খানাখন্দে ভর্তি সাঁইথিয়া সেতু লাগোয়া দু’টি রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।
ময়ূরাক্ষী নদীর নতুন সেতুর ডান দিকে বহরমপুর ও বাঁ দিকে মহম্মদবাজার যাওয়ার রাস্তা। কিন্তু সেতু-সহ দু’টি রাস্তার একাংশের অবস্থা এক কথায় ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হবে। ওই রাস্তা দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বাস-সহ শয়ে শয়ে গাড়ি যাতায়াত করত। এখন মহম্মদবাজারে মোরগ্রাম-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতিয় সড়কের একটি সেতু বসে গিয়েছে। ফলে ওই রাস্তারও অধিকাংশ গাড়ি এখন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করছে। স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দিনরাত যানজট লেগেই আছে। সেই সঙ্গে গাড়ি আটকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। পুলিশ অবশ্য টাকা তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সাঁইথিয়া-বহরমপুর ও সাঁইথিয়া-মহম্মদবাজার দু’টি রাস্তার সংযোগ স্থলের বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে খানাখন্দ আর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। নতুন সেতুর যত্রতত্র পিচ ও ঢালাই উঠে গিয়েছে। গাড়ি নিয়ে সেতুতে ওঠা এবং নামা দু’টিই যেমন বিপজ্জনক তেমনি খারাপ অবস্থা বহরমপুর ও মহম্মদবাজার যাওয়ার রাস্তার দু’দিকের বেশ কিছুটা অংশ। রাস্তার গর্তে ট্রাক-বাসের বড় বড় চাকার বেশি অংশ ডুবে যায়। গাড়িগুলি মাঝে মধ্যে এমন ভাবে কাত হয়ে যাচ্ছে, যে কোনও সময় উল্টে যেতে পারে। শুধু যানবাহন নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কচিকাঁচা স্কুলপড়ুয়া থেকে হাজার হাজার লোকজনকে হেঁটে, সাইকেলে, মোটরবাইকে করে যাতায়াত করতে হয়। সাঁইথিয়ার বাসিন্দা বাপন ধর, দেড়িয়াপুরের গৌতম পাল, স্কুলের গাড়ি চালক অনিল সাও, ইসমাইল শেখরা বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাই দায়। কী কষ্টে যে সাইকেল, মোটরবাইক বা গাড়ি চালাই তা বলে বোঝানো যাবে না। যাঁরা চালান তাঁরাই জানেন।” বাসচালক সোনা মণ্ডল বলেন, “বাগডাঙা মোড়ের কিছুটা আগে থেকেই ঈশ্বরকে ডাকা শুরু করি। যা রাস্তার অবস্থা।” একটু থেমে বলেন, “যাত্রী বোঝাই বাস। ভাল রাস্তায় না ওঠা পর্যন্ত চিন্তা দূর হয় না। কিন্তু আমাদের মূল্য কেউ দেয় না। কিছু হলেই দোষ-ত্রুটি বিচার না করেই অধিকাংশ লোকজন তেড়ে মারতে আসেন।”
এ দিকে, মহম্মদবাজারে কুলে নদীর সেতুর একটা অংশ বসে যাওয়ায় গত ৭-৮ দিন ধরে এই দুই রাস্তার উপরে গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে রাস্তার অবস্থা দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি, মাল বোঝাই বড় বড় ট্রলার পর্যন্ত এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। ট্রাক চালক অসমের বংশীধর রায়, শিলিগুড়ির রাজু দাস, উত্তরপ্রদেশের রতন শমা, মালদার মুক্তার আলি, অন্ধ্রপ্রদেশের জি রামাইয়ারা বলেন, “একে তো রাস্তার জন্য হয়রানির শেষ নাই। তার উপর চাঁদার উপদ্রব। মহম্মদবাজার থেকে মল্লারপুর পযন্ত যে কত জায়গায় টাকা দিতে হচ্ছে তার ঠিক নেই। এ বলে এই পার্টি তো ও বলে ওই পার্টির। কেউ কেউ আবার বলে আমরা পুলিশের লোক। এই টাকায় আমাদের হবে না। সব থেকে বেশি উত্পাত সাঁইথিয়া এলাকায়।” একই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদেরও। তাঁদের ক্ষোভ, “রাস্তার হাল তো এমন। তার উপর রাস্তা আটকে যেখানে সেখানে চাঁদা তোলা। এ ভাবে চাঁদা তোলার কারণেই যানজট আরও বাড়ে।” তোলাবাজির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, “দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিকে, পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র দেবাশিস সরকার বলেন, “দু’টি রাস্তা অস্থায়ী ভাবে মেরামত করার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। বর্ষার পরে স্থায়ী কাজ হবে। সেতুটার কী হাল তা দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy