Advertisement
১০ মে ২০২৪

সপ্তাহভর বৃষ্টি নেই, আশঙ্কায় ধানচাষিরা

ক’দিন আগেও ছবিটা ছিল একদম আলাদা। দিনভর কালো আকাশ। সঙ্গে নাদাড়ে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ঝড়। হাসি ফুটেছিল বৃষ্টি-নির্ভর চাষের জেলা পুরুলিয়ার কৃষিজীবীদের মুখে।

শুকিয়েছে ধানের জমি। হুড়া ব্লকের ভাগাবাঁধে ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

শুকিয়েছে ধানের জমি। হুড়া ব্লকের ভাগাবাঁধে ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৪
Share: Save:

ক’দিন আগেও ছবিটা ছিল একদম আলাদা। দিনভর কালো আকাশ। সঙ্গে নাগাড়ে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ঝড়। হাসি ফুটেছিল বৃষ্টি-নির্ভর চাষের জেলা পুরুলিয়ার কৃষিজীবীদের মুখে। টানা বৃষ্টিতে কিছু জমির সব্জি নষ্ট হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু জেলার বেশির ভাগ অংশেই এই বৃষ্টি এসেছিল চাষিদের আশীর্বাদ হয়ে।

ছবিটা হঠাৎই বদলে গিয়েছে। এখন মাঝ শ্রাবণের চড়া রোদে শুকোচ্ছে ধানের জমি। জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকেই এই মর্মে খবরও আসতে শুরু করেছে কৃষি দফতরের কাছে। দফতর সূত্রের খবর, গত ২ অগস্ট শেষ বৃষ্টি পেয়েছিল পুরুলিয়া। সেই নিম্নচাপে অগস্ট মাসের প্রথম দু’দিনে গড়ে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি পেয়েছিল জেলা। তার পর থেকে আর মেঘের দেখা নেই। টানা ন’দিনের চড়া রোদে ইতিমধ্যেই শুকোতে শুরু করেছে বাইদ জমি। জেলার চাষিদের আশঙ্কা, আর দিন দুয়েকের মধ্যে বৃষ্টি না নামলে জমি পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে। মার খাবে ধান চাষ।

পুরুলিয়া কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৭২ হাজার হেক্টর। দফতরের হিসেব অনুযায়ী ১৫ অগস্টের মধ্যে জেলায় ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়ে যায়। চলতি বছর জেলায় জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৬৪ মিলিমিটার, আর জুলাইয়ে বৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ, ৫২৮ মিলিমিটার। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা দিব্যেন্দু দাস জানিয়েছেন, জুলাইয়ে জেলার শেষ দশ বছরের গড় বৃষ্টির হিসেব ২৮৮ মিলিমিটার। সেখানে এ বার জুলাই মাসে অতিবৃষ্টি হওয়ায় ধান রোয়ার কাজে কোথাও কোনও অসুবিধেই হয়নি। জুনে যেটুকু ঘাটতি ছিল, পরের মাসে তা পূরণ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ব্লক থেকে যা খবর মিলেছে, তাতে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ অবধি জেলায় ৮৬ শতাংশ (২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৯২ হেক্টর জমিতে) রোয়ার কাজ হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু ঘটনা হল, চলতি মাসের প্রথম দু’দিনের পরে জেলায় আর বৃষ্টি হয়নি। ফলে জল প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে ধানের জমিতে। হুড়া ব্লকের লালপুরের চাষি কার্তিক মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমার বিঘা দশেক বাইদ জমির পুরোটাতেই জল প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। আর দু’তিন দিনে বৃষ্টি না নামলে বাইদ জমির ধান শুকিয়ে যাবে।’’ এই ব্লকেরই চাষি, ফুফুন্দি গ্রামের তপন মাহাতো বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের বেশি বৃষ্টি হয়নি। ধানের জমির অবস্থা খরাপের দিকে যাচ্ছে।’’ একই সুরে পুরুলিয়া ২ ব্লকের সিহলি গ্রামের বাসিন্দা অমর সরকার, গোপাল মাহাতোরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টি পেয়ে কানালি, বাইদ সব জমিতেই রোয়ার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন তাঁরা। কিন্তু গত ক’দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় জলের অভাবে বাইদ জমি শুকিয়ে গিয়েছে। জয়পুর ব্লকের রামামতি গ্রামের বাসিন্দা শঙ্করচন্দ্র গরাঁই বা আড়শার নুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর কথায়, ‘‘বৃষ্টি না নামলে বাইদ জমির ধান পুরো শুকিয়ে যাবে। প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়ব।’’ চাষিদের আশঙ্কার সঙ্গে এক মত জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ শক্তিপদ মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘টানা সাত দিনের বেশি বৃষ্টি নেই। বাইদ জমির অবস্থা খারাপ। চড়া রোদে বাইদ জমির মাটি কোথাও কোথাও ফাটতে শুরু করেছে বলে খবর পেয়েছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে জমির অবস্থা খারাপের দিকেই যাবে বলে মনে হচ্ছে।’’ এই মুহূর্তে কী অবস্থা, তা তাঁরাখোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন উপ কতৃষি অধিকর্তা দিব্যেন্দুবাবু।

অন্য দিকে, জুলাইয়ের নিম্নচাপের জেরে জেলায় মোট ৫৭৮ হেক্টর জমির সব্জি চাষ পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে জেলায় সব্জি চাষ, রাস্তাঘাট, গবাদি পশুর বা পশুখাদ্যের, কাঁচা বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিশদে সে-সব তথ্য জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘৫৭৮ হেক্টর জমিতে শুধু সব্জি চাষেই ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি টাকার। গবাদি পশু ও পশুখাদ্যের ক্ষতি হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকার। মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের ব্যাঙ্ক ঋণে ছাড়ের বিষয়টি দেখতে বলেছেন। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন যে-সব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তাঁকে আমরা জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE