Advertisement
E-Paper

মনোনয়ন জমা দিতে বাধার আশঙ্কা

গোটা জেলায় তেরোটির মধ্যে একমাত্র মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজেই কোনও বিরোধী সংগঠন মনোনয়পত্র তুলতে পেরেছে। কিন্তু, সেই মনোনয়ন আদৌ জমা দেওয়া যাবে তো? সংশয়ে বিরোধী নেতারাই। ঘটনা হল, আজ, সোমবারই ওই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা পড়ার দিন। তার আগে ওই মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে বড় গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছে জেলার পুলিশ-প্রশাসন। জেলায় মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই কলেজে কলেজে গোলমাল হয়েছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৫

গোটা জেলায় তেরোটির মধ্যে একমাত্র মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজেই কোনও বিরোধী সংগঠন মনোনয়পত্র তুলতে পেরেছে। কিন্তু, সেই মনোনয়ন আদৌ জমা দেওয়া যাবে তো? সংশয়ে বিরোধী নেতারাই।

ঘটনা হল, আজ, সোমবারই ওই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা পড়ার দিন। তার আগে ওই মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে বড় গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছে জেলার পুলিশ-প্রশাসন। জেলায় মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই কলেজে কলেজে গোলমাল হয়েছে। সিউড়ি, রামপুরহাট, খয়রাশোল, ইলামবাজার প্রভৃতি কলেজে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জড়ো করে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলিকে মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১৩টির মধ্যে ১২টি কলেজেরই ছাত্র সংসদ শাসকদলের ছাত্র সংগঠন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে নিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের সমস্ত রকম আশ্বাসের পরেও বহিরাগতদের হাতে মার খেয়ে এসএফআই, এবিভিপি, ছাত্র পরিষদের বেশ কয়েক জন সমর্থক জখমও হয়েছেন। এমনকী, সিউড়িতে কলেজের সামনে জমায়েত করায় পুলিশের ঠেঙানি খেতে হয়েছে তৃণমূলের উপপুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে। গত ক’দিনের এই চিত্রের পাশাপাশি গত বারের অভিজ্ঞতার কথা মনে করে কপালে ভাঁজ বেড়েছে জেলা এসএফআই নেতৃত্বেরও। তাঁদেরও আশঙ্কা, এ বারও মরিয়া হয়ে সংগঠনের প্রতিনিধিদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেবে শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

তবে, রবিবার জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “মনোনয়নপত্র তোলার দিন ওখানে কেউ কোনও গণ্ডগোল পাকাতে পারেনি। সোমবারও আগোগোড়া সক্রিয় থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবেই পুলিশ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করবে।” একই কথা শোনা গিয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ অমিত চক্রবর্তীর মুখেও। তাঁর আশা, “মনোনয়নপত্র তোলার দিন পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় কোনও গণ্ডগোল হয়নি। আশা করছি, নির্বিঘ্নেই মনোনয়নপত্র জমার কাজ শেষ হবে।”

প্রসঙ্গত, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ২০১৩ সালেও জেলায় ৫টি কলেজে প্রার্থী দিতে পেরেছিল এসএফআই। বিপুল ভোটে দিতে দখল করেছিল মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজ। যদিও তার পরের বছরেই জেলার ১৪টি কলেজের মধ্যে ১৩টি কলেজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। রামপুরহাট কলেজ পেয়েছিল টিএমসিপি-সিপি জোট। এদের মধ্যে ১২টি কলেজেই বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি কোনও মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি। একমাত্র মল্লারপুরের কলেজেই ১৯টি আসনেই মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছিল এসএফআই। একটি আসনে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। বিরোধী সংগঠনগুলির অভিযোগ ছিল, সে বার পুলিশ-প্রশাসনের তরফে তাদের ছাত্র সমর্থকদের কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। টিএমসিপি-র সন্ত্রাসে বহু ক্ষেত্রেই কার্যত কেউ-ই কলেজের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারেনি। আর তার জেরেই টিএমসিপি ছাড়া জেলার কোথাও-ই বিরোধীরা মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি। একমাত্র যেখানে তুলতে পেরেছিল, সেই মল্লারপুর কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার পথে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বাধায় এসএফআই, এবিভিপি কর্মীরা ভেতরে ঢুকতেই পারেননি।

গত বার ঠিক কী হয়েছিল?

নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়ন পর্বে কলেজের ২০০ মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তা অগ্রাহ্য করেই সে দিন মল্লারপুরে কলেজের সামনে জমায়েত হতে থাকে। অভিযোগ ছিল, স্থানীয় ঝিকড্ডা, কানাচি, ডাবুক প্রভৃতি এলাকা থেকে শতাধিক তৃণমূল কর্মী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বটতলা থেকে গণপুরের ম্যানেজারপাড়া পর্যন্ত পাহারা দিচ্ছিল। মনোনয়নপত্র জমার জন্য কলেজে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা চড়াও হয়। বোমাবাজি করা হয়। মার খান সিপিএমের ময়ূরেশ্বরের জোনাল সম্পাদক অরূপ বাগও। আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমও। কলেজের সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশ থাকলেও তাদের কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়। দিনের শেষে মল্লারপুরের কলেজটিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে টিএমসিপি। ওই ছাত্র সংগঠন পরে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করে। সংগঠনের দাবি, এখনও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

এ বার কলেজের ১৯টি আসনের জন্য ৬৬টি মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। মূল লড়াই এসএফআই বনাম টিএমসিপি-র। এসএফআই জেলা সম্পাদক শতদল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “গত বার তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়ে আমাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি। আমরা জানি, এ বারও ওরা বাধা দেবে। কিন্তু, তার পরেও আমরা মনোনয়নপত্র জমা দেব।” যদিও মনোনয়নপত্র জমা দিতে কোনও বাধা দেওয়া হবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছেন খোদ স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র তোলার দিন আমরা কাউকে বাধা দিইনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনও দেব না।” এখন মুখে শান্তির কথা বলছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, “আমরা চাই শান্তি শৃঙ্খলা। পুলিশকে তাই মনোনয়নপত্র জমা দিতে শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থা করার আবেদন করেছি।” যদিও তাঁর কটাক্ষ, “বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি এখন যদি তাদের ছেলেমেয়ে প্রার্থী হতে রাজি না করাতে পারে, তার জন্য তো আমরা দায়ী হব না!”

এ দিকে, গণ্ডগোল এড়াতে প্রশাসন সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন রামপুরহাটের মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস। তিনি এ দিন বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে মল্লারপুর কলেজের ২০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। ভিডিওগ্রাফিও করা হবে। পর্যাপ্ত পুলিশও থাকবে।” সব পক্ষকেই একই আশ্বাস দিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও। তাঁর দাবি, “মল্লারপুর কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ভাবে করার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হবে। কোনও গণ্ডগোল হবে না।”

এই দাবি সত্যিই কতটা কার্যকর হবে, তা বোঝা যাবে আজই!

college election apurba chottopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy