জয়রামপুরের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে ভেঙে গিয়েছে সেতুর রেলিং। ছবি: অনির্বাণ সেন।
বেহাল সেতুর কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে পানাগড়-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। কোনও কোনও সেতুর হাল এমনই যে, বিপজ্জনকভাবে যান পারপার করে মন্থর গতিতে। কোথাও সেতুর একাংশ বসে যাওয়াতে যান চলাচলের জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী পথ! সেই কারণেই জাতীয় সড়কে দু’ ধারে থমকে থাকা সারি সারি গাড়ির লাইন এখন রোজকার দৃশ্য।
দুর্ভোগের শেষ নেই যান চালক থেকে যাত্রীদের। মোরগ্রাম থেকে দুবরাজপুর রাস্তার বড় অংশের হাল খারাপ হওয়ায় তাঁদের ক্ষোভ চরমে। তাঁদের অভিযোগ, প্রায় সমস্ত সেতুর হালই বেহাল। যে কোনও সময় সেতুগুলি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে তখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরও কিছু করার থাকবে না। এতে দুর্ভোগ বাড়বে পথ চলতি মানুষজন থেকে সমস্ত স্তরের লোকজনের।
২০১১-১২ সালে নির্মাণ হওয়ায়, দুবরাজপুর থেকে রানিগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা এখনও ভাল আছে। তবে এই রাস্তার উপর সেতু বা ব্রিজগুলির হাল একেবারেই ভাল নয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে জাতীয় সড়ক নির্মাণ হয়। সে সময় ওই রাস্তার উপরের বেশ কয়েকটি সেতু বা ব্রিজ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সেতু বা ব্রিজ পুরনোই রয়ে গেছে। তবে সমস্ত সেতু বা ব্রিজের হাল যান চলাচলের অযোগ্য।
ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, কুলে, বক্রেশ্বর, হিংলো, শাল এই সমস্ত নদী ও ওই রাস্তার উপর যে সমস্ত ক্যানেল আছে, প্রায় প্রতিটি ক্যানেলের সেতু বা ব্রিজের অবস্থা এতই খারাপ যে, ঠিকমত পায়ে হেঁটে চলা দায়। উঁচু নিচু, খানা খন্দে ভর্তি। কোথাও পিচ উঠে গেছে তো কোথাও ঢালাইয়ের চাঙড় ধসে পড়েছে ব্রিজের নীচে। কয়েকটির গার্ড রেলিং গুলিও ভাঙা। বিশেষ করে তিলপাড়া জলাধারের ও মল্লারপুর রেল লাইনের উপর ফ্লাইওভারটির অবস্থা খুবই খারাপ। জাতীয় সড়ক ঘোষণার পর ওই রাস্তাটি নতুন করে নির্মাণ হলেও তিলপাড়া জলাধারের ব্রিজটি আগেকার। একই অবস্থা খয়রাশোলের শাল ও হিংলো নদীর উপর ভাসা ব্রিজ দুটিরও। নদীতে সামান্য জল বারলেই এই দুটি ব্রিজের উপর দিয়ে জল বইতে থাকে। এবারের বর্ষাতেও ওই দুটি ব্রিজের উপর দিয়ে জল বয়েছে। ফলে থমকে গেছে বার বার সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল।
অভিযোগ, অতিরিক্ত মাল বোঝাই গাড়ি যাতায়াতের জন্যই রাস্তা, সেতু বা ব্রিজগুলির এই হাল। অভিযোগকে মেনে নিয়েছে জাতীয় সড়ক দপ্তরও। জাতীয় সড়ক দপ্তর সূত্রে ব্যাখ্যা, রাস্তাটি জাতীয় সড়ক ঘোষণার পর যখন নতুন করে নির্মাণ করা হয়, তখন রাস্তাটির ওজন ধারন ক্ষমতা অনেক বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন অধিকাংশ গাড়ি তার মাল বহন ক্ষমতা অপেক্ষা বেশি ওজনের মাল বহন করছে। এতে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে।
নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে জাতীয় সড়ক নিমার্ণের সময় যে সব সেতু বা ব্রিজ নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি, সেগুলির ওজন ধারন ক্ষমতা কী অনেক কম? জাতীয় সড়ক দফতরের উত্তর, “ঠিক তা নয়। কারণ ওই সব সেতু বা ব্রিজের রাস্তা অনুপাতে ওজন ধারন ক্ষমতা আছে বলেই নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজন হয়নি।”
জাতীয় সড়ক দপ্তর যায় বলুক না কেন, আদতে তথ্য অন্য কথা বলছে। জাতীয় সড়ক অপেক্ষা তিলপাড়া জলাধারের ব্রিজটি যেমন প্রস্থেও ছোট। খুব কষ্টে পাশাপাশি দুটি গাড়ি পারাপার করে। কিছুদিন আগে এই ব্রিজটি সংস্কার হওয়ায় এখন আর খানাখন্দ নাই। কিন্তু শাল ও হিংলো নদীর ভাসা ব্রিজ দুটির হাল সেই আগের মতোই। মল্লারপুরের ফ্লাই ওভার, দেউচায় দ্বারকা নদীর উপর ব্রিজ, গনপুর জঙ্গল, মহম্মদবাজার ও খয়ড়াকুড়ি ক্যানেলের উপর সেতু গুলির অবস্থাও খারাপ। এগুলি কবে সংস্কার হবে এবং হিংলো ও শাল নদীর ভাসা ব্রিজ দুটি নতুন করে নির্মাণ করা হবে কিনা? সে সব প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি জাতীয় সড়ক দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নীরজ কুমার সিংহ। তিনি বলেন, “আগে কুলে নদীর সেতুটি সারানো হোক। তারপর ওইসব সেতু বা ব্রিজগুলি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জাতীয় সড়ক দফতর সুত্রের খবর, এ দিন কলকাতা থেকে সেতু বিশেষজ্ঞ কুলে নদীর বসে যাওয়া সেতুটি ঘুরে দেখেন। এক প্রস্থ আলোচনা হয়, কুলে নদীর সেতুটি সহ অন্যান্য ভগ্ন সেতু বা ব্রিজগুলি নিয়ে। এ দিনের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও রকম মুখ খুলতে চাননি নীরজবাবু। তিনি শুধু বলেন, “কুলে নদীর সেতু সারানোর কাজ চলছে। সেতুটির মেরামতিতে অন্তত ১৩-১৪ দিন সময় লাগবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy