Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তায় ছিনতাই চলছেই, নীরব পুলিশ

ওরা মোটরবাইকে চেপে আসছে। কোনও কিছুর বোঝার আগেই পথচলতি মানুষকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই করে চম্পট দিচ্ছে। কখনও দিনের বেলা প্রকাশ্যে, কখনও সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফেরার পথে রিকশা থামিয়ে ছিনতাই যেন নিত্য ঘটনা হয়ে গিয়েছে বোলপুর-শান্তনিকেতন-শ্রীনিকেতনের পথে। এমনকী, একটি ঘটনায় তো ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গিয়ে এক মহিলাকে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিও খেতে হয়েছে।

মহেন্দ্র জেনা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

ওরা মোটরবাইকে চেপে আসছে। কোনও কিছুর বোঝার আগেই পথচলতি মানুষকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই করে চম্পট দিচ্ছে।

কখনও দিনের বেলা প্রকাশ্যে, কখনও সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফেরার পথে রিকশা থামিয়ে ছিনতাই যেন নিত্য ঘটনা হয়ে গিয়েছে বোলপুর-শান্তনিকেতন-শ্রীনিকেতনের পথে। এমনকী, একটি ঘটনায় তো ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গিয়ে এক মহিলাকে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিও খেতে হয়েছে। বস্তুত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই দুষ্কৃতীদের নিশানা হচ্ছেন পথচলতি মেয়েরাই। অথচ এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র ঘটনাতেই পুলিশ দুষ্কৃতীদের পরে ধরতে পেরেছে। কিন্তু শহরের রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষকে এমন আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পুলিশ অনেকটাই ব্যর্থ বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। একটি ঘটনার কিনারা করতেই কেটে যাচ্ছে কয়েক মাস।

স্বভাবতই পরপর কয়েকটি ঘটনার জেরে রাস্তায় একা বের হতেই অনেকে সাহস পাচ্ছেন না। এ ভাবে শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যে অপরাধের ঘটনা বেড়ে চলায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পুলিশ কর্তাদেরও। তাঁদের দাবি, ধৃতদের কয়েক জনকে জেরা করে ছিনতাইয়ের পিছনে অবৈধ নেশার কারবারের বিষয়টিই উঠে এসেছে। ওই নেশার দ্রব্য কিনতে টাকা জোগাড়ের জন্য শহরের যুব প্রজন্মের একাংশ উঠেপড়ে লেগেছেন। তারাই পথচলতি ছাত্রী বা মহিলাদের টার্গেট করছে। ব্যাগ ছিনতাই করে চম্পট দিচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে খোদ বোলপুরের এসডিপিও অফিসের সামনে থেকে বিশ্বভারতীর এক ছাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই হয়। তার ঠিক দু’দিন পরে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনের রাস্তা দিয়ে পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালের দিকে যাওয়ার পথে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাংলাদেশি ছাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ছিনতাই হয় পূর্বপল্লি এলাকায়। এ বার দুষ্কৃতীদের শিকার হন বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপিকা। দমকল কেন্দ্রের সামনের রাস্তা দিয়ে নিজের বিভাগে রিকশায় চেপে যাওয়ার পথে মোটরবাইক আরোহী দুই দুষ্কৃতী ইতিহাস বিভাগের ওই অধ্যাপিকার ব্যাগ ছিনতাই করে পালায়। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আক্রান্ত পথচারীরা শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ জানিয়েছেন। এ ছাড়াও রতনপল্লিতে রামপুরহাটের একটি স্কুলের শিক্ষকের বাড়ির সামনে রাখা মোটরবাইক দুষ্কৃতীরা চুরি করেছে। একই ভাবে দিন চারেক আগেই রথীন্দ্রপল্লিতে নিজের বাড়ির উঠোন থেকে মোটরবাইক হারিয়েছেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক।

শুধু শান্তিনিকেতন বা শ্রীনিকেতনই নয়, একই কায়দায় ছিনতাই হচ্ছে বোলপুরেও। গত সপ্তাহেই প্রভাত সরণিতে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে ছিনতাইবাজ বাইক বাহিনীর কবলে পড়েছিলেন এক মহিলা। দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র বের করতেই পেশায় বিএসএনএল-এর ওই মহিলা কর্মী প্রাণের ভয়ে গায়ের গয়না নিজেই খুলে দিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। দুষ্কৃতীরা ওই মহিলার পায়ে গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়। একসময়ে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় ফাঁকাবাড়িতে দেদার চুরির ঘটনা ঘটত। পাড়াপ্রতিবেশী কিছু বুঝতে পারার আগেই দুষ্কৃতীরা সব মালপত্র নিয়ে গা ঢাকা দিত। পরবর্তী সময়ে বাসিন্দারা নিজেরাই পাড়ায় নজরদারি এবং বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করে। তাতে আগের তুলনায় ওই ধরনের চুরি কমেছে। কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাস্তাঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

কী বলছেন বাসিন্দারা?

এ ব্যাপারে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকেই দুষছেন শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা। বিশ্বভারতীর ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রত্না রায়, বোলপুর কলেজের ছাত্রী পায়েল দাসদের ক্ষোভ, “প্রকাশ্যে দিনের পর দিন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশকে অপরাধ আটকাতে দেখতে পাচ্ছি না। এ রকম চলতে থাকলে বিশেষ করে মেয়েদের পথঘাটে চলাই মুশকিল হয়ে পড়বে!” তাঁদের আবেদন, এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসন, উভয়কেই আরও সক্রিয় হতে হবে। রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা আর টহলদারি, দু’টিই বাড়াতে হবে। শহরে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি বাসিন্দাদের পর্যবেক্ষণেও উঠে আসছে এলাকায় অবৈধ নেশার কারবারের দিকটিও। ওই বাসিন্দারা নেশার ঠেকগুলিকেই শহরে অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম উৎস বলে দাবি করছেন। একাধিক বার বাসিন্দারাই অভিযান চালিয়ে ওই সব ঠেক ভেঙে দেওয়ার পরেও ফের তা গজিয়ে উঠেছে। স্থানীয় অরবিন্দ সঙ্ঘের সম্পাদক বাদল সাহা, অগ্রগামী সংঙ্ঘের সম্পাদক চন্দন মণ্ডলেরা বলছেন, “পুলিশ যদি ঠিক কাজ করে, তাহলে আমাদের কিছু করতে হয় না। ভেঙে দেওয়ার পরেও ঠেকগুলো ফের গজায় না।” তাঁদের দাবি, ওই সব ঠেকে নেশা করেই দুষ্কৃতীরা অপরাধ ঘটাচ্ছে। তাঁরা বলেন, “ঠেকগুলো চিরদিনের মতো ভেঙে ফেললেই দুষ্কৃতীদের কোমর ভেঙে যাবে।”

পুলিশ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। গত জুলাইয়ের একটি ঘটনায় পুলিশ সোমবারই দুই ছাত্র ও এক মোবাইল বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে। ছিনতাই যাওয়া জিনিসের মধ্যে কেবলমাত্র মোবাইলটিই উদ্ধার করা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বোলপুর থানা ও শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে তিনটি মোবাইল এবং ছ’টি মোটরবাইক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে গত কয়েক মাসে ছিনতাই যাওয়া জিনিসগুলি ক’টি, তা অবশ্য এখনও শনাক্ত হয়নি। এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “দফায় দফায় অভিযান চলছে। এমনকী, বিশেষ অভিযানও আমরা চালাই। ছিনতাইয়ে যুক্তদের কয়েক জন ধরা পড়েছে। কিছু জিনিস উদ্ধারও হয়েছে। যে সব জায়গায় নেশার ঠেক গড়ে ওঠে, সেখানে নিয়মিত নজরদারি চলছে। ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mahendra jena shantiniketan snatching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE