Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বকেয়া দিচ্ছেন না, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে সরব সিন্ডিকেটের সদস্যেরা

সিন্ডিকেট গড়ে নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন এক তৃণমূল নেতা। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগেই ওই নেতা এবং তাঁর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন ওই সিন্ডিকেটেরই অন্য সদস্যেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৮
Share: Save:

সিন্ডিকেট গড়ে নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন এক তৃণমূল নেতা। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগেই ওই নেতা এবং তাঁর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন ওই সিন্ডিকেটেরই অন্য সদস্যেরা। অভিযোগকারীদের অনেকেই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী।

ঘটনাটি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড়-মঙ্গলদা পঞ্চায়েত এলাকার। কিষান বাউরি নামের তৃণমূলের স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছেন ‘রায়বাঁধ (আইপিসিএল) ঠিকাদার অ্যাসোসিয়শন’ নামে সিন্ডিকেটের পঁচিশ জন সদস্য। তাঁদের দাবি, নির্মাণকাজ চলার সময় বিভিন্ন সময়ে আর্থিক দুর্নীতি করেছেন কিষানবাবু। তাঁর কাছ থেকে ৫১ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে সদস্যদের। অথচ ওই টাকা তিনি দিতে চাইছেন না। এমনকী কিষানবাবুর দেওয়া চেক বাউন্স করেছে বলেও অভিযোগে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ঘটনাটি নিয়ে কিষান বাউরি ও তাঁর সহযোগী তথা এলাকার আর এক তৃণমূল নেতা গণেশ মাহাতোর বিরুদ্ধে খোলা চিঠি ছেপে এলাকায় বিলি করেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যেরা। পাশাপাশি বিষয়টি জানিয়েছেন তৃণমূলের ব্লক স্তরের নেতাদের।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের জোরাডি পঞ্চায়েতের রায়বাঁধ মৌজায় তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু করেছে ইন্ডিয়ান পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড বা আইপিসিএল। তবে কাজ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে। সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে প্রকল্প এলাকায়। অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেতা কিষান কনট্রাকশন নামের একটি সংস্থা তৈরি করে আইপিসিএলের কাছ থেকে সীমানা প্রাচীরের একাংশ তৈরির বরাত জোগাড় করেছিলেন। কাজের ব্যয়বরাদ্দ ছিল প্রায় ১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তিপত্র তৈরি করে সিন্ডিকেট গঠন করা হয়।

সিন্ডিকেট সদস্য শিবনাথ মাহাতো, সুব্রত ভট্টাচার্যরা জানান, তখন স্থির হয়েছিল কাজের লভ্যাংশ সমান ভাবে ভাগ করা হবে সদস্যদের মধ্যে। কিন্তু, কাজ শেষ হওয়ার মুখে তাঁরা বুঝতে পারেন কিষানবাবু তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। চলতি বছর জুলাই থেকে কিষানবাবু ও গণেশের কাছে প্রাপ্য টাকা দেওয়ার দাবি জানাতে শুরু করেছিলেন সিন্ডিকেটের সদস্যেরা। শিবনাথদের অভিযোগ, “কাজ শেষ হওয়ার মুখে হঠাত্‌ করে কিষানবাবু বলতে শুরু করেন, লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কিষানবাবু ও গণেশ মাহাতো বিভিন্ন সময়ে সংস্থার কাছে থেকে পাওয়া বিলে কারচুপি করে টাকা আত্মসাত্‌ করছেন। এমনকী, নির্মাণ সামগ্রী কেনার খাতেও টাকা আত্মসাত্‌ হয়েছে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, অগস্টের গোড়ায় রঘুনাথপুর থানায় কিষানবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই তৃণমূল নেতা কিছু টাকা দিতে সম্মত হন। অভিযোগ, তার পরেও তিনি যে চেক দিয়েছিলেন, তার মধ্যে বেশির ভাগই বাউন্স করেছে।

সিন্ডিকেট কারবারে দলের দুই স্থানীয় নেতার নাম জড়ানোয় তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি ছড়িয়েছে। বস্তুত, রাজ্যে সিন্ডিকেট নিয়ে শাসক দলেরই নানা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছে বারবার। আর নেতা-কর্মীদের নাম জড়িয়ে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে এ বার দলীয় নেতৃত্বের তরফে লিখিত ফরমান দিয়ে নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি বা অন্য কোনও ভাবে জড়িত থাকতে পারবেন না। এই নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বারবার বারণ সত্ত্বেও কী ভাবে দলের দুই নেতা শুধু সিন্ডিকেট গড়াই নয়, সদস্যদের সাথে প্রতারণায় অভিযুক্ত হয়ে পড়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলে। যদিও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের তৃণমূল নেতা বরুণ মেহেতার দাবি, “কিষান বাউরি ও গণেশ মাহাতো আমাদের দলের কেউ নয়। ফলে, ওই ঘটনার সঙ্গেও তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।”

বরুণবাবু যাই দাবি করুন না কেন, ঘটনা হল কিষানবাবু মৌতোড় এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা বলেই পরিচিত। আর গণেশ মাহাতো আগের ব্লক কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁরা দু’জনেই তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেননি। গণেশ বলেন, “আমি তৃণমূলের নেতা বলেই আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত করে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অথচ এই ঘটনায় আমি কোনও ভাবেই জড়িত নই।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “কাজ পেয়েছে কিষান কনস্ট্রাকশন। বিল বাবদ টাকা ঢুকেছে ওই অ্যাকাউন্টে। তা হলে আমি কী ভাবে দুর্নীতি করব?” গণেশ এই দাবি করলেও নানা সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে কিষানবাবুর হয়ে বা তাঁর সঙ্গে সই করেছেন এই গণেশই!

কিষানবাবুও দাবি করেছেন, “সম্পূর্ন ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সীমানা প্রাতীরের কাজই এখনও শেষ হয়নি। তা হলে টাকা কী ভাবে দেব অন্য অংশীদারদের? আর যে পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে ওঁরা দাবি করছেন, সেটাও ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc leader syndicate raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE