Advertisement
E-Paper

সভায় গরহাজির সদস্য, আড়রায় খারিজ অনাস্থা

গোলমালের আশঙ্কায় পঞ্চায়েত অফিসের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। নিরাপত্তার কারণে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর পুলিশও। কিন্তু অনাস্থা ডেকেও শেষ পর্যন্ত অনাস্থা সংক্রান্ত সভায় গরহাজির থাকলেন দুই পঞ্চায়েত সদস্য। যার জেরে কোরাম না হওয়ায় ভেস্তে গেল ওই সভা। প্রশাসনও খারিজ করে দিল অনাস্থা প্রস্তাব। এ দিনই বান্দোয়ানের সুপুডি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা ভোটে কংগ্রেসের প্রধানকে হারিয়ে পঞ্চায়েতর ক্ষমতা লাভ করে তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
কড়া নজর। —নিজস্ব চিত্র

কড়া নজর। —নিজস্ব চিত্র

গোলমালের আশঙ্কায় পঞ্চায়েত অফিসের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। নিরাপত্তার কারণে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর পুলিশও। কিন্তু অনাস্থা ডেকেও শেষ পর্যন্ত অনাস্থা সংক্রান্ত সভায় গরহাজির থাকলেন দুই পঞ্চায়েত সদস্য। যার জেরে কোরাম না হওয়ায় ভেস্তে গেল ওই সভা। প্রশাসনও খারিজ করে দিল অনাস্থা প্রস্তাব। এ দিনই বান্দোয়ানের সুপুডি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা ভোটে কংগ্রেসের প্রধানকে হারিয়ে পঞ্চায়েতর ক্ষমতা লাভ করে তৃণমূল।

শুক্রবার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা সংক্রান্ত সভা ছিল। বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলেরই কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য। কিন্তু সভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পঞ্চায়েত সদস্যেরা উপস্থিত না হওয়ায় কোরাম হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই ধরনের সভায় পঞ্চায়েতের মোট সদস্যের অর্ধেকের বেশি সদস্য সভায় উপস্থিত হলেই কোরাম গঠন করা হয়। রঘুনাথপুর ১ বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন “এ দিনের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা সভায় আড়রা পঞ্চায়েতে ২০ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ফলে কোরাম গঠন করা সম্ভব হয়নি। তাই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী ওই পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেল।”

রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে পরপর অনাস্থা আসছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে। বৃহস্পতিবার দলের সদস্যদের একাংশের আনা অনাস্থায় অপসারিত হয়েছেন বেড়ো পঞ্চায়েতের প্রধান। আড়রা পঞ্চায়েতের প্রধান মধুসূদন দাসের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চিঠি দিয়েছিলেন তৃণমূলেরই সাত জন পঞ্চায়েত সদস্য। ওই পঞ্চায়েতে মোট ২০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ১৬ জন, সিপিএমের ৩ জন এবং বিজেপি-র ১ জন সদস্য রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বেড়ো পঞ্চায়েতে অনাস্থার সভায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে ঘেরাও হয়েছিলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। সেই কথা মাথায় রেখেই এ দিন আড়রায় আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। পঞ্চায়েতে সভা শুরুর আগে থেকেই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত, আদ্রা ও রঘুনাথপুর থানার পুলিশ কর্মীরা। আড়রায় গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চায়েত ভবনের সামনে বসে রয়েছেন পুলিশ-কর্মীরা। দূরে বিভিন্ন মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। এক সঙ্গে তিন-চারজন জড়ো হলেই তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলেন পুলিশ কর্মীরা।

পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সভার সময় নির্ধারিত ছিল এক ঘণ্টা। ব্লকের মিনিমাম ওয়েজেস ইন্সপেক্টর প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পঞ্চায়েতে উপস্থিত হন অনাস্থা প্রস্তাব আনা তৃণমূলের সাত সদস্যের মধ্যে ছ’জন। আসেন সিপিএমের ২ এবং বিজেপি-র এক সদস্য। সভায় গরহাজির থাকেন তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধান-সহ বাকি ১০ ও সিপিএমের এক সদস্য। ফলে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও সভায় কোরাম গঠন করা সম্ভব হয়নি। সে কথা লিখিত ভাবে উপস্থিত সদস্যদের জানিয়ে দেন প্রিসাইডিং অফিসার।

অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি স্বাক্ষর করেও কেন এক তৃণমূল সদস্য অনুপস্থিত থাকলেন তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে এলাকায়। সিপিএমের এক সদস্যও কেন অনাস্থা আলোচনায় গরহাজির থাকলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অনাস্থা আনার ব্যাপারে অন্যতম উদ্যোগী তৃণমূল সদস্য সঞ্জীব দত্ত বলেন, “আমরা প্রধান ও উপপ্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অনাস্থা এনেছিলাম। প্রয়োজনীয় সদস্য সভায় অনুপস্থিত থাকায় অনাস্থা বাতিল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দলের অন্দরে ও পঞ্চায়েতে আমরা ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে যাব।” অনাস্থার পক্ষের কয়েকজন সদস্য জানান, তাঁরা আশা করেছিলেন তৃণমূলের সাত জনের সঙ্গে বিরোধীদের চারজনের সমর্থন পাবেন। তা হলে প্রধানের গোষ্ঠী সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। কিন্তু দিনের শেষে তা আর হল না।

তাঁদের অভিযোগ, কোরাম যাতে গঠন করা না যায়, সে জন্য আগে থেকেই সদস্যদের প্রভাবিত করতে প্রলোভন দেখাতে শুরু করেছিলেন পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা। তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রধান মধুসূদন দাস দাবি করেন, “আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গেই পঞ্চায়েত পরিচালনা করছি। পঞ্চায়েত থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে কিছু সদস্য অনাস্থা এনে পঞ্চায়েতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এ দিনের সভাতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তাই তাঁরা সভায় উপস্থিত হননি।”

তবে বারবার দলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দলেরই একাংশের অনাস্থা আনার ঘটনায় জেলা নেতৃত্ব যে অস্বস্তিতে পড়েছেন, তা দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর কথাতেই স্পষ্ট। সম্প্রতি তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দলের প্রধানের বিরুদ্ধে যাঁরা অনাস্থা আনছেন, তারা ভাল করছেন না। বিষয়টি দল বিরোধী কাজ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দলীয় ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিকে, অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন বান্দোয়ানের সুপুডি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বিভূতি মুদি। এই পঞ্চায়েতে ১১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৫টি আসন। সিপিএম ৩টি, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস ও নির্দল ১টি করে আসন পেয়েছিল। কংগ্রেসের বিভূতি মুদিকে প্রধান নির্বাচিত করে তৃণমূল বাদে বাকিরা সবাই জোটে ছিলেন। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যে জোটে ফাটল ধরে। ফরওয়ার্ড ব্লকের লীলাবতী মণ্ডল দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার মাস ছয়েক পরে তৃণমূল অনাস্থা এনেছিল। এ দিন ধ্বনিভোটে অনাস্থার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠরা মত দেন। বান্দোয়ানের বিডিও মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “শীঘ্রই নতুন প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

police raghunathpur bandiyam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy