Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রুটের একমাত্র বাস বন্ধ, দুর্ভোগ

প্রথমের লড়াইটা ছিল দুবরাজপুর থেকে বাড়িজুড়ি হয়ে লোকপুর যাতায়াতের একমাত্র বাসটি যেন সময় মতো চলে। কিন্তু একটি পথ দুর্ঘটানার পর সেই বাসটিই প্রায় দু’মাস ধরে এই পথে আর চলছে না। বাস বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।

পড়ে রয়েছে প্রতীক্ষালয়। বাস চলাচল বন্ধ। দুবরাজপুরের আগয়া-কাপাসতোড় মোড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পড়ে রয়েছে প্রতীক্ষালয়। বাস চলাচল বন্ধ। দুবরাজপুরের আগয়া-কাপাসতোড় মোড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১২
Share: Save:

প্রথমের লড়াইটা ছিল দুবরাজপুর থেকে বাড়িজুড়ি হয়ে লোকপুর যাতায়াতের একমাত্র বাসটি যেন সময় মতো চলে। কিন্তু একটি পথ দুর্ঘটানার পর সেই বাসটিই প্রায় দু’মাস ধরে এই পথে আর চলছে না। বাস বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। সাইকেল, গরুরগাড়ি, মোটরবাইক অথবা হেঁটেই ওই রাস্তায় যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন কবে আবার শুরু হবে রুটের একমাত্র বাস চলাচল।

কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পরে এত দিন কেটে গেলেও কেন বাস চলাচল স্বাভাবিক হল না? পাড়ুই থানার বর্তমান অস্থিরতাই বাস পথে নামানোর ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসমালিক। কেন? পাড়ুই থানার কুড়মিঠা থেকে দুবরাজপুর হয়ে খয়রাশোলের লোকপুরের রুটের ওই বাসটির মালিক ফটিক মোল্লা। তিনি জানিয়েছেন, দুবরাজপুরের সালুঞ্চি গ্রামের এক বাসিন্দা বাসের ছাদ থেকে পড়ে আহত হন। পাড়ুই থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটার পর আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগের ভিত্তিতে বাসটিকে আটক করে থানা। তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে বাস। তিনি বলেন, “যতদূর শুনেছি দুর্ঘটনায় আহত বাসিন্দা এখন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু বর্তমানে ওই থানা এলাকায় অস্থিরতা থাকায় মামলা মিটিয়ে বাসটিকে মুক্ত করাতে সময় লাগছে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই সমস্যা মিটবে আশা করি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালে ওই রুটে বাস চালানোর অনুমোদন দেয় জেলা পরিবহণ দফতর। কিন্তু গোটা রস্তার অবস্থাই অত্যন্ত খারাপ ছিল। বিশেষ করে দুবরাজপুর থেকে লোকপুর রাস্তাটি মোরামেরই ছিল। তাই কিছুদিন চালানোর পরই ওই রুটে দুবরাজপুর থেকে লোকপুর পর্যন্ত বাসটির চলাচল দীর্ঘকাল বন্ধ ছিল। মূলত রাস্তা খারাপের জন্য ওই রুটের বাকি অংশেও অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল বাস চালানো। গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায়, কোথাও বা পশ্চিমাঞ্চাল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় রাস্তা তৈরির পর আবার নিয়মিত হয় বাস চলাচল। দুবরাজপুর থেকে লোকপুর অংশও তার ব্যতিক্রম ছিল না। হাঁফ ছেড়ে বেঁচে ছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু এ বার বর্ষার আগে থেকেই কুড়মিঠা থেকে বাসটি দুবরাজপুর পর্যন্ত তিন বার চলাচল করলেও দিনে এক বারের বেশি লোকপুরে যাতায়াত করছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খয়রাশোলের লোকপুর, কড়িধ্যা, বারাবন, ডেমুরটিটা, ডেমুড়িয়া বা দুবরাজপুরের কাপাসতোড়, আগয়া, বালিজুড়ি মঙ্গলপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বাসটিকে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী চালানোর আবেদন করছিলেন জেলা পরিবহণ আধিকারিকের কাছে। মিলিত ওই আবেদনে সই ছিল দুবরাজপুর ও খয়রাশেলের দুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরও।

কিন্তু আবেদন দেওয়ার কিছুদিনের মধ্য বাসটির চলাচলই বন্ধ হয়ে যায় দুর্ঘটানার জেরে। লোকপুরের বাঁকা দে, কড়িধ্যার ভোলা বাগদি বলছেন, “দুবরাজপুর যেতে হলে এটাই সহজ রস্তা। বাস চললে দুবরাজপুর স্টেশন, বাজার ও চিকিত্‌সক দেখাতে যেতে অনেক সুবিধে হয়। খয়রাশোল হয়ে গেলে আরও ১০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়।” জেমুড়িয়ার মনতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাপাসতোড়ের জহির খান, আগয়ার সামসুদ্দিন খান কিংবা মঙ্গলপুরের শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছেন, “আমাদের সব কিছুই দুবরাজপুরকে ঘিরেই। অথচ এই রাস্তায় আর কোনও যানবাহন চলাচল করে না। ফলে যাঁদের মোটরবাইক নেই তাঁদের খবু সমস্যা। বাস চলাচাল করলে ঠিক ছিল। বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন এলাকাবাসী। গরিব খেটে খাওয়া মুনেষ বিশেষ করে মহিলারা ৬-৮ কিলোমিটার পথ হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু দুবরাজপুর লোকপুর রাস্তার ধারে গ্রামের মানুষই নন, বাসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন দুবরাজপুরের যশপুর, সালুঞ্চি, সাহাপুরের যাত্রা, গুনসীমা, রাওতাড়া সহ বিভন্নগ্রামের মানুষজনও। যাত্রাগ্রামের খিলাফত হোসেন, পছিয়াড়ার জয়ন্ত চক্রবর্তী, সালুঞ্চীর শেখ জসিমরা বলছেন, “এই বাসটি তো বন্ধই রয়েছে। সিউড়ি থেকে সাহাপুর হয়ে, ইলামবাজার এবং যাত্রা থেকে দুবরাজপুর হয়ে সিউড়ি রুটের বাসগুলিও বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার মানুষ। জেলা পরিবহণ আধিকারিক রাজীব মণ্ডল বলেন, “এমনিতে কয়েকটি রুটের বাস চলাচল বিভিন্ন কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে, নিদির্ষ্ট ভাবে কোনও রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে কেউ আমাকে অভিযোগ জানাননি। কেন অনুমোদিত রুটে এবং সময়সূচি মেনে বাস চলাচল করছে না, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suspension bus service problems dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE