চলচ্চিত্রের তারকারা মানুষের দুঃখ, কষ্ট, বোঝেন। তাঁরাও উন্নয়নের অনেক কাজ করতে পারেন। গত কয়েকদিনের কর্মিসভাগুলির চেনা ছক থেকে বেরিয়ে এ বার নিজেকে ভোটারদের কাছের মানুষ বলে দাবি করলেন বাঁকুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন। একই সঙ্গে বিরুদ্ধ প্রার্থীদের প্রতি কটাক্ষ শ্রীমতী দেব ভার্মার, “নারীশক্তি অনেক কাজ করতে পারে।” শুক্রবার নিতুড়িয়ায় প্রথম কর্মিসভায় এসে দর্শকদের মধ্যে মহিলাদের প্রাধান্য দেখে এ ভাবেই তাঁদের মন ছুঁতে চাইলেন তিনি।
সপ্তাহখানেক আগে প্রথম তিনি যখন বাঁকুড়া শহরে কর্মিসভা করতে এসেছিলেন, সে বার তিনি নিতুড়িয়াতেও আসবেন বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে খবর ছিল। সে বার তিনি আসতে পারেননি। হতাশ হয়েছিলেন কর্মীরা। এ বার তাঁকে নিজেদের এলাকায় পেয়ে উজ্জীবিত তৃণমূল কর্মীরা।
নিতুড়িয়ার গোবাগে কর্মিসভায় জমাট ভিড় ছিল। বক্তব্য রাখার সময়ে হয়তো মাথায় ছিল, তাঁর সম্পর্কে সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়ার মন্তব্যগুলি। তাই মঞ্চে উঠে তিনি বলেন, “যাঁরা বলছেন সিনেমা থেকে আসা লোকজন কিছুই করতে পারবেন না, তাঁদেরকে জানাতে চাই আমরা মানুষের সঙ্গে মিশেছি। তাঁদের সমস্যার কথা, দুঃখ দুর্দশার কথা জানি।” সভায় বিশাল সংখ্যক মহিলাদের উপস্থিতি দেখে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের মতোই শ্রীমতী এ বার বলতে শুরু করলেন, “মেয়েদের এখন লড়াই করে অধিকার চাইতে হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি পুরুষদের থেকে আমাদের শক্তি অনেক বেশি। আমরাও দেখিয়ে দিতে পারি। আমরা সন্তান মানুষ করি, তাদের শিক্ষা দিই-- নীতির শিক্ষা।” শ্রীমতীর এই বক্তব্য শুনে তখন মঞ্চের ডানদিকের মহিলাদের ঠাসা ভিড় থেকে উঠল উল্লাস ধ্বনি। সভা শেষে উপস্থিত তৃণমূলের কিছু জেলাস্তরের নেতার আত্মতৃপ্তি, রাজনীতির ময়দানে শুধু গ্লাম্যার দিয়ে হয় না, চাই রাজনৈতিক বক্তব্য। পুরুলিয়ার প্রথম সভাটা আমাদের প্রার্থী তা দেখিয়ে দিলেন।
এ দিন সাংগঠনিক শক্তিকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগিয়ে কর্মিসভা করে রঘুনাথপুরের তৃণমূলের বিধায়ক পূর্নচন্দ্র বাউরি। কারণ সিপিএমের ন’বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া আগেই রঘুনাথপুরে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। সে তুলনায় প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সভা শেষে পূর্ণচন্দ্রবাবুর মন্তব্য, “এই মাঠেই বিধানসভা নির্বাচনের সভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এই মাঠে কর্মিসভা করে বিধানসভার তিনটি ব্লকের সাংগঠনিক শক্তিটা একবার যাচাই করতে চেয়েছিলাম। বিধানসভার নির্বাচনের থেকে এ বার জয়ের ব্যবধান আরও বাড়বে।” পুলিশ বলছে, এই কর্মিসভায় ২০ হাজার লোক হয়েছিল।
সভাশেষে জেলা পরিষদের সাঁতুড়ির সদস্য বড়কারাম মুর্মু, নিতুড়িয়ার ব্লক কমিটির সদস্য দয়াময় মিত্র, রঘুনাথপুর শহরের তৃণমূল যুবার নেতা প্রণব দেওঘরিয়া, সাঁতুড়ির যুব নেতা গৌতম সূত্রধররাও উজ্জীবিত। তাঁরা বলছেন, “তৃণমূল প্রার্থীর রাজনৈতিক দক্ষতা, বিচক্ষণতা নেই বলে সিপিএম প্রচার করছিল। তা যে আদৌও সত্যি নয় সেটা নিজের চোখেই দেখে গেলেন কর্মী-সমর্থকেরা। এ বার শুধু কোমর বেঁধে নামার পালা। আর বিধায়ক বরলছেন, “প্রার্থীকে নিয়ে সভা করে আমরা কর্মবীর-সমর্থকদের মধ্যে মানসিক জোরটাই তৈরি করতে চেয়েছিলাম।” কারণ স্পষ্ট। পরিসংখ্যান বলছে, রঘুনাথপুরে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান কমে গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy