টিলার উপরে সিমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে কিছুটা উঠলে চোখ জুড়িয়ে যায়। চারপাশে ঘন নীল জলরাশি। দূরে জল ফুঁড়ে উঠেছে আরও কয়েকটি টিলা। চেনা মুকুটমণিপুরকে আরও খোলাখুলি ভাবে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পিতৃপাহাড় টিলার উপরে এই ওয়াচ টাওয়ার ও ভিউ পয়েন্ট খুলে দিচ্ছে প্রশাসন। আজ, মঙ্গলবার এই প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে।
গত কয়েক বছর আগের মন্দা কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরেছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর। দক্ষিণ বাঁকুড়ার পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে কুমারী ও কংসাবতী নদীর উপরে জলাধারকে ঘিরেই। জলাধারের একপাশে খড়ি ডুংরির পাহাড় ও পরেশনাথ মন্দির। অন্য পাড়ে বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক। শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই পর্যটনকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির বেড়ানোর আদর্শ জায়গা। কিন্তু পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার কাজ ঢের বাকি বলে পর্যটকদের অনুযোগ ছিল। সেই ঘাটতি এ বার কিছুটা পূরণ হচে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এখানে অনেক কিছু থাকলেও, ছিল না কোনও ভিউ পয়েন্ট বা ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে দাঁড়িয়ে একঝলকে দেখা যাবে গোটা মুকুটমণিপুরকে। এ জন্য খানিকটা আক্ষেপ ছিল পর্যটকদের। সেই আক্ষেপ আর করতে হবে না তাঁদের। রানিবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে জলাধারের পাড়ে পিতৃ পাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে ভিউ পয়েন্ট।” সেখানেই তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুসাফিরানা’।
সারা বছর ধরেই এই পর্যটনকেন্দ্রে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ভিড় করলেও দুর্গাপুজোর আগে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মুকুটমণিপুরে পর্যটকদের ঢল নামে। মুকুটমণিপুর জলাধারের পাড়ের রাস্তা ধরে পরেশনাথ মন্দিরের দিকে এগোলেই চোখে পড়ে পিতৃ পাহাড়। সেই পাহাড়ের চারিদিক পাথর সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। পাহাড়ে ওঠার জন্য তৈরি করা হয়েছে সিঁড়ির রাস্তা। পাহাড়ের ঢিলায় প্রায় ১৫ বিঘা জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ভিউ পয়েন্ট। পাহাড়ের মাথায় প্রায় ৩০ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার করা হয়েছে। এই টাওয়ারে একসঙ্গে প্রায় ৩০ জনের জায়গা হবে।
রানিবাঁধের বিডিও সুমন্ত দেবনাথ বলেন, “পর্যটকদের কাছে মুকুটমণিপুরকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্যই পঞ্চায়েত সমিতির তরফে এই ভিউ পয়েন্ট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল গত বছর। এ জন্য ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “জঙ্গলমহল এখন শান্ত। তাই মুকুটমণিপুরে এখন প্রতি বছর পর্যটকদের ভিড় উপছে পড়ছে। ওই ভিউ পয়েন্ট থেকে পর্যটকেরা মুকুটমণিপুরকে আরও সুন্দর করে দেখার সুযোগ পাবেন।” এই ভিউ পয়েন্ট এই পর্যটনকেন্দ্রের আকর্ষণ অনেকখানি বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও। মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত বলেন, “মুকুটমণিপুরকে ঢেলে সাজিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন করার দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। ভিউ পয়েন্ট হওয়ায় আমরা খুশি। এরফলে পর্যটকদের আনাগোনা এখানে আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy