Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর পড়ার ভার নিল চাইল্ড ওয়েলফেয়ার

তাকে ও তার মাকে ডাইনি বলে অপবাদ দিয়েছিল অন্ধ কুসংস্কারে বিশ্বাসী গ্রামের কিছু লোক। তাদের চাপে মা-মেয়েকে গ্রাম ছাড়তে হয়। গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট্ট মেয়েটির লেখাপড়া মাঝপথেই থমকে যায়। সেই মেয়েটির থাকা ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিল পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

তাকে ও তার মাকে ডাইনি বলে অপবাদ দিয়েছিল অন্ধ কুসংস্কারে বিশ্বাসী গ্রামের কিছু লোক। তাদের চাপে মা-মেয়েকে গ্রাম ছাড়তে হয়। গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট্ট মেয়েটির লেখাপড়া মাঝপথেই থমকে যায়। সেই মেয়েটির থাকা ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিল পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)।

বুধবার বান্দোয়ানের উদলবনি গ্রামে, মামাবাড়ি থেকে থেকে মেয়েটিকে পুরুলিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। বছর সাতেকের ওই মেয়েটির বাড়ি অবশ্য মানবাজার ২ ব্লকের বড়গড়া গ্রামে। সিডব্লিউসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে বড়গড়া গ্রামে বন্ধুদের সাথে খেলছিল মেয়েটি। এই সময় তারই সমবয়সী একটি ছেলে পড়ে গিয়ে চোট পায়। ওই ঘটনার জেরে গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ বাচ্চা মেয়েটি ও তার মাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামে অপপ্রচার শুরু করে। এই নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ শুরু হয়। মেয়েটির মা বোরো থানায় কয়েক জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগও জানান। যুক্তিবাদী সমিতি এবং চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা পুলিশের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করেন। কুসংস্কারকে প্রশ্রয় না দেওয়ার কথাও গ্রামবাসীর একাংশকে বোঝানো হয়। মেয়েটির সেই সময় বাবা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, একাংশের হুমকির জেরে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। শেষে গ্রাম থেকে ওই পরিবারটি সরে গিয়ে মেয়েটির মামাবাড়ি উদলবনিতে আশ্রয় নেয়। গ্রামের স্কুলের পড়া থমকে যায় মেয়েটির। পরে পুলিশ উদলবনি গ্রামে গিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে পরিবারটি গ্রামে ফিরে আসে। তখনকার মতো বিরোধ মিটে যায়।

সম্প্রতি পুলিশের কাছে খবর আসে, পুরনো সেই বিরোধের জের টেনে গ্রামে ফের দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি বাধায় মেয়েটির পরিবার আবারও ঘর ছাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, “আমরা এক সপ্তাহ আগে বড়গড়া গ্রামে গিয়েছিলাম। দু’পক্ষকে বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর উদ্দেশ্যে আমরা সেখানে গেলেও ওই পরিবারের দেখা পাইনি। এমনকী তারা কোথায় আছে, গ্রামের কেউ জানাতে পারেনি। তবে, মেয়েটির মায়ের সম্পর্কিত মামা তথা বিশিষ্ট সাঁওতালি লেখক গোমস্তা প্রসাদ সরেন আমাদের জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের একাংশ ফের তাঁদের উত্ত্যক্ত করায় তাঁরা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।” গ্রামের লোকের পাল্টা যুক্তি, কেউ স্বেচ্ছায় গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বাস করলে তাঁদের কিছু করার নেই। গ্রামবাসী ঠাকুরদাস হেমব্রম, অজিত হেমব্রমদের দাবি, “ওই পরিবার গ্রামের বদনাম করছে। কেউ ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। ওদের উত্ত্যক্তও করে না। বরং ওরাই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের নামে মিথ্যে অভিযোগ জানিয়ে গ্রামের সুস্থতা নষ্ট করছে।”

অর্থাত্‌, গ্রামে বিরোধ যে মেটেনি, তা স্পষ্ট। এই অবস্থায় মেয়েটির ভার নিয়েছে সিডব্লিউসি। পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, “বুধবার আমরা বড়গড়া গ্রামে গিয়ে ওই পরিবারকে না পেয়ে উদলবনি যাই। গ্রামের বিরোধের জেরে ছোট্ট মেয়েটির লেখাপড়া যাতে ব্যাহত না হয়, সেই লক্ষ্যেই ওকে আমরা পুরুলিয়ায় নিয়ে এসেছি।”

জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অনিতা মিশ্রের কথায়, “ওই গ্রামে থেকে মেয়েটির পড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ওর বাবা-মাকে আমরা বুঝিয়েছি। আপাতত মেয়েটি পুরুলিয়ার হোমে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। বাবা-মাকে বলা হয়েছে, তারা যে কোনও দিন মেয়েকে দেখে যেতে পারবেন। গ্রামের সমস্যা মিটলে মেয়েকে আবার গ্রামেও নিয়ে যেতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE