কাজ দেখে ‘ন্যাশনাল হ্যান্ডিক্র্যাফটস এন্ড হ্যান্ডলুমস মিউজিয়াম’ প্রগতি ময়দানের কর্মশালায় যোগ দিতে এই শিল্পীকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাঁর ডাক আসায় আমরা গর্বিত।”

বাউলবাবুর কাছে ক্যালভাস বলতে সস্তা সাদা কাগজ। চোখের সামনে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গাছের পাতা ঘষে, জলে ভিজিয়ে তৈরি করেন রং। অনেক সময় বাজার থেকেও কমদামি রং কিনে নেন। এ যাবত্‌ এ ভাবেই পটের রং তৈরি করেছেন প্রথাগত পদ্ধতিতে আঁকা না শেখা এই শিল্পী। ছাগল-ভেড়ার লোম কাঠির ডগায় গুঁজে তৈরি করেছেন তুলি। তাই এ ভাবে এঁকেও দেশের রাজধানীতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ডাক পেয়ে আপ্লুত বাউলবাবু।

কিন্তু ডাক পেলে কী হবে? বাউলবাবু পড়েছিলেন ঘোর সমস্যায়। ক’দিন আগে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়ির উঠোনে বসে আঁকছিলেন। বলছিলেন, “ওখানে পৌঁছনোর পরে গাড়ি ভাড়া দেবে বলেছে। কিন্তু টিকিট কাটব কী করে? টাকাই যে নেই। ওরা শিল্পীর সরকার প্রদত্ত পরিচয়পত্র নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু তাও তো আমি পাইনি। কী হবে?” সৌমেনবাবু জানান, পরে তাঁরাই টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা জেলা শিল্প দফতরের। পরিচয়পত্রের জন্য সৌমেনবাবু ওই দফতরকে জানান।

এতদিন পরিচয়পত্র দেওয়া যায়নি কেন? জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, “আমাদের লোকজন ওই গ্রামে যখন সমীক্ষায় গিয়েছিলেন, তখন বাউলবাবুর মতো অনেক শিল্পীকেই গ্রামে পাওয়া যায়নি। সে জন্য ওদের পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়নি। বাকিদেরও দেওয়া হবে।” পরে কেন সমীক্ষা করতে যাওয়া হয়নি। সদুত্তর মেলেনি।

pot chitra baul chitrakar delhi prashanta pal kashipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy