Advertisement
০৭ মে ২০২৪
পাত্রসায়র কলেজ

৭০ মনোনয়নপত্র তুলে উদ্বেগ টিএমসিপিতেই

কলেজের ছাত্র সংসদের আসন ১২টি। মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে ৭০টি। এক ঝলকে মনে হয়, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বুঝি মনোনয়ন তুলেছে। কিন্তু তা নয়, পাত্রসায়র কলেজে টিএমসিপিই একক ভাবে ৭০টি মনোনয়ন পত্র তুলেছে। এখানে বিরোধীরা নয়, লড়াইটা টিএমসিপির নিজেদের মধ্যেই। আর দুই ছাত্র নেতার কলেজের ক্ষমতা নিজেদের তাঁবে রাখার এই লড়াই ঘিরেই ফের অশান্তির আশঙ্কায় ভুগছে পাত্রসায়র। আর এতেই বিব্রত টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৪
Share: Save:

কলেজের ছাত্র সংসদের আসন ১২টি। মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে ৭০টি। এক ঝলকে মনে হয়, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বুঝি মনোনয়ন তুলেছে। কিন্তু তা নয়, পাত্রসায়র কলেজে টিএমসিপিই একক ভাবে ৭০টি মনোনয়ন পত্র তুলেছে। এখানে বিরোধীরা নয়, লড়াইটা টিএমসিপির নিজেদের মধ্যেই। আর দুই ছাত্র নেতার কলেজের ক্ষমতা নিজেদের তাঁবে রাখার এই লড়াই ঘিরেই ফের অশান্তির আশঙ্কায় ভুগছে পাত্রসায়র। আর এতেই বিব্রত টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্ব।

জেলায় ২১টি কলেজ। তার মধ্যে বাঁকুড়া সারদামণি মহিলা কলেজ ও ছাতনার চণ্ডীদাস কলেজে নির্বাচন হচ্ছে না। বাঁকুড়া খ্রিশ্চান কলেজে ২১ জানুয়ারি নির্বাচন। বাকি ১৮টি কলেজের মধ্যে শুধু রাইপুর ব্লক মেমোরিয়াল কলেজে মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছে এসএফআই। ওন্দা কলেজে ৩টি তুললেও শনিবার এসএফআই জমা করতে পারেনি। রাইপুরেও শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিশ্চিত নয়। ফলে জেলার অধিকাংশ কলেজেই কার্যত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিএমসিপি জিতে গিয়েছে বলা যায়। এই পরিস্থিতিতে টিএমসিপির মাথাব্যাথ্যা পাত্রসায়রে নেতাদের দ্বন্দ্ব।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বারবার শিরোনামে আসা পাত্রসায়রে সম্প্রতি টিএমসিপির নেতৃত্বেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে কলেজের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলাম ও ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের অনুগামীদের মধ্যে মারধর থেকে বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ ওঠে। তার জেরে এলাকার দোকান-বাজার পর্যন্ত বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ছাত্র নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে গোলমালের সেই সূত্রপাত।

জেলার অন্যত্র এ বার এবিভিপি এবং এসএফআইকে ঠেকানোর জন্য টিএমসিপি-র সঙ্গে যুব এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তৃণমূলকে নামাতে হয়েছে। ফলও হয়েছে। অধিকাংশ কলেজেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা দখল করতে চলেছে। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহার না হলে পাত্রসায়রে নির্বাচন অনিবার্য। আর সে ক্ষেত্রে ভোটের লড়াই হবে টিএমসিপি-র নিজেদের মধ্যেই। আর কলেজের সেই ভোটের লড়াইয়ের জেরে বাইরেও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।

শনিবার বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমার কলেজেগুলিতে মনোনয়ন তোলার দিন ছিল। গোলমালের আশঙ্কায় কলেজচত্বর ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রথম দিকে কলেজের মধ্যে কিছু বহিরাগত ঢুকে পড়েছিল। খবর পাওয়া মাত্র পাত্রসায়র থানার ওসি বাহিনী নিয়ে গিয়ে বহিরাগতদের বের করে দেন। এর মধ্যেই কলেজ থেকে কিছু দূরে জঙ্গলের মধ্যে প্রায় দু’বস্তা ভর্তি ৩০টি বোমা পাওয়া যায়। পুলিশ গিয়ে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করে।

কলেজ ভোটকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে বিরোধের কথা কার্যত মেনেও নিয়েছেন গোপে এবং জিয়ারুল। গোপের দাবি, “গত ২৯ ডিসেম্বর বাঁকুড়ায় বৈঠকে আমাদের ডাকা হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ৩১ ডিসেম্বর দু’পক্ষকে নিয়ে ফের বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু সেই বৈঠক আর হয়নি। জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই আমরা মনোনয়নপত্র তুলেছি। ওরাও তুলেছে বলে জানি।” গোপে বলেন, “জেলা নেতৃত্ব যে নির্দেশ দেবেন তাই মেনে নেব।”

কলেজ ভোটকে ঘিরে এই আকচা আকচির জন্য জেলা নেতৃত্বকেই দুষছেন ব্লক তৃণমূলের একটা বড় অংশ। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূলের এক নেতার ক্ষোভ, “জেলা নেতৃত্ব হাত গুটিয়ে বসে না থেকে আগে কড়া ব্যবস্থা নিলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এতে দলেরই মুখ পুড়ছে।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। চুমকি দাবি করেন, “পাত্রসায়র কলেজে জিয়ারুলের সঙ্গে গোপের যদি বিরোধ থাকে তা আমরা আলোচনার মাধ্যমে বসে মিটিয়ে নেব। আমাদের ছেলেরাই বেশি করে মনোনয়ন তুলেছে। ওখানে ছাত্র সংসদের ভোট হবে না। বোর্ড আমাদেরই হবে।”

এ দিকে, নির্বাচনের নামে কলেজ ভোটকে শাসকদল পুরোপুরি প্রহসনে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে এবিভিপি এবং এসএফআই। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অনুপ সাহার অভিযোগ, “শনিবার শালডিহা ও রাইপুর বীরসা মুন্ডা কলেজে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পরিকল্পনা করেই আমাদের সমর্থক ছাত্রদের উপর পাথর-বৃষ্টি করে। আমাদের আটজন আহত হন।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ধর্মেন্দ্র চক্রবর্তীর অভিযোগ, “তৃণমূলের গুন্ডারা গত দু’দিন ধরে কলেজগুলিতে মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দিয়েছে। রাইপুর বীরসা মুন্ডা কলেজে আমাদের চার সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে ওরা।” টিএমসিপির জেলা সভাপতি বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, “জেলার কোনও কলেজেই বিরোধীদের অস্তিত্ব নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ওরা প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”

জেলায় কলেজ ভোটে একাধিপত্য বজায় থাকলেও তৃণমূল নেতাদের কাছে এখন গলার কাঁটা পাত্রসায়র কলেজ। এখানে নিজেদের মধ্যে লড়াই থামাতে জেলা নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেই দিকেই তাকিয়ে নিচুতলার কর্মীরা। আর পাত্রসায়রের বাসিন্দাদের স্মৃতিতে ভাসছে, ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর, যে দিন কলেজ ভোটকে কেন্দ্র করে সিপিএম-তৃণমূলের লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা। কী হবে এ বার? এই প্রশ্ন নিয়ে সবাই তাকিয়ে বৃহস্পতিবারের দিকে। বাড়তি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার না হলে সে দিনেই যে পাত্রসায়রে কলেজ নির্বাচন হতে যাচ্ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patrasayar college tmcp college election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE