Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কেমো বন্ধ, ডাক্তার নেই বন্‌ধ যেন চিকিৎসাতেও

মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন গিয়েছিল চেন্নাইয়ের আন্না সালাই এলাকার গেস্ট হাউসে। জানানো হয়েছিল, ডাক্তার-টেকনিশিয়ান অনেকেই আসতে পারেননি। তাই ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন বন্ধ থাকবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫১
Share: Save:

মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন গিয়েছিল চেন্নাইয়ের আন্না সালাই এলাকার গেস্ট হাউসে। জানানো হয়েছিল, ডাক্তার-টেকনিশিয়ান অনেকেই আসতে পারেননি। তাই ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন বন্ধ থাকবে।

শুনে মাথায় যেন বাজ পড়েছিল কলকাতার সুমিত রায় মজুমদারের। গত দেড় মাস ওই গেস্ট হাউসেরই বাসিন্দা তাঁরা। চার বছরের একমাত্র সন্তানের ব্রেন টিউমার হয়েছে। রেডিয়েশন চলছে দেড় মাস। চলতি সপ্তাহের শুক্রবার রেডিয়েশন শেষ হওয়ার কথা। রবিবার কলকাতায় ফেরার টিকিটও কাটা রয়েছে। এ ভাবে মাঝপথে চিকিৎসায় ছেদ পড়লে কী করবেন তাঁরা?

প্রশ্নটা করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের জবাব, সোমবার মধ্যরাতে জয়ললিতার প্রয়াণের পর থেকে চেন্নাইয়ের রাস্তাঘাটে প্রায় কার্ফুর চেহারা। দোকানপাট তো বটেই, পেট্রোল পাম্পও বন্ধ। বহু ডাক্তার দূর থেকে গাড়িতে আসেন। তাঁরা পৌঁছতে পারেননি। তাই চাইলেও হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধ থাকা এমন একাধিক পরিষেবার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হবে, তা জানাতে বুধবার সকালে রোগীর পরিজনদের ডেকেছেন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কলকাতার চিকিৎসায় ভরসা রাখতে না পেরে চেন্নাই ছুটেছিলেন লিভারের জটিল অসুখে আক্রান্ত সমর বসু। সোমবার দুপুরে চেন্নাই পৌঁছন তাঁরা। আর তার পরেই কার্যত অঘোষিত বন্‌ধ শুরু হয়ে যায় শহরে। এ দিন সকালে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। সেটা বাতিল হয়েছে। যে গেস্ট হাউসে উঠেছেন, সেখানে পানীয় জলের গাড়ি পর্যন্ত আসেনি। গেস্ট হাউস সংলগ্ন যে হোটেলে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন, এ দিন সকাল থেকে তারও ঝাঁপ বন্ধ। বাজারে গিয়ে দুধ আর পাউরুটি ছাড়া কিছু পাননি। আপাতত সপরিবার তা খেয়েই থাকতে হচ্ছে।

এটা খণ্ডচিত্র। চেন্নাইয়ে এসে মূলত গত ২৪ ঘণ্টায় এমনই আতান্তরে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য, এমনকী নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ থেকে আসা বহু রোগী। হাসপাতালগুলিতে অধিকাংশ অস্ত্রোপচারই আপাতত বাতিল। বাতিল কেমোথেরাপি-রেডিওথেরাপি, ডাক্তারদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট। চেন্নাই হয়ে ভেলোর যাওয়ার কথা যাঁদের, মাঝপথে আটকে গিয়েছেন তাঁরাও। নিরুপায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ভোগান্তির জন্য রোগীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।

রাস্তায় যানবাহন প্রায় নেই। তাই এ দিন চেন্নাই সেন্ট্রালে পরপর ট্রেন ঢোকার পর স্টেশনেও আটকে পড়েন বহু যাত্রী। বেলা বাড়তেই দেখা যায়, স্টেশন চত্বরে থিকথিকে ভিড়। এ রাজ্য থেকে প্রতিদিনই কয়েকশো রোগী চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে যান। এ দিন ভোরে চেন্নাই সেন্ট্রালে পৌঁছয় চেন্নাই মেল। রেল সূত্রের খবর, এ দিনও এই ট্রেনের যাত্রীদের প্রায় ২০ শতাংশই ছিলেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়। দক্ষিণ রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান, ট্রেনে আসা রোগীদের জন্য কিছু গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন পুলিশ ও রেলকর্মীরা। তাই কোনও মতে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন কেউ কেউ। করমণ্ডল এক্সপ্রেস চেন্নাইয়ে পৌঁছয় এ দিন বিকেলে। রেল সূত্রের খবর, এই ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যেও রোগী ছিলেন প্রায় ২৫ শতাংশ। কিন্তু কবে এঁদের চিকিৎসা শুরু হবে, অন্তত এ দিন তা স্পষ্ট জানানোর অবস্থায় ছিলেন না কোনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। তবে জয়ললিতার শেষকৃত্যের পরেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোথাও কোনও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার
খবর নেই। ফলে হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন গণ-পরিষেবা ক্রমশ স্বাভাবিক হবে বলেই আশা করছেন রোগীদের অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chemotherapy no doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE