Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক

বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের পিটিয়ে ছাপ্পা

সিপিএমের সময়েও ভোটের দিন ছাপ্পা, রিগিংয়ের সাক্ষী থেকেছে সোনামুখী। কিন্তু সে সময়েও যে ঘটনা ঘটেনি, বুধবার লোকসভা নির্বাচনে তেমনই কাণ্ড ঘটার অভিযোগ উঠল বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সোনামুখী থানার সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের ২৭ নম্বর বুথে। শাসকদলের সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ওই বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ইভিএমে আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছাপ্পা ভোট মারলেন বলে অভিযোগ উঠল।

দীপালি সাহা

দীপালি সাহা

দেবব্রত দাস
সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০০:২৪
Share: Save:

সিপিএমের সময়েও ভোটের দিন ছাপ্পা, রিগিংয়ের সাক্ষী থেকেছে সোনামুখী। কিন্তু সে সময়েও যে ঘটনা ঘটেনি, বুধবার লোকসভা নির্বাচনে তেমনই কাণ্ড ঘটার অভিযোগ উঠল বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সোনামুখী থানার সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের ২৭ নম্বর বুথে।

শাসকদলের সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ওই বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ইভিএমে আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছাপ্পা ভোট মারলেন বলে অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় শাসকদলের সঙ্গে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

খবর পেয়ে ওই বুথে যান সোনামুখীর বিডিও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ভোটকর্মীদের মারধর করে ইভিএমে ছাপ্পা ভোট মার জন্য বিধায়ক ও তাঁর ২০ জন সঙ্গীর বিরুদ্ধে প্রিসাইডিং অফিসার সন্ধ্যায় থানায় এফআইআর করেছেন। ঘটনার পরে ওই বুথে পরে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে রির্পোট পাঠানো হয়েছে।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, সাহাপুরের ওই বুথে নিরাপত্তায় ছিলেন রাজ্য পুলিশের দুই সশস্ত্রকর্মী ও একজন লাঠিধারী এনভিএফ কর্মী। বিকেল ৪টে ২০ নাগাদ ওই বুথের ভিতরে তৃণমূল বিধায়ক দিপালী সাহা জনা কুড়ি যুবককে সঙ্গে নিয়ে ঢোকেন। অভিযোগ দীপালিদেবী গলা চড়িয়ে প্রিসাইডিং অফিসার শুখেন্দু রজকের সামনে গিয়ে জানতে চান, “কী ভাবে ভোট করছেন আপনারা? সব সিপিএমের দালাল। বেরিয়ে যান।” বুথের ভিতরের ছবি ভিডিও রেকর্ডিং করছিলেন কমিশনের নিযুক্ত ফটোগ্রাফার। বিধায়ক দৌড়ে গিয়ে ফটোগ্রাফারকে চড় মেরে তাঁর হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। প্রিসাইডিং অফিসারের দাবি, “বিধায়কের সঙ্গীরা আমাকে ও সঙ্গী তিন ভোটকর্মীকে চড়-থাপ্পড় মেরে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তারপরে বুথ থেকে বের করে দেয়। সেই সময়ে দরজার বাইরে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ কর্মীদেরও বিধায়ক ও তাঁর সঙ্গীরা ধাক্কাধাক্কি করে। সেক্টর অফিসারকেও তারা মারধর করে। তারপর বিধায়ক নিজে ও তাঁর সঙ্গীরা পালা করে ইভিএমে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ছাপ্পা মারে।” তিনি জানান, বিকেল ৫টা নাগাদ বুথ থেকে বিধায়ক বেরিয়ে যান। ওই বুথে ৯৮০ জন ভোট রয়েছে। বিধায়ক আসার আগে বুথে ভোট পড়েছিল ৮৩৭টি। তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা প্রায় ৬৩টি ছাপ্পা ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

কী করে এতক্ষণ ধরে ছাপ্পা চলল? প্রিসাইডিং অফিসার জানান, বুথের বাইরেও বিধায়কের আরও সঙ্গী ছিল। ভোটকর্মীরা যাতে পালিয়ে গিয়ে কোথাও খবর দিতে না পারে সে জন্য তারা নজর রাখছিল। সেই সময়ে বুথে ভোটারও ছিল না। সে কারণেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাঁরা খবর পাঠাতে পারেননি। বিধায়ক চলে যাওয়ার পরেই সোনামুখীর বিডিওকে ফোন করে পুরো বিষয়টি তিনি জানান। খবর পেয়ে বিডিও ওই বুথে যান। পৌঁছয় পুলিশবাহিনীও। যদিও দিপালীদেবীর দাবি, “আমি নিজের বুথ সোনামুখী শ্যামসুন্দর প্রাইমারি স্কুলেই সারাক্ষণ ছিলাম। সাহাপুরে কী করতে যাব? যত্ত সব মিথ্যা অভিযোগ! সর্বত্র শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে।”

ওই বুথের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের সোনামুখী জোনাল সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য অভিযোগ। “সোনামুখীর একটি গ্রন্থাগারের ভোটের বিধায়ক দলবল নিয়ে রিগিং করে জিতেছিলেন। এ বারও তেমনইটাই করলেন। ওই ঘটনার জন্য বিধায়ককে গ্রেফতার করা ও বুথে পুনর্নিবাচনের দাবি জানাচ্ছি।” শেখরবাবুর দাবি, আগেও ওই বুথে কিছু গোলমাল হয়েছে। তাই সর্বদল বৈঠকে বুথটিকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে বাড়তি বাহিনী দেওয়ার জন্য লিখিত জানিয়েছিলাম। আধা সেনা থাকালে এমনটা করার সাহস পেতেন না ওঁরা।” বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত মণ্ডলও বলেন, “ওই বুথটি স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন কেন যে ওটা সাধারণ বুথ হিসেবে রেখে দিল বুঝতে পারছি না।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকেরা এ বার গায়ের জোরে জিততে চাইছেন তা তৃণমূলের বিধায়কের ন্যক্কারজনক ঘটনাই বুঝিয়ে দিল!”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের ৩৩টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debabrata das sonamukhi rigging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE