Advertisement
০২ মে ২০২৪

বনে মেলা, তিলের খাজাই ভোগ

পৌষ সংক্রান্তিতে কেঁদুলি মেলা ছাড়াও, আরও কয়েকটি ছোটবড় মেলা বসে। এর মধ্যে আকর্ষণীয় হল, নলহাটি ২ ব্লকের মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত আকালীপুরের ভদ্রকালী প্রাঙ্গনে বিরাট মেলা, মহম্মদবাজার ব্লকের দ্বারবাসিনী মেলা। দুটি মেলাই জয়দেব-কেঁদুলি মেলার মতোই জেলায় জনপ্রিয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে দুটি মেলাতেই। তবে দুটি মেলাই একবেলার।

পৌষ সংক্রান্তিতে মহম্মদবাজারের দ্বারবাসিনীর মেলা। —ফাইল চিত্র।

পৌষ সংক্রান্তিতে মহম্মদবাজারের দ্বারবাসিনীর মেলা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

পৌষ সংক্রান্তিতে কেঁদুলি মেলা ছাড়াও, আরও কয়েকটি ছোটবড় মেলা বসে। এর মধ্যে আকর্ষণীয় হল, নলহাটি ২ ব্লকের মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত আকালীপুরের ভদ্রকালী প্রাঙ্গনে বিরাট মেলা, মহম্মদবাজার ব্লকের দ্বারবাসিনী মেলা। দুটি মেলাই জয়দেব-কেঁদুলি মেলার মতোই জেলায় জনপ্রিয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে দুটি মেলাতেই। তবে দুটি মেলাই একবেলার।

আকালীপুরের ভদ্রকালী পর্যটকদের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান। দেবীর অবস্থান সাপের ওপর বসে থাকা অবস্থায়। দেবীর সব গয়না এমনকী মাথার মুকুটও সাপ দিয়ে তৈরি। আট কোনা মন্দিরে মূর্তিটি বেশ বড়, কষ্টি পাথরের। কথিত আছে, মূর্তিটি ছিল মগধের রাজা জরাসন্ধের। পরে সেটি কাশীর রাজা চৈত্য সিংহের বাড়িতে পূজিত হত। চৈত্য সিংহের অনেক টাকা খাজানা বাকি পরে যাওয়ায়, ইংরেজ সাহেব ওয়ারেন হেস্টিংস ওই কুলদেবীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তখন দেবীকে বাঁচাতে, চৈত্য সিংহ গঙ্গার জলে ডুবিয়ে রেখেছিলেন মূর্তিটি। ভদ্রপুরের মহারাজা নন্দকুমার সেকথা জানতে পেরে দেবীকে উদ্ধার করে, নৌকাতে করে ব্রাহ্মণী নদী দিয়ে আকালীপুরে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন।

সেই দেবীর মূল উৎসব হয় পৌষ সংক্রান্তিতে। পূণ্যার্থীরা ব্রাহ্মণী নদীতে মকর স্নান সেরে দেবীর পুজো দেন। দেবীকে তাঁরা অন্যান্য নৈবেদ্যর সঙ্গে তিলের খাজার ভোগ দেন। সে জন্য প্রচুর তিলের খাজার দোকান বসে মেলার দিন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র-সহ হরেক জিনিস বেচাকেনা হয়।

মেলার বড় বৈচিত্র্য হল, প্রতিবার সব ধর্মের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ দেবীর মন্দিরের পিছনে এবং ব্রাহ্মণীনদীর দু’পারে পিকনিক করে। এর মধ্যে অনেকে পারিবারিক পিকনিকও করে। আকালীপুর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক সৌরভ দত্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় কুড়ি বছর আগে থেকেই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেলার চরিত্র বদলেছে। আগে প্রচুর গোরুর গাড়িতে বর্ধিষ্ণু পরিবারের লোকজনেরা আসতেন। তারা গোরুর গাড়ির পিছনে মূলত খিচুড়ির পিকনিক করতেন। এখন গাড়ি, ট্রেকার এবং নানা যানবাহনে মানুষ আসেন। পিকনিকের রেওয়াজ এখনও আছে।” লোহাপুরের বারা গ্রামের প্রৌঢ সামসুল হুদা বলেন, “এখন আশপাশ গ্রামের মানুষ পৌষ সঙ্ক্রান্তির জন্য দিন গোনেন। ওই দিন আকালীপুরে পিকনিক করতে না পারলে যেন বছরটাই নষ্ট হয়ে যায়। মেলাটাকে পিকনিকের মেলা হিসেবেই দেখি।”

অন্যদিকে দ্বারবাসিনী মন্দিরটি রয়েছে বন দফতরের প্রাচীন বনের মধ্যে। প্রায় হাজার দেড়েক প্রাচীন শাল গাছের ঘন বন রয়েছে মন্দির সংলগ্ন এলাকায়। রয়েছে নানা প্রজাতির গাছও। সেই সব গাছের ফাঁকে ফাঁকে মেলা বসে। দেখে মনে হয়, মেলাটি যেন নানা রঙে সেজেছে। বন ঘেঁষা দ্বারকা নদীর হাঁটু জলে প্রচুর পুণ্যার্থী মকর স্নান সারেন। প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন দ্বারবাসিনী দেবীর শিলা মূর্তিতে পুজো দেন তাঁরা।

দ্বারবাসিনী দেবীর অন্যতম সেবায়িত কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এলাকার চারটি পঞ্চায়েতের সব গ্রামের সব শ্রেণির মানুষ ছাড়াও লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ মেলায় আসেন। দলে দলে আদিবাসীরা নাচের দল নিয়ে এসে মেলাতে মাতিয়ে তোলে। পর্যটকদের কাছে এটি একটি বিশেষ প্রাপ্তি।

এই দ্বারবাসিনীতেই ‘দেব শিশু’ হিন্দি সিনেমার বেশির ভাগ অংশ শুটিং হয়েছিল। কালীপ্রসাদবাবু বলেন, “দ্বারবাসিনীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য রাজ্য পর্যটন দফতরে আবেদন করা হয়েছে। সেটি হলে এলাকায় আর্থিক বিকাশ হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

village fair pous sankranti suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE