Advertisement
E-Paper

ভোট দেব না যান, ক্ষোভ শুনল তৃণমূল

সোনামুখীর সেই বুথে রবিবার শান্তিতে পুনর্নির্বাচন হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না তৃণমূলের। বুধবার, রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচনের শেষ বেলায় বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাহাপুর গ্রামের ২৭ নম্বর বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পা ভোট মারার অভিযোগে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এখনও অধরা। কিন্তু, সে দিন প্রিসাইডিং অফিসার এফআইআর করার পরেই পুলিশ ওই গ্রাম থেকে একাধিক নিরীহ নাবালককে ফাটকে পুরেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০২:২১
 আধাসেনার ঘেরাটোপে বুথের পথে। সোনামুখীর সাহাপুরে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

আধাসেনার ঘেরাটোপে বুথের পথে। সোনামুখীর সাহাপুরে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

সোনামুখীর সেই বুথে রবিবার শান্তিতে পুনর্নির্বাচন হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না তৃণমূলের।

বুধবার, রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচনের শেষ বেলায় বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাহাপুর গ্রামের ২৭ নম্বর বুথে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পা ভোট মারার অভিযোগে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এখনও অধরা। কিন্তু, সে দিন প্রিসাইডিং অফিসার এফআইআর করার পরেই পুলিশ ওই গ্রাম থেকে একাধিক নিরীহ নাবালককে ফাটকে পুরেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এ দিন গ্রামবাসীকে বুথে যাওয়ার আর্জি জানাতে গিয়ে সেই ক্ষোভের আঁচও পেয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। পাশাপাশি, শাসক দলের নেতারা গ্রামে ঢুকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ সিপিএমের।

বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ ২০-২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে সোনামুখীর বিধায়ক সাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোটকর্মীদের মারধর করে ৫৮টি ছাপ্পা ভোট দেন বলে অভিযোগ। তার পরেই ওই বুথের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের কাছে পুনর্নির্বাচনের প্রস্তাব পাঠায় বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। সে দিন বুথ পাহারায় ছিলেন দু’জন গাদা বন্দুকধারী রাজ্য পুলিশের কর্মী এবং এক জন লাঠিধারী এনভিএফ। এ দিন অবশ্য প্রচুর আধাসেনার উপস্থিতিতে ওই বুথে ভোট হয়। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, ভোট পড়েছে ৮৮.১৬ শতাংশ।

বিতর্ক তার পরেও রইল। সকালের দিকে কয়েক জন কাউন্সিলরকে নিয়ে ভোটারদের বুথে যেতে বলছিলেন সোনামুখীর প্রাক্তন উপপুরপ্রধান, তৃণমূলের সৌমেন মুখোপাধ্যায়। প্রৌঢ় গ্রামবাসী কার্তিক সাহা তাঁদের দেখেই নিজের বাঁ পায়ের হাঁটুর ফোলা অংশ দেখিয়ে বললেন, “বুধবার গণ্ডগোলের সময় এলাকায় পুলিশ ছিল না। পরে পুলিশ এসে তাড়া করল। ছুটতে গিয়ে পড়ে পা ভাঙল। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেদের বিনা দোষে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। আমাদের আপনারা নিরাপত্তা দিতে পারেন না। আর ভোট চাইতে এসেছেন? আপনাদের ভোট দেব না, যান।” ক্ষোভের আঁচ পেয়ে তৃণমূল নেতারা আর কথা বাড়াননি।

সাহাপুরের বাসিন্দাদের অনেকেরই ক্ষোভ, দীপালিদেবী লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর তাঁদের মতো নিরীহদের উপর পড়ল পুলিশের কোপ। তাঁদের দাবি, ওই ঘটনায় ধৃত ১০ জনের মধ্যে অনেকেই ১২-১৪ বছরের কিশোর, যারা সে দিনের গণ্ডগোলে কোনও ভাবেই জড়িত নয়। গ্রামের মাঝে ধর্মরাজ ঠাকুরের আটচালা। তার উল্টো দিকে গাছতলায় বসে কাঁদছিলেন আহ্লাদি বাগদি। তাঁর দাবি, “আমার ১৪ বছরের ছেলে অমিত বাড়ি তৈরির জন্য মাটি বইছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে ওকে তুলে নিয়ে গেল। ওর দোষটা কোথায়?” একই প্রশ্ন রামপ্রসাদ বাগদি ও কানন বাগদিরও। দু’জনেরই দাবি, তাঁদের দুই ভাইকে পাড়ার ক্লাব থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। অথচ তারা সে দিন ওই বুথের ধারেকাছেও যায়নি। সোনামুখী থানার পুলিশের অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ওই ১০ জনকে ধরা হয়েছে। এবং তারা সকলেই সাবালক। তিন দিন পুলিশ হেফাজত শেষে রবিবার বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতদের তোলা হয়েছিল। তাদের এক দিনের জেল হাজত হয়েছে।

সাহাপুর গ্রামের ভিতরেও আধা সেনা টহল দিচ্ছিল। ফলে, আতঙ্কের পরিবেশ ছিল না। বুথের সামনে ছিল লম্বা লাইন। দুপুর দেড়টায় প্রিসাইডিং অফিসার বাবলু ভৌমিক জানালেন, মোট ৯৮০টি ভোটের মধ্যে ৪৯১টি ভোট পড়ে গিয়েছে। বুথে ছিলেন তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টরাও। বুথ থেকে কিছুটা দূরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জটলা দেখা গেলেও সিপিএমের কোনও নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। বিকেলে সোনামুখীর জোনাল সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “সাহাপুরে তৃণমূলের এত লোকজন ঢুকেছিল যে আমাদের পক্ষে সেখানে যাওয়ার অসুবিধা ছিল। পাশের ধুলাই গ্রাম থেকে সব খবর রাখছিলাম। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তো গ্রামে ঢুকে রীতিমতো ভোট চেয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন।”

কমিশনকে অভিযোগ করেননি কেন? শেখরবাবুর জবাব, “কমিশনকে আর কত এ সব জানাবো?” যদিও সোনামুখীর বিডিও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টা আমাদের নজরে আসেনি। তবে ভোটের দিন ভোটারদের প্রভাবিত করাটা বেআইনি কাজ।” ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সোনামুখীর প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের মিহির মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “আমরা সাহাপুরে দলের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ দিন আবার কেউ ভোট চায় না কি!”

কিন্তু, যাঁর বিরুদ্ধে ভোট বানচালের অভিযোগের জেরে এ দিনের পুনর্নির্বাচন, সেই দীপালি সাহা কোথায়, কেনই বা তাঁকে পুলিশ ধরছে না, তা নিয়ে এ দিন নানা কথা ঘুরছিল ভোট দিতে আসা গ্রামবাসীদের মুখে। কেউ কেউ দাবি করেন, বিধায়ককে তাঁরা গাড়ি নিয়ে সোনামুখীতে ঘুরতে দেখেছেন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার এ দিনও মুখ খোলেননি। আর ভোট দেখতে এসে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও শুধু বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।”

swapan bandyopadhyay sonamukhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy