বিষ্ণুপুর পর্যটন আবাসনের মঞ্চ। এখানেই একসময় গানের আসর বসত। নিজস্ব চিত্র।
“গান-বাজনা-মতিচুর/ তিন নিয়ে বিষ্ণুপুর”।
সেই সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যেই বছর তিনেক আগে উদ্যোগ নিয়েছিল বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। ঠিক হয়, শীতের মরসুমে তো বটেই, সারা বছর ছুটির দিনগুলিতে পর্যটক আবাসের সভাকক্ষে সন্ধ্যায় দু-ঘন্টার সঙ্গীতের আসর বসবে। কিছুদিনের জন্য বসেওছিল সংগীতের আসর। কিন্তু জেলার শিল্পীদের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়লেও অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। এবার শীতের মরসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ওই আসর ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শিল্পীরা।
২০১১ সালের ৮ জুলাই বিষ্ণুপুরের সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে সারা বছরের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু পর্যটন দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিষ্ণুপুরে বেড়াতে আসা বহু পর্যটক তাঁদের কাছে বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত শোনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে এলাকার সঙ্গীতশিল্পীরাও চাইছিলেন নিজেদের মেলে ধরার একটা নিয়মিত প্লাটফর্ম। সেই ভাবনা থেকেই এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ‘বন্দেমাতরম’-এর সুরস্রষ্টা, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত শিক্ষক যদুভট্ট, কালজয়ী ধ্রুপদশিল্পী গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবাদপ্রতিম নজরুলগীতি শিল্পী জ্ঞান গোস্বামী জন্মেছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। মল্লরাজাদের আনুকুল্যে এখানেই সৃষ্টি হয়েছিল দুই বাংলার একমাত্র সংগীত ঘরানার, যার সূত্র ধরে এখানে গড়ে ওঠে ভারতের প্রথম মিউজিক কলেজ। শুধু মন্দির নগরীর জন্য নয়, এই সঙ্গীতের জন্যও বিষ্ণুপুরের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এখানে অনেকেই আসেন সঙ্গীত এই বিশেষ ঘরানার জন্যই।
বিষ্ণুপুর রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায়, এলাকার বিশিষ্ট সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব জগন্নাথ দাশগুপ্ত, সেবক চট্টোপাধ্যায়, রাসবিহারী শর্মা, সুব্রত হাজরাদের ক্ষোভ, “বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে একটি সুন্দর পরিকল্পনা শুরু হয়েও কেন বন্ধ হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমরা চাই, সঙ্গীতের আসর ফের চালু হোক।”
ঠিক হয়েছিল, প্রতি অনুষ্ঠানে ৩ জন শিল্পী অংশ নেবেন। সহযোগী শিল্পী থাকবেন আরও ৬ জন। মোট এই ৯ জনের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১৫০০ টাকা। সেই হিসেবে ৫২ সপ্তাহের জন্য ৭৮ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়। ওই খাতে আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ আরও ধরা হয়েছিল ২২ হাজার টাকা। সাকুল্যে সেই ১ লক্ষ টাকাও মেলেনি বহু আবেদন-নিবেদনে।
বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “ওই খাতে টাকা না আসায় প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।” যদিও শিল্পীদের ক্ষোভ, “এই সরকার পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবকে দু-লক্ষ টাকা করে অনুদান দিতে পারে। আর বিষ্ণুপুর ঘরানার মতো সুপ্রাচীন সঙ্গীত ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে বছরে এক লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে না?” আক্ষেপ পর্যটকদেরও। কলকাতা বেড়াতে আসা শুভময় দত্ত ও সুমন সাহা বলেন, “আমরা বিষ্ণুপুরকে চিনি মন্দির নগরী ও সঙ্গীত চর্চার পীঠস্থান হিসেবে। ঘুরে ঘুরে মন্দির দেখলাম। কিন্তু বাংলার একমাত্র সঙ্গীত ঘরানার ধ্রুপদ শোনার সুযোগ পেলাম না!”
স্থানীয় সঙ্গীতানুরাগী মানুষ জানান, টেরাকোটা অলংকৃত অসংখ্য মন্দিরের পাশাপাশি বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদ সঙ্গীত সমান সমাদৃত। তাহলে সেই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেও এই পিছিয়ে আসা? তাঁদের দাবি, দ্রুত শুরু হোক এই অনুষ্ঠান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy