Advertisement
০৫ মে ২০২৪
লক্ষ্য বিধানসভা ২০১৬

মনিরুলের গড় থেকেই প্রস্তুতি শুরু বিজেপি-র

গ্রাম থেকে জেলা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোথাও বিরোধী দলের চিহ্নমাত্র নেই। এমনকী, গত পঞ্চায়েত ভোটে গোটা এলাকায় বিরোধীরা একটি মনোনয়নও জমা করতে পারেনি। এখানকার বিধায়কও শাসক দলের এক দাপুটে নেতা। বিরোধী-শূন্য সেই লাভপুরেই দু’দিন ধরে কার্যকারণী সভা করল বিজেপি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
লাভপুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

গ্রাম থেকে জেলা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোথাও বিরোধী দলের চিহ্নমাত্র নেই। এমনকী, গত পঞ্চায়েত ভোটে গোটা এলাকায় বিরোধীরা একটি মনোনয়নও জমা করতে পারেনি। এখানকার বিধায়কও শাসক দলের এক দাপুটে নেতা। বিরোধী-শূন্য সেই লাভপুরেই দু’দিন ধরে কার্যকারণী সভা করল বিজেপি। শনিবার দুপুর থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত ওই সভায় দলের জেলা নেতৃত্বে সকলেই হাজির ছিলেন। লাভপুরের পরে উজ্জ্বীবিত বিজেপি আগামী দিনে জেলার প্রতিটি ব্লকেই ওই কর্মসূচির আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলীয় সূত্রের খবর, লাভপুর অতুল শিবমঞ্চে হয়ে যাওয়া ওই দলীয় কর্মসূচিতে বিজেপি-র ১৯ জন ব্লক সভাপতি, পাঁচ পুরসভা এলাকার দলীয় সভাপতি-সহ দলের গোটা জেলা কমিটিই উপস্থিত ছিলেন। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকেরা ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন দলের যুব মোর্চা, মহিলা মোর্চা, সংখ্যালঘু মোর্চা, কৃষক মোর্চা, তফসিল এবং তফসিল আদিবাসী মোর্চার নেতারাও। এ রকম একটি কর্মসূচি শুরুর জন্য হঠাত্‌ লাভপুরকেই বাছা হল কেন? বিজেপি-র বীরভূম জেলা পর্যবেক্ষক রামকৃষ্ণ পাল বলছেন, “লাভপুরকে বেছে নেওয়ার সব থেকে বড় কারণ অবশ্যই মনিরুল ইসলামের মতো নেতাদের আস্ফালন এবং হুঙ্কারের জবাব দেওয়া। তবে, সেটা ওদের দলের মতো বদলা আর সন্ত্রাসের পথে নয়। রাজনৈতিক ভাবেই আমরা এর জবাব দিতে চাই।” তার জন্য সবার আগে নিচুতলা থেকে দলীয় সংগঠন মজবুত করার দিকেই বিজেপি-র নজর দিয়েছে। আর শুধু লাভপুরই নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনের মাধ্যমে এলাকার মানুষ জনকে সংগঠিত করেই সে কাজ করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে রামকৃষ্ণবাবু জানিয়েছেন।

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে সরকারের কাজকর্ম নিয়ে দলীয় কর্মীরা কী ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন, রাজ্যে বর্তমান শাসক দলের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতি এবং সরকারের অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কর্মীরা মানুষজনকে কতটা সজাগ করতে পারছেন, এ রকম নানা বিষয় নিয়ে লাভপুরে বিজেপি-র ওই কার্যকারণী সভায় আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি জেলায় চার মাসের ব্যবধানে ইলামবাজারে দু’জন বিজেপি কর্মী খুন হয়েছে। দু’জনেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা ও সুবিচার দিতে জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক কী ভূমিকা নিয়েছে, এ ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে ওই সভায়। পাশাপাশি দু’দিনের ওই সভায় জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ড নিয়ে দলীয় কর্মীদের এলাকায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বস্তুত, পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই ব্লকে ব্লকে দলীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু করেছে। দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি লাভপুরেই ২৫০ জন কর্মীর প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হয়েছে। বীরভূমে ১৯টির মধ্যে ৮টি ব্লকে এখনও প্রশিক্ষন শিবির বাকি আছে। আগামী ৫-৮ নভেম্বর ওই সমস্ত ব্লকে দলীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, ‘মিশন ২০১৬’। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগেই জেলায় দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করতে হবে। আমরা এই ধরনের আরও কিছু দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছব।” তবে, বিধানসভা ভোটেরও আগে জেলার চারটি পুরসভায় ভোট রয়েছে। সবার আগে সাঁইথিয়া, তারও পরে রামপুরহাট, বোলপুর ও সিউড়িতে। ওই সব নির্বাচনকে মাথায় রেখেই বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বে আগামী ১ নভেম্বর থেকে পুরনো কর্মীদের সদস্যপদ নবীকরণ এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করতে চলেছে। দুধকুমারের কথায়, “তার আগে কর্মীদের মধ্যে দলীয় নীতি, চিন্তা-ভাবনার কথা আরও স্পষ্ট করে দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাই আগামী দিনেও লাভপুরের মতো কর্মসূচি চালু থাকবে।”

যোগাযোগ করা হলেও বিজেপি-র এই কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমাকে বিরক্ত করবেন না।” আর ফোন ধরেননি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তবে, লোকসভা ভোটের পর থেকে জেলায় বিজেপি-র এই উত্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ বামেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত, “এ সব সাময়িক উত্তেজনা। কোন ইস্যুতে বিজেপি রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়াবে? জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। অস্বাভাবিক হারে রেলভাড়া বেড়েছে। পেট্রোল-ডিজেলের দামে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যের মানুষ টাকা পাচ্ছেন না। কোন মুখে ওরা ভোট চাইবেন? আসলে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে বরাবরই ওদের কিছু লোক সাময়িক ভাবে এই সব করে।” তাঁর পাল্টা দাবি, এখানকার মানুষ কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সমর্থন করবেন না।

যদিও এ সব কথাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে লাভপুরের সভা থেকেই বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE